জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য কীভাবে ঘরে বসে সংশোধন করব

জাতীয় পরিচয়পত্র
প্রতীকী ছবি

ভোট দেওয়া ছাড়াও পাসপোর্ট তৈরি ও নবায়ন, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, চাকরির আবেদন, বিমা স্কিমে অংশগ্রহণ, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, এমন বহু কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) প্রয়োজন পড়ে। সেই এনআইডিতে যদি তথ্যগত ভুল থাকে, তাহলে তো পদে পদে ঝামেলা। কারও হয়তো নিজের নামের বানান ভুল, কারও জন্মতারিখে গরমিল। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করতে গিয়েও সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকে এখানে-ওখানে ঘুরপাক খান। কেউ পড়েন দালালের খপ্পরে।
তবে সরকার কিন্তু বলছে, নির্ধারিত ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকে আপনি এনআইডির তথ্য সংশোধন করতে পারবেন। কীভাবে? চলুন, বিস্তারিত জানা যাক।  

ধাপ ১: অ্যাপ ডাউনলোড ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ছবি

ঘরে বসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে গেলে শুরুতে অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে একটি অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। NID WALLET নামের এই অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরে পেয়ে যাবেন। শুরুতে অ্যাপটি ডাউনলোড করে মুঠোফোনে ইনস্টল করে নিন।

আরও পড়ুন

আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় প্রমাণগুলো স্ক্যান করে বা ছবি তুলে নির্দিষ্ট সাইজের মধ্যে ক্রপ করে নেওয়া ভালো। পরে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য ছবিগুলোর নামকরণ করে রাখতে পারেন।

ধাপ ২: অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন

সংশোধনের ওয়েবসাইটে ঢুকতেই আপনি ‘রেজিস্ট্রেশন করুন’ নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলে শুরুতে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে। এরপর প্রয়োজন হবে বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা। এই ধাপে আপনার মুঠোফোন নম্বর ‘ভ্যারিফাই’ করতে হবে। চাইলে আপনি আপনার মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তনও করতে পারবেন।  মুঠোফোন নম্বর দেওয়ার পর সেই নম্বরে একটি কোড নম্বর পাঠানো হবে। কোডটি সাবমিট করে আপনি আপনার মুঠোফোন নম্বরটি ভ্যারিফাই করতে পারবেন। পরের ধাপে আগেই ডাউনলোড করে রাখা অ্যাপটি প্রয়োজন হবে। অ্যাপ ওপেন করে আপনার মুখমণ্ডল ‘ভ্যারিফিকেশন’ করতে হবে। ভ্যারিফিকেশন সম্পন্ন হলে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারবেন।

ধাপ ৩:  প্রয়োজনীয় তথ্য সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্রের অ্যাকাউন্টে লগইন করার পর প্রোফাইল, রিইস্যু, ডাউনলোড—তিনটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে প্রোফাইল অপশনটি নির্বাচন করুন, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো রয়েছে। তথ্যগুলো সংশোধন করতে ‘এডিট করুন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এই পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সব তথ্য আপনার সামনে দেখানো হবে। আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করতে চান, সেটি সংশোধন করে পরের ধাপে যান। এই পর্যায়ে আপনাকে আগের তথ্য ও সংশোধিত তথ্য দেখানো হবে। সব ঠিক থাকলে আবারও ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন। এই ধাপে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য ফি প্রদান করতে হবে।

ধাপ ৪:  ফি প্রদান

ভুল তথ্যের ধরন অনুযায়ী আপনাকে ফি দিতে হবে। নাম সংশোধন ফি ভ্যাটসহ ২৩০ টাকা এবং অন্যান্য তথ্য সংশোধন ফি ১১৫ টাকা। উভয় তথ্য সংশোধন ফি ভ্যাটসহ ৩৪৫ টাকা, রিইস্যু আবেদন ফি ৩৪৫ টাকা এবং জরুরি ‍রিইস্যুর জন্য ৫৭৫ টাকা দিতে হবে। ব্যাংক বা অনলাইনের মাধ্যমে আপনি ফি দিতে পারবেন।

ধাপ ৫: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা

ফি প্রদানের পর ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করলে দুটি অপশন দেখতে পাবেন। একটি হচ্ছে আপনার আবেদনের ধরন, আরেকটি হলো বিতরণের ধরন। আপনার জন্য সঠিক অপশনটি নির্বাচন করে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন। এ ধাপে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আপনি পাবলিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, জন্মনিবন্ধন সনদপত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিভিন্ন রকমের ডকুমেন্ট আপলোড করতে পারবেন। তবে একাধিক ডকুমেন্ট সাবমিট করতে পারলে ভালো। এখানে আপনি যে ডকুমেন্ট জমা দিতে চান, সেটি সিলেক্ট করে আগে থেকে স্ক্যান বা ছবি তুলে রাখা ডকুমেন্টটি নির্বাচন করুন। এভাবে সব ডকুমেন্ট আপলোড হয়ে গেলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর আপনার প্রোফাইল পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আপনার আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন, যা পরবর্তী সময়ে আপনার কাজে আসতে পারে।
এরপর আপনার কাজ শুধুই অপেক্ষা। পরবর্তী সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে আপনার মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার সংশোধনের আবেদনের আপডেট। এসএমএস পাওয়ার পর আপনার আবেদনপত্র, পুরোনো পরিচয়পত্র নিয়ে গিয়ে নির্বাচন অফিস থেকে আপনার সংশোধিত পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।