পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম সাজ্জাদ, বললেন—কঠিন কিছু মনে হয়নি

সাজ্জাদ হোসাইন
ছবি: সংগৃহীত

৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশের দিন অফিসেই ছিলেন সাজ্জাদ হোসাইন। নিজ কর্মস্থল সোনালী ব্যাংকে। শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না, মাথাব্যথা ও সর্দি-জ্বর। সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিসিএসের ফল নিয়ে অস্থিরতা। তাই একটু আগেভাগেই বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন কখন ফল পাবেন। সন্ধ্যা সাতটার পর সাজ্জাদের হাতে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ফল, প্রথমে নন-ক্যাডার তালিকায় নজর দেন। স্ত্রীকে বলেন, ‘আমার রোল নম্বরটা নিয়ে তুমিই দেখো, আমি আর দেখব না।’

স্ত্রী প্রথমে প্রশাসন ক্যাডারে দেখেন, এরপর পরিবার পরিকল্পনা। সবার শেষে নজর দেন পররাষ্ট্রে। এখানেই চমক! তালিকায় সবার ওপরে থাকা রোল নম্বরটি যে সাজ্জাদের!
সাজ্জাদ বলেন, ‘যদিও পররাষ্ট্র আমার প্রথম পছন্দ ছিল। কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এটা পাব। সে কারণে প্রথমেই পররাষ্ট্র ক্যাডারের দিকে যাচ্ছিলাম না। হঠাৎ শারমিন (স্ত্রী) আমাকে বলে, “তোমার রোল নম্বরটা যেন কত?” আমি রোল নম্বর বললাম। শারমিন কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমি ফার্স্ট হয়ে গেছ! পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছ।” আমি নিজেও কেঁদে ফেলেছি। পুরোটা সময় হতবিহ্বল ছিলাম।’

সাজ্জাদ হোসাইন পড়ালেখা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই টিউশনি করাতেন। চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি, বাংলা থেকে ইংরেজি, গণিত—সবই পড়াতেন তিনি। কথায় কথায় জানালেন, ‘আমি প্রচুর টিউশনি করাতাম। যার কারণে মানুষের কাছে যেসব কঠিন লাগে যেমন গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি— ওইগুলোয় ভালো দখল ছিল। বিসিএস প্রস্তুতির সময় যখন সিলেবাস দেখি, সত্যি বলতে মনে হয়নি কঠিন কিছু। কোচিংয়ের পরীক্ষাগুলোয় সব সময় প্রথম দিকেই থাকতাম। তবে প্রতিযোগিতা ছিল। অনেক খেটেছি। যতটুকু দরকার তার চেয়ে বেশিই পরিশ্রম করেছি।’

পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন সাজ্জাদ হোসাইন
ছবি: সংগৃহীত

এবারই প্রথমবারের মতো বিসিএসে অংশ নিয়েছিলেন সাজ্জাদ। প্রথমবারেই করলেন বাজিমাত। প্রস্তুতির মধ্যে কোনো কৌশল ছিল কি না? সাজ্জাদ বলেন, ‘সাধারণ জ্ঞান নিয়ে একটু ভয় কাজ করত। এই জিনিসটা আগে কখনোই পড়িনি। রিটেনে গিয়ে সাধারণ জ্ঞানের জন্য নোটখাতা বানাই। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক দুই বিষয়ের জন্যই। নোট খাতাগুলো আমাকে অল্প সময়ে প্রস্তুতি নিতে অনেক সাহায্য করেছে।’

সফলতার পেছনে মা ও ভাইয়ের অবদানের কথা স্মরণ করলেন সাজ্জাদ। বললেন, ‘বাবা ছিল না। বড় ভাই আমাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। তাঁর স্ট্রাগল ছিল অনেক বেশি। আমার মা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। একেবারে ছোট ছেলেকে কেউ শহরে পাঠায় না। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে, পড়ালেখার জন্য আমাকে শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মা সারাক্ষণই কান্নাকাটি করত। আমার মনে পড়ে, প্রতিবার শহরের বাসে তুলে দিয়ে মায়ের সে কী কান্না! হেলপারের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করত, তার ছেলেকে যেন ঠিক জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম প্রথম আমিও কান্নাকাটি করতাম। মা-বাবার থেকে এত দূরে এসে থাকা, ষষ্ঠ শ্রেণির একটা বাচ্চার জন্য অনেক কঠিন।’
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুঁটিবিলা ইউনিয়নের এক অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম সাজ্জাদের। অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গে কোনো ব্যক্তির কথা নয়, বরং বললেন, ‘কীভাবে পরিবার ও এলাকাবাসীর জন্য কিছু করব, এটাই সব সময় মাথায় আসত। সে জন্য ছোটবেলায় ডাক্তার হতে চাইতাম, ডাক্তার হতে পারিনি। প্রকৌশলে ভর্তি হয়েও প্রকৌশলী হওয়া হলো না। একমাত্র বোধ হয় বিসিএসের মাধ্যমেই আমার ইচ্ছাটা পূরণ করা সম্ভব।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন