বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শুধু বেকার বানায়

‘সুযোগ পেলে লেখাপড়ার যে নিয়ম বদলে দিতাম’ — এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। পড়ুন নির্বাচিত লেখাগুলোর মধ্য থেকে একটি।

ভবিষ্যতে মানুষ আরও বাড়বে, একই সঙ্গে বদলে যাবে কাজের সুযোগের ধরন
ছবি: দীপু মালাকার

সুযোগ পেলে আমি লেখাপড়ার গোটা নিয়মটাই বদলে দিতাম। বাস্তবমুখী, সুদূরপ্রসারী, বয়সের সীমাবদ্ধতাহীন উন্নত শিক্ষাপদ্ধতি চালু করতাম। বর্তমানের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমি মনে করি বেকার বানানোর শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশের আয়তন কিংবা কাজের সুযোগের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। ভবিষ্যতে এই মানুষ আরও বাড়বে, আয়তন কিন্তু বাড়বে না। বরং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধাক্কায় অনেক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়ে যাবে। আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে এখনই কিছু কিছু বিষয়ের আমূল পরিবর্তন দরকার, বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে।

শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবর্তন আনা সবচেয়ে জরুরি। বাচ্চাদের স্কুল হবে ডিজনিল্যান্ডের মতো, সেখানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম থাকবে। শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা খুঁজে বের করার পরিবেশ থাকবে, যেখানে শিশুরা অবাধ সুষ্ঠুভাবে শিখতে পারবে। আর তাদের শেখানোর জন্য থাকবে উপযুক্ত, সুশিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত, নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন শিশুবান্ধব শিক্ষক। শিক্ষকেরা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা খুঁজে বের করবেন, সেই অনুযায়ী তাদের যথোপযুক্ত শিক্ষা দেবেন। দিকনির্দেশনা দেবে। শৈশবকাল থেকেই শিশুরা শিখবে, কীভাবে যুক্তি দিয়ে ভাবতে হয়। সৃজনশীলতা, তুরীয় চিন্তার (ক্রিটিক্যাল থিংকিং) চর্চা হবে শৈশব থেকেই। ওরা জানবে, পড়ালেখার উদ্দেশ্য হলো সমস্যা সমাধান করতে শেখা। সময় ব্যবস্থাপনা, অর্থ ব্যবস্থাপনা, এগুলোও তারা শিখবে। কীভাবে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হয়, পড়ালেখায় গুরুত্ব পাবে তা-ও।

একটা দেশের সার্বিক উন্নতি বা শান্তি নির্ভর করে সততার ওপর। যে দেশের মানুষ যত সৎ, সে দেশ তত উন্নত ও শান্তিপূর্ণ। হাতে গোনা কয়েকটা লক্ষ্যের মধ্যে যেন শিশুদের জীবনের লক্ষ্য সীমাবদ্ধ না থাকে। বড় বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, টেক জায়ান্ট, দেশ-বিদেশ, আকাশ-মহাকাশ, সব ব্যাপারে তাদের চোখ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। মোটকথা শৈশব কাল থেকে তাদের বাস্তবমুখী, কারিগরি, দক্ষতাভিত্তিক, তথ্যভিত্তিক উন্মুক্ত শিক্ষা দিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দিতে হবে সম্মানজনক বেতন। তাঁরা যেন যত্নসহকারে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত জ্ঞান দিতে পারেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেকোনো কাজে ভালো করার জন্য যোগাযোগের দক্ষতা বা ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ খুব জরুরি। সুতরাং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে এই দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষাজীবনের প্রথম থেকেই আমাদের শেখানো হয়। কিন্তু এক যুগ অধ্যয়ন করার পরও আমরা সে ভাষায় সাবলীল হতে পারি না। তারই ফলে আমরা উচ্চশিক্ষা, চাকরি, গবেষণা, সব জায়গায় পিছিয়ে পড়ি। আর এক যুগ বিদেশি ভাষায় পড়ার পরও সে ভাষায় সাবলীল না হতে পারার মূল কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি। সুতরাং বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য যে কাজগুলো করা দরকার, তা প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শুরু করতে হবে। আমাদের পড়ালেখার বেশির ভাগই মুখস্থ নির্ভর। যার ফলে আমরা নতুন কিছু তৈরির ক্ষেত্রে মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারি না। তাই আমাদের মুখস্থ নির্ভর পড়ালেখার ঘোর থেকে বের হতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন নতুন কিছু তৈরিতে উৎসাহ পায়।

পাঠক, সুযোগ পেলে আপনি লেখাপড়ার কোন নিয়মটা বদলে দিতেন? লিখে পাঠাতে পারেন এই ইমেইলে: [email protected]। নির্বাচিত লেখাগুলো প্রকাশিত হবে প্রথম আলোয়। লেখার সঙ্গে আপনার পুরো নাম, পরিচয়, ফোন নম্বর উল্লেখ করতে হবে। পাঠাতে হবে আপনার ছবি।