একসঙ্গে কেদারকান্তে

স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়—শিক্ষাজীবনের একেকটা ধাপ। নতুন নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়। তবে একই বন্ধুর সঙ্গে জীবনের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করার অভিজ্ঞতাও কারও কারও আছে। তাঁদের বন্ধুত্বটা কেমন? এই বিষয়েই পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। আজ আগস্ট মাসের প্রথম রোববার, বন্ধু দিবসে পাঠকের লেখা নিয়ে বিশেষ আয়োজন।

দুই বন্ধু পড়ছেন বুয়েটে

আহমেদ সাবুল মাসানি তার নাম। নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষকই ভুল করে ফেলতেন। ক্লাসে তখন হাসাহাসি হতো। একদিন এক স্যার ওর নাম উচ্চারণ করল—‘মাছ-আনি’। এরপর থেকে শুরু হয়ে গেল। যে মাছ আনে, তাকে মাসানি বলে!

এই আহমেদ সাবুল মাসানির সঙ্গেই কেটেছে আমার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। আইডিয়াল স্কুল থেকে আমাদের পরিচয়। স্কুল ও কোচিং, দুই জায়গা থেকেই ওর বাসা কাছাকাছি ছিল। সে সুবাদে প্রায়ই ক্লাসের ফাঁকে ওর বাসায় যাওয়া হতো। বন্ধুত্বের শুরু সেখান থেকেই। কোচিংয়ের ফাঁকে আমরা মাঠে খেলাধুলা করতাম। মাঠটাও ওর বাসার পাশে ছিল। কোনো কোচিং ক্লাস বাতিল হলে আমরা এক দৌড়ে ছুটে যেতাম ওর বাসায়। খেলার সরঞ্জামাদি নিয়ে দৌড় দিতাম মাঠে।

আরও পড়ুন

এরপর শুরু হলো কলেজজীবন। দুজনেই নটর ডেম কলেজে পড়ার সুযোগ পেলাম। নটর ডেমে তখন ইংরেজি ভার্সনের একটিমাত্র শাখা। আমরা দুজনই ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থী ছিলাম। তাই আমরা আবারও ক্লাসমেট হলাম। কলেজজীবনের গণ্ডি পেরিয়ে শরু হলো কঠিন ভর্তিযুদ্ধ। এরপর এল সেই স্বপ্নপূরণের দিন। জানতে পারলাম শুধু আমি নই, আমার প্রিয় বন্ধুটিও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো, আমরা একই বিভাগেই ভর্তি হয়ে গেলাম। তবে সেকশন আলাদা। আসলে বুয়েটে এসেই আমরা বেশি স্মৃতি জমিয়েছি। একসঙ্গে ট্যুর, ক্যাম্পাসে আড্ডা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, রাতবিরাতে তীব্র ক্ষুধা পেটে নিয়ে পুরান ঢাকা চষে বেড়ানো—সবই হয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো দেশে-বিদেশে একাধিক ট্যুর। দেশে আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি বান্দরবানের কেওক্রাডাং, তাজিংডং, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, সিলেট, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন। ভারত আর ভুটানেও গেছি একসঙ্গে।

ভারতে আমরা ১৭ দিনের একটি ট্যুর দিই। সেবারই আমরা কেদারকান্ত পর্বত জয় করি। এটা আমাদের জীবনে একটা বিশাল মাইলফলক হয়ে থাকবে। সেখানে মাইনাস ২৬ ডিগ্রিরও নিচে নেমে যেত তাপমাত্রা। হিমালয়ের সে বছর অতিরিক্ত তুষারপাত হয়েছিল। তাই এটি আমাদের দুজনের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা। কিন্তু সেই প্রতিকূলতার মধ্যেও বন্ধুদের সঙ্গ আর উৎসাহ পথ পাড়ি দেওয়াটাকে সহজ করে দেয়। আর ট্রেকিংয়ের এই প্রতিকূলতাই আমার এবং মাসানির মধ্যকার পারস্পরিক ভরসাকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে।

বন্ধু দিবসে আমার এই প্রিয় বন্ধুকে জানাই শুভেচ্ছা।