এসব ক্যালেন্ডারের কথা কি আপনি জানেন
তুমুল আনন্দ উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালকে বরণ করে নিল বিশ্ববাসী। এই উদ্যাপন দেখে মনে হতে পারে, বিশ্বজুড়ে বুঝি কেবল গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই জনপ্রিয়। তবে পৃথিবীজুড়ে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বাদেও প্রচলিত আছে নানান ক্যালেন্ডার। সেসব নিয়েই এই আয়োজন।
১. গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার
১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি তৎকালীন প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করে তৈরি করেন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। সৌরবছরের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সামান্য গাণিতিক ভুল প্রতি ১০০ বছরে প্রায় ১ দিন পিছিয়ে দিচ্ছিল পৃথিবীকে। তাই রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ বদলে ১৫8২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন। এ নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে সূর্যবর্ষের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর, মোট ১০ দিন হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে।
২. বঙ্গাব্দ
বাংলা ক্যালেন্ডারের সূচনা নিয়ে মতবিরোধ আছে খোদ ঐতিহাসিকদের মধ্যেই। কেউ মনে করেন, সপ্তম দশকের দিকে রাজা শশাঙ্কের হাত ধরে সূচনা হয় বাংলা সনের। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, বঙ্গাব্দের সূচনা হয় মোগল সম্রাট আকবরের হাত ধরে। মোগল আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজন হিজরি সন ব্যবহার করত। কিন্তু চান্দ্রবর্ষ ধরে হিজরি সন চলায় শস্য আহরণ থেকে খাজনা দেওয়া, সব কাজেই বেগ পোহাতে হতো কৃষকদের। তাই কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবে সৌরবর্ষের ভিত্তিতে বাংলা সনের প্রচলন করেন সম্রাট আকবর। বাংলাদেশ ও ভারতে এ ক্যালেন্ডারের প্রচলন এখনো আছে।
৩. হিজরি সন
গ্রেগরিয়ান ও বঙ্গাব্দ সৌরবর্ষের ওপর ভিত্তি করে হলেও হিজরি সন তৈরি করা হয়েছে চান্দ্রবর্ষের ওপর। যেহেতু সব ইসলামিক অনুষ্ঠান চাঁদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হয়, তাই চান্দ্রবর্ষ ধরে তৈরি করা হয়েছে ইসলামিক ক্যালেন্ডার। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে পবিত্র মক্কা থেকে মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামদের হিজরতের বছর থেকেই হিজরি সনের সূচনা। খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.) তাঁর শাসনামলে হিজরি ক্যালেন্ডার তৈরির উদ্যোগ নেন। ১৬ হিজরি সনে প্রথম হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রচলন হয়। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে এখনো এই ক্যালেন্ডারের প্রচলন আছে।
৪. বুদ্ধাব্দ
বৌদ্ধধর্মমতে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৩ বছর সালের বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে কুশীনগরে গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেন। সেদিন থেকে ১ বুদ্ধাব্দের সূচনা হয় বৌদ্ধ ক্যালেন্ডারের। প্রতিবছর বুদ্ধপূর্ণিমা থেকে নতুন বুদ্ধাব্দের সূচনা হয়।
৫. ব্রিটিশ ক্যালেন্ডার
ব্রিটিশ ক্যালেন্ডারের সূচনা হয় যখন ব্রিটিশ সিংহাসনে নতুন কারও আবির্ভাব ঘটে। তাঁর সিংহাসনে আরোহণের সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সময়কেই ধরা হয় ব্রিটিশ ক্যালেন্ডারের বর্তমান সময়। বর্তমানে ব্রিটিশ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষ চলছে ১, তৃতীয় চার্লস। এই ক্যালেন্ডারের অবশ্য ব্যবহারিক উপযোগিতা নেই, রোজকার কাজে ব্যবহার করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।
৬. চায়নিজ ক্যালেন্ডার
চায়নিজ ক্যালেন্ডার চীনের ঐতিহ্যবাহী লুনিসোলার ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার গণনায় শুধু সূর্যের সঙ্গে চাঁদের অবস্থানও নির্ণয় করা হয়। এই ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছিল চন্দ্র-সূর্যের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে। যে কারণে চায়নিজ ক্যালেন্ডারের দিন গণনা শুরু হয় মধ্যরাত থেকে এবং পরের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত। বছর শুরু হয় বসন্তকালের নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে।
৭. বাইজেন্টাইন ক্যালেন্ডার
ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের ব্যবহৃত একটি সৌরভিত্তিক ক্যালেন্ডার হলো বাইজেন্টাইন ক্যালেন্ডার। কনস্টান্টিনোপল সৃষ্টির সময় কিংবা মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময়কাল থেকে এই ক্যালেন্ডারের সূচনা ধরা হয়ে থাকে। ৯৮৮ থেকে ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাইজেন্টাইন ও রুশ সাম্রাজ্যে এই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হতো। বাইজেন্টাইন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নতুন বছরের সূচনা সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ।
৮. হলোসিন ক্যালেন্ডার
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে ১০ হাজার বছর যোগ করে তৈরি করা হয়েছে হলোসিন ক্যালেন্ডার। ধরা হয়ে থাকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০ হাজার বছর আগে মানুষ নিজেদের শিকারি মনোভাব থেকে বের হয়ে কৃষিভিত্তিক যুগে প্রবেশ করে। মানবসভ্যতার অন্যতম বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে এই ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু।
৯. ইউনিকস টাইম
ইউনিকস টাইম হলো কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহৃত একটি সময় পরিমাপক ব্যবস্থা, যা ১৯৭০ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। তখন থেকে অতিবাহিত প্রতিটি সেকেন্ড এই ক্যালেন্ডারের অংশ। যে কারণে যেকোনো কম্পিউটিং সিস্টেমে ১৯৭০ সালের আগে ডেট সিলেক্ট করা সম্ভব হয় না। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০২৩ সালের পয়লা জানুয়ারিকে ধরা হবে ১৬৭,২৫,৩১,১৯৯ সেকেন্ড।