সময় ‘বাড়াবেন’ কীভাবে

কাজের চাপে নাকাল আমরা কমবেশি সবাই–ই। এমন সব সময়ে আমরা ভাবি, দিনটা ২৪ ঘণ্টার না হয়ে ২৬ ঘণ্টার হলে কেমন হতো? আর ঠিক তখনই দেখা যায় আশপাশের কেউ ছোট্ট কিছু কাজ করে দিনটাকে সত্যি সত্যিই ‘বড়’ করে ফেলেছে। না, এ জন্য আপনাকে টাইম মেশিন ‘কিনতে’ হবে না। পদার্থবিজ্ঞানের নতুন কোনো সূত্রও জানতে হবে না। বরং আমার–আপনার জীবনের খুব সাধারণ কিছু অভ্যাস পাল্টে ফেললেই দেখবেন আপনার দিনটাও বড় হয়ে গেছে অনেকখানি।

সবার আগে আপনার জানতে হবে, আপনি কোন জায়গায় কতটুকু সময় খরচ করছেন। আজকাল সব ডিভাইসেই এটা দেখার ব্যবস্থা আছে
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

সবার আগে চাই সময়ের হিসাব

টাকাপয়সা বাড়াতে হলে যেমন আয়–ব্যয়ের হিসাবটা খুব ভালো জানা থাকতে হয়, সময়ের ব্যাপারটাও তাই। সবার আগে আপনার জানতে হবে, আপনি কোন জায়গায় কতটুকু সময় খরচ করছেন। আজকাল সব ডিভাইসেই এটা দেখার ব্যবস্থা আছে। হয়তো আপনি ভাবছেন, দিনে ৩০ মিনিটের বেশি ফেসবুক চালান না। অথচ চেক করলে দেখবেন হয়তো দিনের তিন ঘণ্টা সময় চলে যাচ্ছে ফেসবুকের পেছনেই। কাজেই, সময়ের হিসাবটা ভালো করে করুন। এরপর অপ্রয়োজনীয় ব্যয়গুলো স্রেফ কেটে ফেলে দিন। ওই বাড়তি খরচের মতোই।

সীমানা ঠিক করে দিন

ফেসবুক, ইউটিউবের মতো যে প্ল্যাটফর্মগুলোতে সময় অনেক বেশি কাটান, সেগুলোতে টাইমার ঠিক করে দিন। এতে নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে ওই অ্যাপ। চাইলেও আপনি আর সেখানে সময় নষ্ট নষ্ট করতে পারবেন না।

‘টু ডু লিস্ট’ রাখুন হাতের কাছে

একটা নৌকা ঠিকভাবে চললে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে নাকি এলোমেলো চললে? অবশ্যই গোছানোভাবে চললে। আমাদের কাজগুলোও তাই। কাল সারা দিন আমার কী কী করতে হবে, সেটা যদি আমার কাছে লেখা থাকে, তবে এতে সময় বেঁচে যাবে অনেকখানি। অন্যদিকে এলোমেলো কাজ পালহীন নৌকার মতোই—গন্তব্য খুঁজতে সময় নেয় অনেক বেশি।

জটিল কাজটা সকালেই সেরে ফেলুন

আমাদের অতিপরিচিত পদ্ধতি। দিনের সবচেয়ে কঠিন কাজটা করে ফেলতে হবে সকালেই। কারণ, প্রথমত সকালে আমাদের শক্তি থাকে বেশি, কাজেই কঠিন কাজটা যত সহজে করা যাবে, পরে তা কঠিন হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয়ত, কঠিন কাজটা না করে ফেলে রাখলে সারা দিন ওই কাজটা আপনার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে অন্য কোনো কাজ করেই আর শান্তি পাবেন না।

অর্ধেক কাজ ফেলে রাখবেন না

আমাদের সময় শুধু ফেসবুক বা ইউটিউবেই নষ্ট হয় না। বরং আমাদের বহু কাজ নষ্ট হয় কাজ করতে করতে উঠে গেলেও। অনেক সময়ই আমরা একটা কাজ শেষ না করেই উঠে যাই, ওই কাজ নিয়ে আমাদের আর বসা হয় না। এই অর্ধেক কাজগুলো শেষ করতে পারলে দেখবেন, আপনার দিন হয়ে গেছে অনেক বড়।

সবকিছু জায়গামতো গুছিয়ে রাখুন

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি, আপনি যদি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার অভ্যাস করতে পারেন, তবে আপনার দিন বড় হয়ে যাবে। গবেষণা বলে, মার্কিনরা বছরে গড়ে ২.৫ দিন ব্যয় করে অগোছালো জিনিসপত্র খোঁজার কাজে। তাই জিনিসপত্র জায়গামতো গুছিয়ে রাখার অভ্যাস করুন এখনই!

‘কম’ কাজ করুন

এই কম কাজ করা মানে অলস থাকা না, বরং এই কম কাজ করা মানে অল্প কাজ ভালোভাবে করা। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর ওপরে ফোকাস করুন। সাধারণত কম মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সেই কাজে আমাদের সময় লাগে বেশি। কিন্তু সেই কাজই বেশি মনোযোগ দিয়ে করতে পারলে কম সময়েই কাজটা করা হয়ে যায়। এভাবে কাজের মান বাড়িয়ে সময় কমিয়ে আনতে পারেন, বাড়িয়ে নিতে পারেন আপনার দিনটাও।

দিন সবারই ২৪ ঘণ্টা। তবে এই ২৪ ঘণ্টার সঠিক ব্যবহারেই অনেকে অনেক কিছু করে ফেলে। আবার অনেকে সময়ের অভাবে কেবল হায় হায় করতে থাকে। সময়ের সঠিক ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করে দিনটা আমাদের কাছে কতটুকু ‘ছোট বা বড়’ হবে। এভাবে কাজ করলে কাজের গতিও বাড়বে। আবার দিনটাও মনে হবে বড়!


তথ্যসূত্র: ফোর্বস