জগন্নাথের ব্যান্ডগুলো

ট্রাভেলার্সের মতো ব্যান্ডগুলোই বিশ্ববিদ্যালয় মাতিয়ে রাখে
ছবি: সংগৃহীত

অভিকর্ষ, ট্রাভেলার্স, মনের মানুষ, আবোল-তাবোল, স্বপ্নবাজি...জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা গান ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে এ নামগুলো বড্ড পরিচিত। কারণ এগুলোই ক্যাম্পাসের ব্যান্ড। গানের দলগুলোর জন্ম, বেড়ে ওঠা, খ্যাতি পাওয়া, অনুশীলন—সব এই জগন্নাথ প্রাঙ্গণ ঘিরেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস খুব বড় নয়। তাই সুর আর পরিচিতি আনাচকানাচে পৌঁছে যেতে সময় লাগেনি। বিভাগভিত্তিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন দিবস বা উৎসবে এরাই তো ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখেন। কেউ নামী ব্যান্ডের পরিচিত গানগুলো কভার করেন। কারও কারও নিজস্ব মৌলিক গান আছে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসের চার দেয়াল পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে কয়েকটি ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা।

আরও পড়ুন

এমনই এক গানের দলের সদস্য মাহমুদ হাসানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে গান ভালোবাসি, গানের মধ্যে একটা অন্য রকম শান্তি খুঁজে পাই। এই শান্তির খোঁজেই বিভিন্ন আড্ডায়, অনুষ্ঠানে গিটার নিয়ে বসে পড়তাম। একসময় ভাবলাম, মিলেমিশে কীভাবে সামনে এগোনো যায়? তখন চার বন্ধু মিলে একটা দল গঠন করি। নাম দিই ট্রাভেলার্স।’ ক্যাম্পাসের আড্ডা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে নিয়মিতই পাওয়া যায় ট্রাভেলার্সকে।

ক্যাম্পাসের আয়োজন
ছবি: সংগৃহীত

আরেকটি জনপ্রিয় ব্যান্ডের নাম মনের মানুষ। দলের সদস্য ফতে আলী খান বলেন, ‘নিজেরা, নিজেদের মতো, নিজেদের বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজিয়ে নিজ ক্যাম্পাস গান গাইতাম। দল হওয়ার পর আমরা আমাদের মৌলিক গান নিয়ে কাজ করছি।’ মনের মানুষের দলে বাঁশি বাজান বাদল হোসেন। তাঁর বক্তব্য, ‘একসঙ্গে আড্ডা দিতে দিতেই আমাদের দল হয়ে ওঠা।’

‘স্বপ্নবাজি’ ব্যান্ডের সদস্য ফার্মেসি বিভাগের সুদীপ্ত শেখর জানালেন, ছোটবেলা থেকেই গানবাজনা নিয়ে আগ্রহ। তবে নিজেদের একটা দল হবে, এমনটা ভাবার সাহস হয়নি। ২০১৪ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে হলের জন্য শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন শুরু করে, সেখানে সমবেত কণ্ঠে গান গেয়ে সমর্থন দিয়েছিলেন সুদীপ্তরা। গানের সুরই তখন স্লোগান হয়ে বেজেছিল। সেই থেকে ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ সুদীপ্ত। তিনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর আস্তে আস্তে একটা সার্কেল হয়ে উঠল। একসঙ্গে আড্ডা, গান, খাওয়াদাওয়া, হইহুল্লোড়, সে এক দারুণ সময়। কিন্তু মনের মধ্যে তা-ও নিজেদের একটা দল হওয়ার স্বপ্নটা থেকেই যাচ্ছিল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমাদের স্বপ্নবাজির যাত্রা শুরু। যত দিন মানুষ গান শুনতে চাইবে, আমরা তত দিন শোনাব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যারা সংস্কৃতি চর্চা করে, তার জন্য নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেন তারা নির্ধারিত সময়ের পরও অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমদাদুল হক বলেন, ‘বাইরে থেকে শিল্পী এনে অনুষ্ঠান করার চেয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীদের দলগুলোকে আমরা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে তাদের জন্য বিশেষ পর্ব থাকে। সংস্কৃতিচর্চার সুবিধার্থে ক্যাম্পাসে আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি। কমিটি নীতিমালা গঠন করছে। ব্যান্ডগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক চেষ্টা থাকে সব সময়।’