শিশুকে মনোযোগী করে তুলতে কী করবেন

প্রায়ই মা-বাবার মুখে শোনা যায়, ‘আমার ছেলেটা/মেয়েটা মনোযোগী না, অলস।’ হোক তা পড়ালেখা কিংবা ঘরোয়া কোনো কাজে। তাহলে শিশুকে মনোযোগী করে তুলতে কী করা যায়?

ব্যর্থতাকে ভয় না করে ইতিবাচকভাবে দেখতে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুলুনছবি: সুমন ইউসুফ

১. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও দিকনির্দেশনা

প্রতিভাবান মানুষের বেলায়ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও দিকনির্দেশনা ছাড়া সামর্থ্যের সবটা কাজে লাগানো কঠিন। শিশুর বেলায়ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে কিংবা সে যা পারে, লক্ষ্য যদি হয় তার বিপরীত; পাশাপাশি সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব থাকলে সে অনুৎসাহিত বোধ করতে পারে। যা থেকে সৃষ্টি হয় মনোযোগহীনতা ও আলস্য। তাই শিশুকে তার লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি লক্ষ্য যেন সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

২. ব্যর্থতাকে ভয় নয়

ব্যর্থতার ভয় প্রতিভাবান শিশুকেও বাধার মুখে ফেলে। যে কারণে তুলনামূলক কঠিন কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে, যা থেক আসতে পারে আলস্য। তাই ব্যর্থতাকে ভয় না করে ইতিবাচকভাবে দেখতে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুলুন।

অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার বদলে প্রচেষ্টায় গুরুত্ব দিন, যা শিশুকে সাহসী করে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
পেক্সেলস

৩. প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দিতে হবে

অঙ্কে ১০০–তে ১০০ পেতে হবে, প্রথম হতেই হবে—এককথায় অতিরিক্ত প্রত্যাশা শিশুর ওপর চাপ তৈরি করে, যা তার মানসিক বিকাশের জন্য বড় হুমকি। মনোযোগহীনতা, অলসতার পেছনে এর ভূমিকা ব্যাপক। তাই অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার বদলে প্রচেষ্টায় গুরুত্ব দিন, যা শিশুকে সাহসী করে তুলতে ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন

৪. প্যাশন খুঁজে বের করার সুযোগ

শিশুর ওপর জোর করে এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, যা সে করতে চায় না। চাপিয়ে দিলে বা করতে বাধ্য করলে সে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে, যা থেকে আসতে পারে আলসেমি। তাই চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন বিষয়ে শিশুকে যুক্ত করার সুযোগ দিয়ে সত্যিকারের ভালো লাগার বিষয় বা প্যাশন খুঁজে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

৫. সময় ব্যবস্থাপনার ধারণা দেওয়া

প্রতিভাবান শিশুরা একসঙ্গে অনেক কাজের প্রতি আগ্রহ বোধ করতে পারে। ফলে কোনটা রেখে কোনটা করবে—এমন দোটানায় পড়া অস্বাভাবিক নয়। তবে কখনো কখনো এই দোটানা থেকেও মনোযোগহীনতা তৈরি হতে পারে। আর এ পরিস্থিতি উত্তরণে শিশুকে সময় ব্যবস্থাপনার ধারণা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কোন কাজটি আগে আর কোনটি পরে করা উচিত, এ ধারণা দিয়েও শিশুকে সহযোগিতা করতে হবে।

৬. প্রশংসা ও উদ্‌যাপন

প্রশংসা না করা, পাত্তা না দেওয়া—এককথায় স্বীকৃতির অভাব শিশুকে অমনোযোগী করে তুলতে পারে। শিশু নতুন কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই অর্জন যত ছোটই হোক না কেন, শিশুর প্রশংসা করুন। তবে অতি প্রশংসাও যে জটিলতা সৃষ্টি করে, এটিও মনে রাখতে হবে। আর অর্জন অসামান্য হলে ছোট ছোট উদ্‌যাপনের আয়োজনও করা যেতে পারে।

৭. পর্যাপ্ত ঘুম ও খেলার সময়

কখনো কখনো ক্লান্তি থেকেও মনোযোগহীনতা কিংবা অলসতা তৈরি হতে পারে। ঘড়ি ধরা টাইট শিডিউল, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, সব সময় ব্যস্ত থাকা শিশুর উদ্দীপনা নষ্ট করে। তাই শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম, খেলার সময়, বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

অর্জন যত ছোটই হোক না কেন, শিশুর প্রশংসা করুন।
ছবি: সুমন ইউসুফ

৮. চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করা

প্রতিভাবান শিশুরা তুলনামূলক কম পরিশ্রম করেই সফলতা ছুঁয়ে ফেলতে অভ্যস্ত। যে কারণে তুলনামূলক বেশি পরিশ্রম বা অধ্যবসায়ের কাজে অলসতা, মনোযোগহীনতা বা ক্লান্তি আসতে পারে। তাই শিশুকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে সমস্যা সমাধান করাও শেখাতে হবে। যা তাদের হাল না ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন