উটকে কেন জীবন্ত বিষধর সাপ খাওয়ানো হয়

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উটকে সাপ খাওয়ানোর ভিডিও প্রায়ই দেখা যায়ছবি: পেক্সেলস ডটকম

খাদ্যচক্রের নিয়মানুযায়ী প্রকৃতির এক প্রাণী অন্য প্রাণীকে ভক্ষণ করে থাকে—এটি স্বাভাবিক। তা–ই বলে জ্যান্ত বিষধর সাপ গিলে ফেলবে কোনো প্রাণী! হ্যাঁ, বিশেষ পরিস্থিতিতে মরুর বাহন উটকে আস্ত সাপ খাওয়ানো হয়। তা–ও আবার কিং কোবরার মতো সাপ। উট এমনিতে খুবই শান্তশিষ্ট প্রাণী। এমন নিরীহ গোছের একটি প্রাণীকে সাপ খাওয়ানো হয় কেন?

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উটকে সাপ খাওয়ানোর ভিডিও প্রায়ই দেখা যায়। বস্তুত ‘হায়াম’ নামের উটের এক অদ্ভুতুড়ে রোগের চিকিৎসায় এটি করা হয়।। স্থানীয় শব্দ ‘হায়াম’-এর অর্থ জীবন্ত সাপ গিলে ফেলা। এতে আক্রান্ত হলে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয় উট। ধীরে ধীরে ফুলে শক্ত হয়ে যায় শরীর। তৈরি হয় রক্তশূন্যতা। এ ছাড়া গর্ভপাত, মৃত বাচ্চা প্রসব—প্রভৃতি জটিলতা হয়ে থাকে। চিকিৎসা করা না হলে মারা যেতে পারে। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কেবল সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। এর একমাত্র চিকিৎসা বলে মনে করা হয় বিষধর সাপ খাওয়ানো। উটমালিক আক্রান্ত উটের মুখ হাঁ করিয়ে জীবন্ত সাপ ঢুকিয়ে দেন। এরপর মুখে পানি ঢালা হয়, যাতে সাপটি ভেতরে চলে যায়। কখনো কখনো উট নিজে নিজেই সাপ খেয়ে ফেলে। সাপের বিষ সারা শরীরে ছড়াতে শুরু করলে খুব তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে উট। তখন প্রচুর পানি পান করতে থাকে। এই অবস্থা চলতে থাকে মোটামুটি ছয় থেকে আট ঘণ্টা। একপর্যায়ে বিষক্রিয়ার ফলে উটের চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই উট সুস্থ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন
উটের রোগমুক্তির এই চিকিৎসাপদ্ধতি বিজ্ঞানসমর্থিত নয়। চিকিৎসকেরা এটিকে ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে করেন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

উটের চোখনিঃসৃত এই পানিকে বলা হয় তিরইয়াক। এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অত্যন্ত যত্নসহকারে তাঁরা এটি সংরক্ষণ করেন। তাঁদের ধারণা, সাপ ও অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড় দংশন করলে এই পানি নিরাময় হিসেবে কাজ করে। পুরো ব্যাপারটিকে বলা যেতে পারে—বিষে বিষে বিষক্ষয়।

তবে উটের রোগমুক্তির এই চিকিৎসাপদ্ধতি বিজ্ঞানসমর্থিত নয়। চিকিৎসকেরা এটিকে ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, উটের পরিপাকতন্ত্র অত্যন্ত শক্তিশালী। সাপের কামড় যেমন উটকে কাবু করতে পারে না, তেমনই সাপ গিলে ফেললেও খুব সহজেই তা হজম হয়ে যায়। মরুভূমির মতো প্রতিকূল পরিবেশে জীবন ধারণ করতে গিয়ে উট হরহামেশা সাপের চেয়েও বিষাক্ত খাবার বা প্রাণী খেয়ে থাকে। সেসবের তুলনায় সাপের বিষ অতি নগণ্য ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, উটের সাপ খাওয়া বা খাওয়ানো বিশেষ কোনো বিষয় নয়। এর কোনো ইতিবাচক দিকও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। এটি নেহাতই একটি কুসংস্কার।