ফ্রিজে যেভাবে খাবার ভালো রাখবেন
গরমে বাড়ির ফ্রিজের কাজ বেড়ে যায় বহুগুণ। সামনে ঈদ। খাবার সংরক্ষণের বিষয়টিও চলে আসবে। সঠিকভাবে ফ্রিজের যত্ন না নিলে ঝামেলায় পড়তে হবে।
যেভাবে ফ্রিজ ভালো রাখবেন
ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেডের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মো. জুলহক হোসাইন বলেন, ‘এখনকার রেফ্রিজারেটরে আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এসব প্রযুক্তির কারণে ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণে তেমন ভোগান্তি হয় না। আমাদের বিভিন্ন ফ্রিজে ওয়াইড ভোল্টেজ রেঞ্জ (১২৫ ভি-২৬৫ ভি), ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্টিফাঙ্গাল ডোর গ্যাসকেট, লার্জ ময়েস্ট ফ্রেশ জোন, অ্যাকটিভ কার্বন ডিওডোরাইজার, ভিটামিন ফ্রেশ ও গার্ডেন ফ্রেশ প্রযুক্তি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রযুক্তি (ন্যানো-স্লিভার প্রযুক্তি), অভ্যন্তরীণ অংশে শতভাগ ফুড গ্রেড উপাদান, ডিইসি সিস্টেম ও ফাস্টার কুলিং ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফ্রিজ শতভাগ সিএফসি ও এইচসিএফসি গ্যাসমুক্ত। ৩২ হাজার ৮৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৫২ হাজার ২২৫ টাকার মধ্যে আমাদের কনকা ব্র্যান্ডের নানা ধরনের প্রযুক্তি–সংযুক্ত রেফ্রিজারেটর রয়েছে।’
খাবারের মান যেভাবে ভালো থাকে
ফ্রিজের কার্যকারিতা ও খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিফাঙ্গাল ডোর গ্যাসকেট ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক প্রতিরোধ করে, ফ্রিজের ভেতরের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে দীর্ঘ সময়। ছত্রাকের কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে খাবার। এ প্রযুক্তির ফলে ফ্রিজের দরজা ও অভ্যন্তরীণ অংশে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জমতে পারে না, ফলে দীর্ঘদিন টাটকা থাকে খাবার। রন্ধনবিদ আফরোজা নাজনীন বলেন, ইফতার ও সাহ্রির খাবার সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ ব্যবহার করুন। ফ্রিজে খাবার রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য সঠিকভাবে ভাগ করে রাখা জরুরি। খাবারদাবার রান্নার পর দুই থেকে তিন ঘণ্টা বাইরে ভালো থাকে। এরপরে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখতে হবে। নয়তো আবহাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে।
রোজার মাসে অনেকেই ইফতার ও সাহ্রির জন্য একসঙ্গে প্রচুর খাবার ও ফল কিনে থাকেন। এসব ফল ও সবজি যেন দ্রুত শুকিয়ে বা নরম হয়ে না যায়, সে জন্য আছে লার্জ ময়েশ্চার ফ্রেশ জোন প্রযুক্তি। এটা খাবার, ফলে সবজির আর্দ্রতা কার্যকরভাবে ধরে রাখে, বজায় রাখে সতেজ ভাব। ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গার্ডেন ফ্রেশ প্রযুক্তি। এটি খাবারের স্বাভাবিক গুণাগুণ বজায় রাখে, দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকলেও খাবারের স্বাদ ও গন্ধে পরিবর্তন আসে না। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার সংরক্ষণের কারণে ফ্রিজের ভেতর দুর্গন্ধ তৈরি হয়, যা এক খাবার থেকে অন্য খাবারে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যাকটিভ কার্বন ডিওডোরাইজার ফ্রিজের বাতাস পরিশোধন করে, দুর্গন্ধ শোষণ করে। ফলে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সব সময় সতেজ থাকে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ন্যানো-স্লিভার প্রযুক্তি ফ্রিজের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, যা খাবারের সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি খাবারকে দীর্ঘ সময় তাজা ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে। ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ অংশে ফুড গ্রেড উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা নিশ্চিত করে যে সংরক্ষিত খাবার কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসবে না।
ফ্রিজের পরিবেশ ভালো রাখুন
কাঁচা মাংস, মাছ এবং রান্না করা খাবার একসঙ্গে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। কাঁচা খাবার ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখুন। ঢাকনা দেওয়া পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করুন। খাবার সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের কনটেইনারও ব্যবহার করা যায়, তবে ভালো মানের ফুড গ্রেড প্লাস্টিক ব্যবহার করা ভালো। গ্লাসের কনটেইনার ব্যবহার করলে খাবার দীর্ঘদিন ভালো থাকে, কমে গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা।
পাতাযুক্ত সবজি (যেমন লাউশাক, পালংশাক) পরিষ্কার করে কাগজে মুড়ে ফ্রিজে রাখলে দীর্ঘদিন সতেজ থাকে। গাজর, কাঁচা মরিচ, লেবু আলাদা প্যাকেটে বা পাত্রে রাখলে সহজে শুকিয়ে যাবে না। আপেল, কলা, আঙুর, বেরিজাতীয় ফল আলাদা সংরক্ষণ করা ভালো। কারণ, কিছু ফল থেকে নির্গত গ্যাস অন্যান্য ফলের পচন ত্বরান্বিত করে। সব ধরনের খাবারের নির্দিষ্ট সংরক্ষণ সময়সীমা আছে।
দীর্ঘদিন ফ্রিজে রেখে দিলে অনেক সময় খাবারের গুণ নষ্ট হতে পারে। রান্না করা খাবার তিন–চার দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। কাঁচা মাংস ফ্রিজে ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। মাছ ফ্রিজে দুই–তিন মাস পর্যন্ত রাখা যায়। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এক সপ্তাহের মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।