এই রেস্তোরাঁয় খেতে সবাই কেন ফরিদপুরে ছুটে যায়?

রাজধানী ঢাকাতেই শুধু নয়, জেলা আর মফস্‌সল শহরগুলোতেও গড়ে উঠছে আধুনিক সব রেস্তোরাঁ। খাবারে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি এগুলোর অন্দরসজ্জাতেও থাকছে ভিন্নতা। তেমনই এক রেস্তোরাঁ ফরিদপুরের সেরেন গার্ডেন। চোখে দেখার পাশাপাশি চেখেও এসেছেন প্রবীর কান্তি বালা

রেস্তোরাঁটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার নিজস্ব সজ্জা আর খাবারের কারণেছবি: আলীমুজ্জামান

সেরেন গার্ডেনের কাচঘেরা দরজা দিয়ে ঢুকলেই সিঁড়ির ছোট ছোট ধাপ। সেগুলো মাড়িয়ে এগিয়ে এলেই মূল জায়গা। ভেতরে ঢুকতেই কানে আসবে পিয়ানোর হালকা সুর। অন্দরের নকশা দেখে দুই চোখ যেন ভরে যায়। মনে হতে পারে, নতুন কোনো এলাকায় চলে এসেছি। বাইরের কোলাহল নেই, প্রচলিত রেস্তোরাঁর কোনো ছাপ নেই, ভেতরে উচ্চ স্বরে কোনো বাক্যালাপ নেই। সর্বত্র স্নিগ্ধ এক পরিবেশ। দক্ষতার সঙ্গে রুচির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দেশি–বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাততলা ভবনের দুটি ফ্লোরে সাজানো হয়েছে সেরেন গার্ডেন। 

রেস্তোরাঁটি গড়ে উঠেছে ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুর মহল্লার খানবাহাদুর ইসমাইল হোসেন সড়কের মাঝামাঝি জায়গায়
ছবি: আলীমুজ্জামান

ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুর মহল্লার খানবাহাদুর ইসমাইল হোসেন সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় রেস্তোরাঁটি গড়ে উঠেছে। 

চালু হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রেস্তোরাঁটি শহরের ভোজনরসিকদের নিয়মিত আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই এলাকায় বেড়াতে আসা মানুষদের কাছেও রেস্তোরাঁটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার নিজস্ব সজ্জা আর খাবারের কারণে। আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত একটি ভবনের দুটি ফ্লোরে সেরেন গার্ডেন রেস্তোরাঁ। দুটি ফ্লোর মিলে ১২০ জনের খাওয়ার সুযোগ আছে।

সেরেন গার্ডেনের কাচঘেরা দরজা দিয়ে ঢুকলেই সিঁড়ির ছোট ছোট ধাপ
ছবি: আলীমুজ্জামান

রেস্তোরাঁটি খুব যে বেশি জায়গাজুড়ে করা হয়েছে, তা কিন্তু না। তবে ডেকোরেশনের কারণে সেটা পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। প্রতি তলার আয়তন ১ হাজার ৯৭১ বর্গফুট।

ভেতরে ঢুকলেই চারদিকে স্বচ্ছ কাচের বড় আকৃতির জানালার আদল। ওপরে ঝুলছে নকশা করা ঝাড়বাতি। কাঠের তৈরি চেয়ার–টেবিলগুলো সাজানো হয়েছে পরিপাটি করে। সেরেন ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ নির্মল, প্রশান্ত, নির্মেঘ। ভিতরে আসলেই তেমন একটা আবহ পাওয়া যায়।

রেস্তোরাঁটি খুব যে বেশি জায়গাজুড়ে করা হয়নি, তবে ডেকোরেশনের কারণে সেটা পেয়েছে ভিন্নমাত্রা
ছবি: আলীমুজ্জামান

সেরেন গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী শহরের চর কমলাপুরের বাসিন্দা গোলাম মোর্তজা। তবে তিনি মূলত অর্থের জোগানদার। এটি গড়ে তুলেছেন তাঁর চাচাতো ভাই গোলাম তানভীর। এই প্রতিষ্ঠানের তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

রেস্তোরাঁটিতে চারকোনা টেবিলের দুই দিকে দুটি করে সোফা, সেটাও অনেকটা বেঞ্চের আদলে তৈরি
ছবি: আলীমুজ্জামান

একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন গোলাম তানভীর। সেই সুবাদে ঘুরেছেন বিভিন্ন দেশ। বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন ক্যাফে–রেস্তোরাঁ দেখে তাঁর মনে একটি অভিজাত এবং আন্তর্জাতিক মানের রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার স্বপ্ন জাগে। আর চেয়েছেন সেটা যেন নিজের জেলাতেই করা যায়। চাচাতো ভাইয়ের সহযোগিতায় এই কাজে হাত দেন। বিদেশি বিভিন্ন সামগ্রীর জোগান ও পরামর্শ দিয়ে তাঁকে সহায়তা করেন তাঁর ডেনমার্কের বন্ধু হেনরিক।

পুরো ভবনটিতে ধূসর আর সাদা রঙের প্রাধান্য। ভবনটির নকশাতেও আছে ভিনদেশি স্থাপত্যরীতির প্রয়োগ। চারকোনা টেবিলের দুই দিকে দুটি করে সোফা, সেটাও অনেকটা বেঞ্চের আদলে তৈরি। অন্দরের আসবাবে কাঠরং ছাড়াও সাদা–ধূসরের ছড়াছড়ি। জানালার পর্দাগুলো পাতলা সাদা কাপড়ে রাঙানো।

পুরো ভবনটিতে ধূসর আর সাদা রঙের প্রাধান্য, ভবনটির নকশাতেও আছে ভিনদেশি স্থাপত্যরীতির প্রয়োগ
ছবি: আলীমুজ্জামান

শুকনা গাছের ওপর সাদা রং স্প্রে করে ভেতরে আনা হয়েছে বরফের দেশের আবহ। নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সিঁড়িটিও কাঠের রঙের সঙ্গে সাদার মিশেলে রাঙানো। ভেতরে ব্যবহার করা হয়েছে নানা রকম টেবিলল্যাম্প। কোনোটা চারকোনা, কোনোটা আবার গোলাকার।

রেস্তোরাঁটিতে ব্যবহার করা হয়েছে নানা রকম ল্যাম্প
ছবি: আলীমুজ্জামান

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সেরেন গার্ডেন। তবে শুরুর চার মাসের মধ্যে গ্যাসের পাইপ লিক করে ঘটে দুর্ঘটনা। এতে সেরেন গার্ডেনের দরজা–জানালার সব কাচ ভেঙে যায়। দরজার কাঠগুলোও পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর করোনায় স্থবির হয়ে থাকে পরবর্তী অন্তত দেড় বছর। করোনার ধাক্কা সামলে এখন আবার দারুণ গতিতে এগিয়ে চলেছে সেরেন।  

আরও পড়ুন

কন্টিনেন্টাল খাবারের পাশাপাশি রেস্তোরাঁটিতে রয়েছে পিৎজা, পাস্তা, ফ্রায়েড রাইস ও সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন পদ। মিলবে কোল্ড ও হট কফির হরেক রকম স্বাদ। ফরিদপুরে কফির তৈরির আধুনিক মেশিনও তারাই প্রথম এনেছে। 

রেস্তোরাঁটি ছোট ছোট পার্টির জন্যও আলাদা করে ভাড়া দেওয়া হয়
ছবি: আলীমুজ্জামান

রেস্তোরাঁটি ছোট ছোট পার্টির জন্যও আলাদা করে ভাড়া দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা, বড়দিন, নববর্ষে লোকসমাগম বেশি থাকে। তা ছাড়া সারা বছরই রুচিশীল ক্রেতারা আসেন সকাল থেকে রাত অবধি খোলা এই রেস্তোরাঁয় খাবারের স্বাদ নিতে।

ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ফরিদপুরের ভ্যাট অফিস থেকে পুরস্কার পেয়েছে, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর থেকেও পেয়েছে সুরক্ষা ফুড সনদ।

আরও পড়ুন