হলজীবনের সবুজ বন্ধু

বেশির ভাগ গাছই শোভা পায় অব্যবহৃত পাত্র বা প্লাস্টিকের বোতলে
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেও একটু প্রশান্তি খুঁজতে অনেক আবাসিক শিক্ষার্থীই হলে নিজের রুমের পাশে বাগান করেন। ক্যাকটাস, অ্যালোভেরা, মানিপ্ল্যান্ট, কয়েনপ্ল্যান্ট, নয়নতারা, পাথরকুচি, অপরাজিতা—হলগুলোয় ঢুঁ মারলে নানা রকম গাছের দেখা আপনি পাবেন। যেসব গাছের জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না, সেগুলোই প্রাধান্য পায় বেশি। বেশির ভাগ গাছই শোভা পায় অব্যবহৃত পাত্র বা প্লাস্টিকের বোতলে। অল্প আলোয় এই গাছগুলো বেঁচে থাকতে পারে বলে পড়ার টেবিল, শেলফ বা বারান্দায় রাখা যায় অনায়াসে। একদিকে ঘর বা বারান্দা পায় সবুজের ছোঁয়া, তেমনি মনটাও ভালো করে দেয় এসব গাছ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্‌শ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। ক্যাম্পাসে আসার পর প্রায় পাঁচ বছর ধরে গাছ লাগাচ্ছেন তিনি। ২০১৮ সালে হলে ওঠার পর সিনিয়র ভাইয়ের কাছ থেকে দুটি গাছ পেয়েছিলেন। তারপর একে একে নিজের রুমের বারান্দায় লাগিয়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

আরও পড়ুন

এখন তাঁর বারান্দায় শোভা পাচ্ছে ৫০ প্রজাতির প্রায় ৭০টি গাছ। কিন্তু যখন পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবেন, তখন গাছগুলোর কী হবে? আবিদ বলেন, ‘গাছগুলো নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে অনেকেই বলে রেখেছে। আমার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিন থেকে চারজন বাগান করেছে, তাদের বাগানের বড় একটা অংশ আমার হাতে করা বা আমার থেকে গাছ নিয়ে করা। ইচ্ছা আছে, যাওয়ার আগে আমার প্রিয় কয়েকটা গাছ কয়েকজন প্রিয় মানুষকে উপহার দেব। ২-১টা হয়তো সঙ্গে নিয়ে যাব। আর বাকি গাছগুলো ৩১৯/বি, মাদার বখ্‌শ হল—এই ঠিকানায় থাকবে। আমার পর যে আমার সিটে আসবে, আমি চাইব সে যেন গাছগুলো যত্ন নেয়, সংখ্যায় আরও বাড়ায়। আবার কোনো দিন যখন ক্যাম্পাসে আসব, আমার প্রিয় ঠিকানায় এই প্রিয় বাগানটাকেই আমি সবচেয়ে বেশি দেখতে চাইব।’

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাদিয়া আফরিন। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ভেটেরিনারি হাসপাতালে ইন্টার্নি ডাক্তার হিসেবে কর্মরত। গাছ ভালোবাসেন। তাই ক্যাম্পাসে থাকাকালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলে নিজ রুমের বারান্দায় বিভিন্ন ফুলগাছ ছাড়াও ইঞ্চিলতা, মানিপ্ল্যান্ট, যেব্রিনা, ক্যাকটাস, অ্যালোভেরা—নানা কিছু দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন বাগান। এমনকি পড়ার টেবিলের ওপর ইনডোর প্ল্যান্টও রাখতেন তিনি। ক্যাম্পাস থেকে চলে আসার সময় কিছু গাছ অন্যদের দিয়েছেন, বাকিগুলো সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। নাদিয়া বলেন, ‘যেখানেই যাই, সঙ্গে গাছ থাকে। গাছ লাগাতে, পরিচর্যা করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে যখন একা থাকি, গাছের সঙ্গে কথাও বলি।’

আরও পড়ুন

জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থী আবিদা সুলতানাও গাছের সঙ্গে কথা বলেন কি না, জানা হয়নি। তবে ক্যাম্পাসে শখের বশে বাগান করেছিলেন তিনিও। আবিদা বলেন, ‘গাছ লাগানো আমার নেশার মতো। একটা গাছ লাগানোর পর যখন প্রথম ফুল আসে, মনে হয় নিজেরই একটা বাচ্চা। দেখে খুব ভালো লাগা কাজ করে। বিকেলে গাছের পাশে বসে চা খেতে গেলে সারা দিনের সব ক্লান্তি, অবসাদ চলে যায়।’ উদ্ভিদবিজ্ঞানে পড়ার সুবাদে আবিদার গাছপ্রীতি আরও বেড়েছে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রঙের পর্তুলিকা, রাইবেলি, ডায়ান্থাস, কাঁটামুকুট, চন্দ্রমল্লিকা, ক্যাকটাস, কসমস, রেইন লিলি ইত্যাদি গাছ লাগিয়েছেন। পড়াশোনা শেষে ক্যাম্পাস থেকে চলে আসার সময় কিছু গাছ অন্যদের দিয়ে এসেছেন। বাকিগুলো এখনো হলেই আছে। আবিদা জানান, রুমে এখন যে মেয়েরা থাকেন, তাঁরাই গাছগুলোর যত্ন নেন।