তরিকুল হতে পারতেন গার্মেন্টসকর্মী বা সিএনজি চালক, তবে তিনি আজ বিসিএস ক্যাডার

জীবনের চলতি পথের এক মোড়ে দাঁড়িয়ে মো. তরিকুল ইসলামের মনে হয়েছিল, তিনি যদি গার্মেন্টসে একটা চাকরি পান, ট্যাক্সি চালান অথবা ঢাকা থেকে কাপড় এনে গাজীপুরের মোড়ে মোড়ে বিক্রি করেন, তাহলে নিজেকে সফল বলে মনে করবেন। ৪১তম বিসিএস এ সেই তরিকুল তথ্য ক্যাডারের সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক পদে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। সেই যাত্রার কথা তুলে ধরা হলো তরিকুলের বয়ানে। কথা বলেছেন জিনাত শারমিন

মো. তরিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

সব হারিয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ের ক্ষয়ে যাওয়া যাওয়া জমিদার পরিবার যাকে বলে, আমরা তাই। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাটিরা গ্রাম আমি যখন ক্লাস এইট বা নাইনে কোচিং করি, তখন ঢাকা থেকে ক্লাস নিতে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ভাইয়া। আমার চোখে তিনি তখন হিরো। তারপর যখন এসএসসি পরীক্ষা দিই, তখন কক্ষ পরিদর্শনে এসেছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে মনে হয়েছিল, উনি কত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। উনার কত ক্ষমতা, সম্মান। মনে মনে সেই ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন আমার আইডল।

তখন আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। আমি যে মেয়েটাকে পছন্দ করি তারও পরীক্ষা চলছে। আমরা পরস্পরকে খুব পছন্দ করতাম। ওর বাসায় জানাজানি হয়ে যায়। ওকে তাড়াহুড়ো করে জোর করে আরেক জায়গায় বিয়ে দিতে চাচ্ছিল ওর বাবা মা। আরো চারটি বিষয়ের পরীক্ষা তখনো বাকী ছিলো। ওই মুহূর্তে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না যে কী করব। আমরা দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিলাম আর কোর্টে গিয়ে বিয়েটা করেই নিলাম। যদিও ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা নিজেদের জীবনকে এক ধাক্কায় অনেকটা ঝুঁকির ভেতর ফেলে দিয়েছিলাম। আমি এটা স্বীকার করি যে, ওই আবেগী সিদ্ধান্তের জন্য আমাদেরকে বড় ধরনের মূল্য চুকাতে হতে পারত। যা হোক বিয়ে পরবর্তী নানা জটিলতায় পড়ে সেবার আর পরীক্ষা শেষ করতে পারিনি। বিয়ের পরপরই আমরা গাজীপুর চলে আসি।৷ কেননা, ওইখানে আমার বড় ভাইয়েরা থাকতেন। আলাদা বাসা নিলাম। ঘর সংসার আর পরীক্ষার প্রস্তুতি দুটোই চলছিলো সমান তালে।

পরেরবার পরীক্ষা দিলাম। ফোর্থ সাবজেক্টের পরীক্ষা আবার দ্বিতীয় বছরে দেওয়া যায় না। সব মিলিয়ে এ প্লাস হলো না। ফোর পয়েণ্ট এইট জিরো। সবকিছু ভালোই চলছিলো। এইচএসসি পরীক্ষা মাত্রই শেষ করলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি শুরু করবো ঠিক সেই সময়ই আমার পারিবারের পক্ষ থেকে সকল আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ওই সময় আমার বড় ভাইয়েরা চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। আর যে কোনো ব্যবসা-ই সাধারণত চালু হতে একটু সময় লাগে। একেবারে ছোটবেলা থেকে সেই সময় পর্যন্ত আমার পড়ালেখার সমস্ত খরচ চালিয়েছে আমার বড় ভাইয়েরা। কারণ আমার কৃষক বাবার পক্ষে তা সম্ভব ছিলোনা। আর এমন সময় আসল, যখন আমার পরিবারের আর্থিক সমর্থন সবচেয়ে বেশি দরকার, তখনই তা বন্ধ হয়ে গেল।আমি আমার পড়াশোনা, স্ত্রী আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে অথৈ সাগরে পরলাম। তখন পড়াশোনার চেয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে নেমে পড়লাম।

গাজীপুরে তো অনেক গার্মেন্টস, ভাবলাম কোনো একটাতে ঢুকে যাই। বেশ কয়েকটা জায়গায় সিভি দিয়ে আসলাম। কিন্তু সেভাবে সাড়া পেলাম না। এসচএসসি পাশের সার্টিফিকেটে কে আর ভালো চাকরি দেবে!

তারপর ভাবলাম, সিএনজি চালানো শিখি। শুনেছিলাম ভালো ইনকাম। মনের অস্থিরতা নিয়ে সেটাও হলো না। চিন্তা করলাম, ঢাকা থেকে টি-শার্ট, গেঞ্জি এনে গাজীপুর শহরের যে এলাকাগুলোতে লোক জমায়েত হয় সেখানে বিক্রি করলে কেমন হয়? কেননা, আমার তো সংসার চালাতে হবে। তখন আমরা একবেলা খাই আর চিন্তা করি পরের বেলা কী খাব। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পড়াশুনাও করতে হবে। আসলে কী দিয়ে কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

সেই সময় আমার বউ একটা সিদ্ধান্ত নিল। সেটা আমার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। ও গার্মেন্টস এ কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে জয়েন করল। ভোরবেলা বাসায় রান্না করে গার্মেন্টস এ যায়। আবার আসতে আসতে রাত ৮টা-৯টা। ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা বেতন পেত মাসে। ছয় মাস চাকরি করেছিল। ওই ছয় মাসে আমি এত পড়াশুনা করেছি, এত পড়শুনা করেছি যে আমি বাসায় থাকতে থাকতে পুরো সাদা হয়ে গিয়েছিলাম। আমি খেলাধুলা করতে ভালোবাসি। কিন্তু তখন বিকেলেও বের হতাম না। সারাক্ষণ পড়াশুনা করতাম। আমি কিন্তু কোনো কোচিং করিনি। কীভাবে করব? ৫০০ টাকায় এক সপ্তাহ চলতাম। আমাদের কাছে তখন প্রতিটা টাকা গুরুত্বপূর্ণ। একটা এক টাকার কয়েন, দুই টাকার নোটেরও মূল্য বুঝি। ঢাবিতে ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় হলাম ১১৭তম। ইন্টারের রেজাল্ট খারাপ ছিল। নাহলে আরও ভালো পজিশন থাকত। ম্যাথ ফোর্থ সাবজেক্ট ছিল, পরেরবার পরীক্ষা দিতে পারি নি। তাই ইকোনমিক্সসহ অনেক সাবজেক্ট পেলাম না। ভর্তি হলাম গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে।

আমি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইনি। তাই ডিপার্টমেন্ট এ খুব ভালো রেজাল্ট করা, শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা, অবসরে তাঁদের অফিসে গিয়ে কথাবার্তা বলা- এইসব চাপ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই আমি বউকে চাকরি ছাড়ালাম। নিজে দুইটা টিউশনি শুরু করলাম। প্রায়ই শুক্র ও শনিবার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় দিতাম।

মাঝে মাঝে এমন হতো, আমার ক্লাস হয়ত সকাল ১০টায় শেষ। কিন্তু আমি ৩টা পর্যন্ত সেমিনারে বসে থাকতাম। কেননা, আমার দুইটা টিউশনির ১টা সাড়ে ৩টায়, আরেকটা সাড়ে ৬টায়। সেমিনারে ওই সময়টা কী করব? তাই পড়াশুনা করতাম। প্রথম সেমিস্টারে অনেক ভালো রেজাল্ট হলো। আমি বুঝে গেলাম, কীভাবে পড়াশুনা করলে মোটামুটি একটা রেজাল্ট থাকবে। তাই বিসিএসের জন্য পড়া শুরু করলাম।

ভোরে গাজীপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতাম। ক্লাস করতাম। দুইটা টিউশনি শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা, ১১টা কখনোবা ১২টা। কেননা, গাজীপুর থেকে আসা-যাওয়ায় প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগত। কিছুদিন পর আমি একটা ভালো টিউশনির অফার পাই। এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়ন পড়াতে হবে। আমি মাসে যতদিন খুশি পড়াব। প্রতিদিন ৭৫০টাকা করে দেবে। এজন্য অবশ্য আমাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছিল। আমি বলেছিলাম যে আমি রসায়নে পড়ি। আমি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার কারণে ওই ছাত্রকে পড়াতে আমার খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। তবে, আমাকে পদার্থ আর রসায়ন অনেক ভালো করে পড়তে হয়েছে। ওকে দেড় ঘণ্টা পড়ানোর জন্য আমাকে দুই ঘণ্টা পড়ে যেতে হতো। ও আমার পড়ানোতে খুবই খুশি ছিল। এই টিউশনি ছাড়াও আমি তখন একটা স্কলারশীপ পাই। হাতে কিছু টাকা আসায় সুযোগ পেয়েই আমি আমার স্ত্রীকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি করিয়ে দিই। আমার যেদিন অনার্সের শেষ বর্ষের ভাইভা, সেদিন আমার পুত্রসন্তান হলো। আমি আমার শিক্ষকদের জানালাম। তাঁরা আগে আগে আমার ভাইভা নিয়ে ছেড়ে দিলেন। বেশি প্রশ্নও করেননি! অভিনন্দন জানিয়ে কিছু বেসিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ছেড়ে দিলেন।

এরপর আমি ঢাকার উত্তরাতে একটা বাসা ভাড়া নিই। উত্তরাতে বাসা নেবার কারণ হলো, ওই বাড়িওয়ালার দুই সন্তানকে আমি পড়াতাম। ফলে বাসাভাড়া দেওয়া লাগত না। তখনও প্রায় চার মাস আমি প্রচুর পড়াশুনা করেছি। দিনে ১৪ ঘণ্টা, মাঝে-মধ্যে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্তও পড়তাম। প্রথম চাকরির পরীক্ষা দিলাম, প্রাইমারি স্কুলে, হলো। ওখানে জয়েন করার আগেই আমার বিসিকে ৯ম গ্রেডের চাকরি হয়ে গেল। এসআই এর লিখিত পরীক্ষায়ও টিকেছিলাম। তবে ভাইভা দিতে যাইনি। কেননা, আমি তো বিবাহিত। এসআইয়ের চাকরির জন্য ট্রেনিং পর্যন্ত অববাহিত থাকার একটা শর্ত আছে।

৪০তম বিসিএস এ আসল নন ক্যাডার। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরেও নানা কারণে এখনো ৪০ তম বিসিএস নন-ক্যাডারের রেজাল্ট হলোনা। এর ভেতর আমার আরেকটা সন্তান হলো। এইবার মেয়ে। আমার স্ত্রী আসলে বরাবরই খুব সাহসী। বিয়ের পর সাড়ে সাত বছর ওর বাবা মা ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সেও করেনি। সে কেবল বলত, আমার বাবা মা যদি পারে, আমি কেন পারব না? ওর কান্না আমি দেখেছি। কিন্তু ও কখনো ভেঙে পড়েনি। হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয় নি। ধৈর্য্য ধরে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছে। ও সবসময় বিশ্বাস করত, সুদিন আসবেই। আমাদের মেয়ে হবার সময়কার একটা কথা বলি। নির্ধারিত ডেট পার হয়ে প্রায় মাসখানিক হতে চলল। ও স্বাভাবিকভাবে সব কাজকর্ম করে। ওর কোনো বিকার নেই। আমি ওকে বললাম, এইবার আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিৎ। ওর শুধু একই কথা, ‘আমি ভালো আছি। বেবির মুইভমেন্টও ঠিক আছে। আমি কেন শুধু শুধু সি-সেকশন করাব?’ সত্যিই ডেটের মাসখানিক পর সে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসব করে। আর এইটা সম্ভব হয়েছে কেবল ওর মনের জোরে। যা হোক, ৪১তম বিসিএস এ আমি তথ্য (বার্তা) ক্যাডার এ প্রথম হলাম। একটু আগে (বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারভিউ এর খানিক আগে) আমি আর আমার ছেলে বসে বসে সিআইডি দেখছিলাম। ওর মা এসে বলল, কী ব্যাপার, ‘তোমার না সামনে ৪৫তম বিসিএসের রিটেন? যাও, পড়তে বসো’। আমি আসলে আমার স্বপ্নের বেশ কাছাকাছি। আমি আমার নামের আগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়টা দেখতে চাই। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হল না। তবে ৪৩তম বিসিএস ও ৪৪তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট বাকি আর সামনে ৪৫ তমর লিখিত। আমি এখন পর্যন্ত কোনো বিসিএস এ ফেল করিনি। আশা করি, সবার দোয়া ও  সহযোগিতায় আমি আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

আমি হয়ত খুব বেশিদূর এগোইনি। কিন্তু যেখান থেকে উঠে এসেছি, সেটা চিন্তা করলে জীবনযুদ্ধে কখনো হাল না ছেড়ে খারাপও করিনি। আসলে সংসার আর চাকরি সামলিয়ে পড়াশোনা করা খুব কঠিন। কিন্তু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগে ছয় মাস আর মাস্টার্স শেষ করে উত্তরায় থাকাকালীন যে চার মাস তুমুল পড়াশোনা করেছিলাম, ঐটা আমাকে এগিয়ে দিয়েছিল। এরপর প্রতিদিন তিন থেকে চার  ঘণ্টা পড়াতেও অসুবিধা হয়নি।  

আমি কোনোদিন কাউকে বুঝতে দিইনি যে আমার আর্থিক বা অন্যকোনো সমস্যা চলছে। না খেয়ে থাকলেও কেউ কখনো বোঝেনি। বাইরে থেকে প্রায় শতভাগ সেটা মেইনটেইন করেছি। আমার বাবা ছিলেন কৃষক, ২০১৯ সালে তিনি মারা যান। তিনি যখন খুব অসুস্থ্য তখন কেবল বলতেন, ‘একদিন আমার ছেলে বড় চাকরি পাবে। আমি দেখে যেতে পারবো না’। একদিন হয়ত সত্যিই আমি আমার স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলব। তবে, আব্বা দেখে যেতে পারলেন না, এটাই আমার বড় দুঃখ, যেটা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আব্বা আরও বলতেন, ‘একদিন দেখিস এই বাড়িতে আবার চাঁদের হাট বসবে। আর আমি তখন থাকব না।’ আসলেও আমাদের এখন অনেক অনেক ভালো অবস্থা। ভাইয়েরা ব্যবসায় ভালো করছে। আমার ছোটবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওর বিভাগে  টপার। কিছুদিনের ভেতর ওর পাবলিকেশন বেরোবে। আমি পরিবার নিয়ে ভালো আছি। আমি যখন প্রচন্ড আর্থিক টানাপোড়নে ছিলাম, তখনো আমাদের দুজনের মনে শান্তি ছিল। আর এখন আমাদের টাকাপয়সা বা মানসিক শান্তি- কোনটারই অভাব নেই।

মো. তরিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

আমি আজকে যেখানে  এসেছি, যাই অর্জন করেছি আমি মনে করি তার পেছনের কারিগর হলেন আমার স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পর্যায়ের শিক্ষকগণ। আমার অনুপ্রেরণা হিসবে শক্তি যুগিয়েছে আমার মা, বাবা, ভাই, বোন আর আমার স্ত্রী। আর আমাকে সদা জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়েছে, সকল বিপদে পাশে থেকে আমায় চিরঋণী করেছে আমার সকল পর্যায়ের বন্ধু-বান্ধবগণ।

আমার স্কুলের কোচিংয়ের আমার অভিভাবকতুল্য পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব  হুমায়ূন তালুকদার বলতেন, ‘তুই জীবনে এত বড় হ, এত বড় হ, যাতে আমার কথা তোর মনেই না থাকে’। আমার প্রায়ই উনার কথা মনে পড়ে। আর তিনিসহ আমার সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কৃতজ্ঞ-চিত্তে আমৃত্যু মনে রাখতে চাই।

তবে একজনের কথা আলাদা করে না বললেই না। তিনি হলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রফেসর ড. নাদির জুনাইদ। উনার এক্সিলেন্স আমাকে আকৃষ্ট করত। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা আমাকে ব্যাপকভাবে  স্পর্শ করতো। তাই কখনো পড়াশুনার সঙ্গে আপোষ করিনি। আমি চাইতাম, আমাকে ওইখানে পৌঁছাতে হবে, এজন্য যা করার, আমি তাই করব। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর ক্লাস করতাম। স্যারের  ক্লাস শেষে খুব খুশি থাকতাম।

আমি জীবনে একটি পিএইচডি করতে চাই। যদি কখনো সেই সুযোগ হয়, আমি খুব করে  চাইব, প্রফেসর নাদির জুনাইদ স্যার সেদিন আমার রিকমেন্ডেশন লেটারটা লিখবেন। আমি সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ ভালোভাবে পালন করতে পারি। আমাকে যাতে কখনো  কোনো পরিস্থিতিতেই অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে না হয়।

তবে শেষ কথা হলো, বিসিএস বা ক্যাডার হওয়াটা এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। আপনার এমন টার্গেট না-ই থাকতে পারে। থাকলেও কেবল বিসিএসকে টার্গেট করে কারোরই চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় নামা উচিত নয়। কারণ বিসিএস একটা নেশা, একটা বাজি। এখানে ধৈর্য্যশীল, মেধাবী, পরিশ্রমী আর ভাগ্যবান বাজিকররাই জয়ী হয়। তাই সব ভেবে-চিন্তেই এই ম্যারাথন রেসে নামা উচিত।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন