চাকরি হারিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন, তারপর...

ব্রিটিশ লেখক জেমস ডোভার গ্রান্ট লেখালেখি করেন লি চাইল্ড নামে। জ্যাক রিচার তাঁর বিখ্যাত সৃষ্টি। চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে ওয়েব সিরিজও তৈরি হয়েছে এই উপন্যাস সিরিজের কাহিনি অবলম্বনে। পড়ুন তাঁর কিছু কথামালা।

লি চাইল্ড
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ছেলেবেলায় আমার পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল রহস্যোপন্যাস, যুদ্ধের কাহিনি, অভিযাত্রীর গল্প পড়ে। সম্ভবত আমার মধ্যে একধরনের পলায়ন প্রবৃত্তি ছিল। এরপর একসময় অ্যালিস্টেয়ার ম্যাকলিন, জন ডি ম্যাকডোনাল্ড কিংবা রেমন্ড শ্যান্ডলার পড়তে শুরু করি। ১৯ শতকের রুশ ক্ল্যাসিক সাহিত্যে ডুবে ছিলাম বেশ কিছুদিন। মডার্ন ক্ল্যাসিক ঘুরে এসে আমার ঠাঁই হয় ফিকশন ঘরানায়, এটিই বোধ হয় আমার জায়গা।

আরও পড়ুন

থিয়েটারে কাজের কিছু অভিজ্ঞতা ছিল। মঞ্চের পেছনে কাজ করতে ভালো লাগত। টেলিভিশনে পেছনে থেকে কাজের সুযোগ আরও বেশি। তাই একটা বিজ্ঞাপন দেখে টিভিতে কাজের জন্য আবেদন করেছিলাম। সেটা ১৯৭৭ সালের কথা। তখন চাকরি পাওয়া সহজ ছিল। এভাবেই বিবিসির প্রতিদ্বন্দ্বী, আইটিভিতে যোগ দিলাম। নিয়মকানুনের বাধ্যবাধকতার কারণে সে সময় অনুষ্ঠান নির্মাণের পেছনে প্রচুর খরচ করতে হতো।

জ্যাক রিচার চরিত্রটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ

লেখালেখিতে আসার গল্পটা সরল। টেলিভিশনের চাকরিটা চলে গেল, তাই লেখালেখি শুরু করলাম। তখন করপোরেট চাকরি থেকে দূরে থাকতে চাইছিলাম। ভাবছিলাম, কীভাবে আরেকটা চাকরিতে না ঢুকেও বিনোদনের জগতে থাকা যায়। আমার কাছে একমাত্র উপায় ছিল—লেখক হওয়া। বুকভরা হতাশা নিয়ে প্রথম উপন্যাসটা লিখলাম। সেটাই কাজে লেগে গেল।

জ্যাক রিচার চরিত্রটা যখন দাঁড় করালাম, মাথায় ঘুরছিল, সেই একই খ্যাপাটে-মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নায়ক আমি চাই না। হতাশ, মাতাল নায়ক দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি একজন হাসিখুশি সাধারণ মানুষ খুঁজছিলাম। যার অনেক সমস্যা আছে, কিন্তু সে নিজেই সেটা জানে না। সে শক্তিশালী, বুদ্ধিমান, কিন্তু অন্তর্মুখী। রিচারের মধ্যে পুরোনো পশ্চিমা ঘরানার একটা ছায়া আছে ঠিক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, প্রথম বইটা লেখা শেষ হওয়া পর্যন্তও আমি জানতাম না, ব্যাপারটা এমন হয়ে যাবে। ছেলেবেলায় পশ্চিমা সংস্কৃতির খুব একটা ভক্ত ছিলাম না। টিভিতে নানা অনুষ্ঠান দেখতাম। কিন্তু সেগুলো যে অবচেতনে আমার মনে এত গভীর প্রভাব ফেলে গেছে, টের পাইনি।

আমি মূলত বিকেলের দিকে লিখি। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা-৭টা পর্যন্ত নিজের অফিস ঘরে থাকি। শুরুর সাদা পর্দা থেকে শুরু করে শেষের ‘সমাপ্ত’ পর্যন্ত পৌঁছাতে আমার সাধারণত ছয় মাস সময় লাগে। পুরো গল্পটা আগেই ভেবে নিই, তা নয়। মাথার মধ্যে একটা কিছু থাকে। হয়তো কোনো চমক বা মূল ঘটনা। এরপর লেখা শুরু করলে গল্পই গল্পকে এগিয়ে নেয়।

টেলিভিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে বলেই হয়তো আমার লেখায় দৃশ্যের একটু বিস্তারিত বর্ণনা থাকে। সংলাপ লেখার ক্ষেত্রেও এই অভিজ্ঞতা আমাকে সাহায্য করেছে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য ইন্টারনেটের সাহায্যও আমি নিই। তবে এখনো আমার কাছে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় অবদান হলো ই–মেইল। এ ছাড়া গান শুনে, বই পড়ে, আর অপলক চেয়ে থেকে অবসরগুলো কেটে যাচ্ছে।