ভূমিকম্পের সময় ও আগে-পরে কী করবেন
ভূমিকম্প একটি বহুমাত্রিক বিপর্যয়। এ কারণে ভবনধস, অগ্নিকাণ্ড, রাস্তাঘাট-কালভার্ট-সেতু ভেঙে পড়া, জরুরি সেবা যেমন পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়া, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব, ইন্টারনেট, সাধারণ যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
আর ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ, এখন পর্যন্ত যার কোন পূর্বাভাস দেওয়ার সুযোগ নেই। এর কম্পনের স্থায়িত্ব সাধারণত ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড। এত অল্প সময়ে ভবন থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তবু আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাড়াহুড়ো করে ভবন থেকে নামতে গিয়ে অথবা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হই।
তার চেয়ে বরং আসুন ভূমিকম্পে করণীয়গুলো জেনে নিই—
আগে করণীয়
বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুসরণ করে ভূমিকম্পসহনীয় ভবন নির্মাণ করুন।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের সংযোগ ঝুঁকিমুক্ত কি না, নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
ভূমিকম্প নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিন। প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মহড়া করুন।
বাসায় ও কর্মস্থলে জরুরি সরঞ্জাম, যেমন খাওয়ার পানি, শুকনা খাবার, জরুরি ওষুধ, হেলমেট, বাঁশি ইত্যাদি সংরক্ষণ করুন।
ভূমিকম্পের সময় বাসা বা কর্মস্থলে থাকলে ঠিক কোথায় অবস্থান করবেন, এখন থেকেই তা পরিকল্পনা করে রাখুন।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়
ভবনের ভেতরে থাকলে ‘ড্রপ-কভার-হোল্ড’পদ্ধতি অনুসরণ করুন। সম্ভব হলে মাথা বালিশ, কুশন বা এ–জাতীয় বস্তু দিয়ে ঢেকে রাখুন। নিচু হয়ে শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে শক্ত করে খুঁটি ধরুন। অথবা বিমের নিচে বা কলামের পাশে আশ্রয় নিন।
বারান্দা, ব্যালকনি, জানালা, বুকশেলফ, আলমারি, কাঠের আসবাব বা ঝুলন্ত কোনো ভারী বস্তু থেকে দূরে থাকুন। হাতের কাছে টর্চ, হেলমেট ও বাঁশি সংরক্ষণ করুন, যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
সম্ভব হলে চুলা ও বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করুন।
ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি বা ঝুলন্ত কোনো বস্তু থেকে দূরে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিন।
গাড়িতে থাকলে ব্রিজ, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে ফাঁকা স্থানে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই থাকুন।
পানিতে থাকলে দ্রুত উঠে আসুন।
ভূমিকম্পের পরে করণীয়
বড় ভূমিকম্প হলে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য সব বাহিনী উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করবে। সুতরাং আশাহত ও আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
ভবনের ভেতরে আটকা পড়লে শান্ত থেকে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে। আপনার কাছে থাকা মুঠোফোন, বাঁশি দিয়ে বা শব্দ করে উদ্ধারকারীদের আপনার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিন। উদ্ধারকারীর জন্য অপেক্ষা করুন। চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না।
ফোনের চার্জ সংরক্ষণ করুন। অযথা কল করে চার্জ নষ্ট করবেন না।
যাঁরা আটকা পড়েননি, সঠিক তথ্য দিয়ে ও ভিড় কমিয়ে উদ্ধারকারীদের সহায়তা করুন।
প্রশিক্ষিত না হয়ে কেউ ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে যাবেন না। উদ্ধারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা করুন।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর