জীবন এখন চলছে বিশ্বকাপের তালে তালে

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জেঁকে বসেছে বিশ্বকাপ।

আগামি কয়েকদিন জীবন চলবে বিশ্বকাপের তালে তালেমডেল: লাবন্য, হৃদয়, মিলা ও বাপ্পা, পোশাক: লা রিভ ও জার্সি ফ্রিক বিডি, স্থান কৃতজ্ঞতা: রেইনি রুফ রেস্টুরেন্ট, ছবি: সুমন ইউসুফ

‘ব্রাজিল পেঁপে, ব্রাজিল পেঁপে!’

কারওয়ান বাজারের রাস্তায় হাঁক শুনে থমকে দাঁড়াতে হলো। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে পেঁপে বিক্রেতার দিকে তাকালাম। হেসে তিনি একখানা পেঁপে হাতে তুলে দেখালেন। আধপাকা পেঁপের গায়ে সবুজ-হলুদ রং। ‘ব্রাজিল পেঁপে’ই বটে!

শীতপোশাকে বিশ্বকাপের নকশাা
ছবি: সুমন ইউসুফ

আর্জেন্টাইন সমর্থকেরাই–বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? পেঁপে বিক্রেতার কথার জবাবে তাঁরা হয়তো গাইবেন বাপ্পা মজুমদার ও ফাহমিদা নবীর গান, ‘আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছ না?’

নীল আকাশ থেকে শুরু করে সবুজ সবজির বাজার, সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে বিশ্বকাপের আমেজ। দূর থেকে শহরের যেকোনো ভিড়ের দিকে তাকালে অন্তত দু-চারজনের পরনে জার্সি তো চোখে পড়বেই। শীত জেঁকে বসার আগেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জেঁকে বসেছে বিশ্বকাপ।

রেস্তোরাঁগুলোতে এখন খাবারের সঙ্গে ‘গরম-গরম খেলা’ও পরিবেশন করা হচ্ছে। গুলশান-বনানীর দামি কফি শপ থেকে শুরু করে অজপাড়াগাঁয়ের টংদোকানগুলোতেও একই চিত্র পাবেন—কেউ টিভিতে, কেউবা প্রজেক্টর লাগিয়ে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। স্রেফ বিশ্বকাপের জন্যই মধ্যরাত পর্যন্তও খোলা থাকছে অনেক রেস্তোরাঁ। দলেবলে গুড়ো থেকে বুড়োরা ভিড় করছেন সেখানে।

বাড়ির ছাদে লাগানো হচ্ছে প্রিয় দেশের পতাকা
ছবি: সুমন ইউসুফ

নানা দেশের ছোট–বড় পতাকায় সেজেছে সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি করপোরেট অফিসও। স্যুট-বুট যে অফিসের অলিখিত ‘ইউনিফর্ম’, সেখানেও ইদানীং ঢোলাঢালা জার্সি পরে হাজির হওয়া যাচ্ছে। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ চলছে বলেই এই বিশেষ ছাড়।

আর ফ্যাশন হাউসগুলো? সেখানে ছাড়ের কী খবর? লা রিভ যেমন বিক্রি করছে বিভিন্ন দলের লোগো বসানো টি–শার্ট, ক্যাপ, মাফলার। এই সংগ্রহকে নাম দিয়েছে তারা ফিফা ভাইবস। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ছাড়ে পণ্যগুলো বিক্রি হবে। সমর্থকদের জন্য জেন্টেল পার্ক বিক্রি করছে পোলো টি–শার্ট। অনলাইন শপগুলোও বিশ্বকাপ মাথায় রেখে এনেছে নানা পণ্য।

সানগ্লাসেও বিশ্বকাপের নকশা
অনুষঙ্গ: জার্সি ফ্রিক বিডি

পছন্দের ফুটবলারের চুলের কাটে ভক্তরা নিজেদের চুল ছাঁটছেন। বাড়িতে বাড়িতে এখন উড়ছে আর্জেন্টিনা, জার্মানি কিংবা ব্রাজিলের পতাকা। একসঙ্গে বসে সবাই খেলা দেখবে, এ কারণে টিভি দেখার জায়গার সোফা সরিয়ে অন্দরসজ্জাতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। আগামী কয়েক দিন এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

জার্সি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জার্সি ফ্রিক বিডির ম্যানেজিং পার্টনার ইমরান হোসেনের সঙ্গে কথা হলো। জানালেন, ৭৯০ টাকায় ফ্যান এডিশন জার্সি, আর ১ হাজার ১৫০ টাকায় প্লেয়ার এডিশন বিক্রি করছেন তাঁরা। বললেন, ‘বিভিন্ন দলের সমর্থকদের জন্য জার্সি ছাড়াও আমরা ফুটবল, সানগ্লাস, পরচুলা, মাফলার বিক্রি করছি। এবার মাফলারের বিক্রি বেশ ভালো।’

সবাইকে একই সুরে গেঁথে ফেলেছে বিশ্বকাপ
ছবি: সুমন ইউসুফ

আমানত শাহ লুঙ্গি বাজারে এনেছে ‘জার্সি ডিজাইনের লুঙ্গি’। লুঙ্গিতে সাদা-নীল, হলুদ, লালের আধিপত্য দেখতে বেশ লাগছে। এ নিয়ে ফেসবুকে রঙ্গরসিকতাও হচ্ছে বেশ। কয়দিন আগে যেমন চোখে পড়ল, একজন লিখেছেন, ‘প্রিয় দলের জার্সি পরে অফিসে গিয়েছিলাম। দল হেরেছে বলে জার্সি খুলে বাসায় ফিরেছি। লুঙ্গি পরার রিস্ক নেওয়া যাবে না!’

বিশ্বকাপ নিয়ে এসব হাসি-তামাশা, রঙ্গরসিকতা, ফ্যাশন-ফিউশন তো চলবেই। সঙ্গে জমবে তর্ক-বিতর্ক। এসবের মধ্যে উদ্‌যাপনটাই মুখ্য। কারণ, যার দল যা-ই হোক, দিন শেষে ফুটবলের সমর্থক সবাই।