‘বক্তা যে-ই হোক, মনে হচ্ছিল এ তো আমারই কথা’

সেই ১৯৬৪ সালের ব্যাচ থেকে শুরু করে সদ্য পাস করা ২০১৬—সবাই যেন ছাত্র হয়ে গিয়েছিলেন আবার
ছবি: সংগৃহীত

একটা পুনর্মিলনী আয়োজন করতে হবে!

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (এমইএএআর) গড়ে ওঠার পর এটাই ছিল প্রথম ভাবনা।

আরও পড়ুন

তারিখ ঠিক হয় ৯ ও ১০ মার্চ। তবে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল আরও আগে। ব্যস্ত জীবনের রুটিন ভেঙে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু যতই তারিখ এগিয়ে এল, মনটা অস্থির হয়ে উঠছিল খুব। তাই সব এক পাশে রেখে ৯ মার্চ যাত্রা শুরু করি। ততক্ষণে ফেসবুকের কল্যাণে জেনে গেছি, অপরূপ সাজে সাজছে রুয়েট!

সেই ১৯৬৪ সালের ব্যাচ থেকে শুরু করে সদ্য পাস করা ২০১৬—সবাই যেন ছাত্র হয়ে গিয়েছিলেন আবার। যে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের দেখলে একসময় ভয়ে পাশ কাটিয়ে যেতাম বা দূর থেকে সালাম দিতাম, তাঁরাও পরম বন্ধুর মতো কাছে টেনে নিলেন। কুশল বিনিময়ের পর মাঠে ছুটলাম। বিশাল মঞ্চের এক পাশে ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে বারবিকিউ উৎসব। যন্ত্রকৌশলের অনেক সিনিয়রের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা যুক্ত। কিন্তু হুট করে সামনাসামনি তাঁদের দেখতে পাওয়ার অনুভূতি অন্য রকম। অনেকেই আমাদের চেয়ে বয়সে ৩৫-৪০ বছরের বড়, অথচ মনে হলো তাঁদের তারুণ্যই যেন বেশি।

কর্মক্ষেত্রের সুবাদে কারও কারও সঙ্গে সম্পর্কটা একটু ‘অফিশিয়াল’। এই দিনে তাঁদেরও বুকে জড়িয়ে ধরতে দ্বিধা ছিল না কোনো। ততক্ষণে মাইকে শুরু হয়ে গিয়েছিল স্মৃতিচারণা। বক্তা যে-ই হোক, মনে হচ্ছিল এ তো আমারই কথা!

একসময় মনে হলো একটু একা হাঁটি, আমাদের পুরোনো ভবনগুলো ঘুরে ঘুরে দেখি—হলের বারান্দা, ল্যাবের করিডর, চায়ের দোকান, আড্ডার স্থান। সারা জীবনের তুলনায় খুব অল্প সময়ই হয়তো এখানে কাটিয়েছি। কিন্তু সেই সময়টাই আমাকে আজকের আমি বানিয়েছে। দেখলাম, আমার মতো অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ছুট লাগিয়েছেন তালাইমারীর বিখ্যাত বট-পরোটা খেতে। শুনলাম, যাঁরা আগে এসেছেন, তাঁদের কেউ কেউ সব বাদ দিয়ে আগে ডাইনিংয়ের খাবারের টিকিট কেটেছেন। এই খাবার খেয়েই তো একেকজন আজ বড় প্রকৌশলী হয়েছেন।

চমৎকার করে সাজানো হয়েছে ছবি তোলার বুথ। সঙ্গে ছিল একেক ব্যাচের প্ল্যাকার্ড। এই হয়তো কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ছুটছি, পরক্ষণেই হয়তো কোনো সিনিয়রকে ফোনে বলছি, ‘ভাই, আপনি ওখানেই থাকেন, আসছি।’ স্যারদের সঙ্গেও চলছিল গল্পগুজব, খোঁজখবর নেওয়া।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানের তালে নাচের অঙ্গভঙ্গি করতে গিয়ে দেখি বিভাগের সবচেয়ে রাশভারী শিক্ষক তাকিয়ে আছেন। হুট করে লজ্জা পেয়েও পরক্ষণে মনে পড়ে যায়, এই মহাযজ্ঞের প্রধান উদ্যোক্তাদের মধ্যে তো স্যার নিজেও আছেন! সব মিলিয়ে উৎসব শেষ হয়েও যেন হলো না। এখন যে যেখানেই থাকি, এই যন্ত্রকৌশল বিভাগ, এই রুয়েট, এ-ই তো আমাদের পরিচয়।

লেখক: রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র