‘একদিন শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করব’
কম্পিউটারের সামনে বসে পোস্টারটির নকশা করার সময় মাহাদী কি ভেবেছিল, এটি একদিন শাহরুখ খানের হাতেও পৌঁছে যাবে এটা!
মাত্রই দশম শ্রেণিতে পড়ে সে। ঢাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বাড়ি মাদারীপুর হলেও এখন স্থায়ী হয়েছে ঢাকার মিরপুরে। স্রেফ একজন ভক্ত হিসেবেই বলিউড তারকা শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ সিনেমার একটা পোস্টার তৈরি করেছিল সৈয়দ মাহাদী রহমান। একালের ভাষায় যাকে বলে ‘ফ্যান মেইড পোস্টার’। সে-ও বেশ কিছুদিন আগের কথা। তখনো ছবিটি নিয়ে মাত্রই গুঞ্জন, ফিসফাস শোনা যাচ্ছিল। অফিশিয়াল পোস্টার, ট্রেলার, টিজার—কিছুই মুক্তি পায়নি। করোনার ঘরবন্দী সময়ে ‘পাঠান’–এর পোস্টার বানিয়ে মাহাদী তুলে দিয়েছিল অনলাইনে।
কদিন পর দেখা গেল, সেই পোস্টারই ছেয়ে গেছে অনলাইনে-অফলাইনে। এমনকি পৌঁছে গেছে শাহরুখ খানের কাছেও! বলিউডের বাদশাহর হাতে পোস্টারটি তুলে দেন ‘এসআরকে চেন্নাই ফ্যান ক্লাব’–এর অ্যাডমিন। ভারতীয় নির্মাতা করণ জোহরও তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে মাহাদীর বানানো পোস্টারটি শেয়ার করেন।
পোস্টার ডিজাইনার মাহাদীর শুরুটা বেশ আগে থেকে। ২০১৬ সালে সে যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র, তখন থেকেই কম্পিউটারের প্রতি আকর্ষণ ছিল। শাহরুখ খানকেও ভালো লাগত ভীষণ। শাহরুখের ছবির গানে নাচানাচি যেমন করত, সেগুলো ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোডও করত। ভিডিও আপলোডের প্রয়োজনীয়তা থেকে একসময় নিজে নিজেই শিখে ফেলে ভিডিও সম্পাদনা, থাম্বনেইল তৈরির কাজ। এরপর দিন যত এগিয়েছে, ততই পরিণত হয়েছে মাহাদী।
২০২০ সালে নিজের বানানো পোস্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে তার পরিচয়। একসময় আরেক দর্শকনন্দিত অভিনেতা আফরান নিশোর কাছেও পৌঁছে যায় তার কাজ। তখন থেকে নাটকের পোস্টার বানানোর কাজে আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িয়ে পড়ে মাহাদী। এরই মধ্যে সে ‘ঘূর্ণি’, ‘কেন’, ‘লজ্জা’, ‘আলো’সহ ছয়-সাতটি নাটকের কাজ করেছে। বড় পর্দায় এম রাহিম পরিচালিত ‘শান’ এবং মীর সাব্বিরের ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমায় ফেসবুক প্রমোশনাল ডিজাইনারও ছিল স্কুলপড়ুয়া এই কিশোর।
মাহাদীকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। শুরুতে ভালো কম্পিউটার ছিল না। দুর্বল কনফিগারেশনের যন্ত্রে চাইলেও সে অনেক কিছু করতে পারত না। হুটহাট হ্যাং করত কম্পিউটার, ফটোশপে ঢুকলেই সফটওয়্যার গোলমাল পাকাত। নিজে নিজেই সেসব সামাল দিয়েছে মাহাদী। সমস্যাগুলো একপাশে রেখে কাজ চালিয়ে গেছে। ২০২০ সালে কম্পিউটারটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে প্রায় তিন মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। পরে আবার কম্পিউটার কিনে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করে।
ভবিষ্যতে শাহরুখ খানের নিজস্ব প্রোডাকশন হাউস ‘রেড চিলিজ’-এ কাজ করতে চায় মাহাদী। হতে চায় সেই দলের কনিষ্ঠতম সদস্য। এ জন্য শাহরুখ খানের সিনেমা দেখে দেখে হিন্দিও রপ্ত করে ফেলেছে।
বলছিল, ‘সাধারণত মানুষের ইচ্ছে থাকে শাহরুখ খানকে দূর থেকে দেখার। কিন্তু আমি চাই একদিন তাঁর সঙ্গে বসে কাজ করব। তাঁর সিনেমার ডিজাইনার কিংবা সম্পাদনা, যেকোনো কিছুতে যুক্ত হতে চাই।’
এই ইচ্ছেটাই কেন? মাহাদী বলল, ‘কথায় বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। দেখি, উপায় হয় কি না।’