আমাদের কোনো ভাই নেই, বাবার সম্পত্তি কীভাবে পেতে পারি?

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমরা তিন বোন, কোনো ভাই নেই। আমার বাবার বয়স প্রায় আশি বছর। বাবার বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে চাচার ছেলেরা আমার বাবার সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। শুনেছি, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কারও পুত্রসন্তান না থাকলে মৃত্যুর পর তাঁর ভাইয়ের ছেলেরা সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন, এটা কতটুকু সত্য? আমার বাবা যদি সব সম্পত্তি আমাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে কী করতে হবে, আইনগতভাবে কি সেটা সম্ভব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বাড্ডা, ঢাকা

উত্তর: যেহেতু আপনাদের কোনো ভাই নেই, তাই আপনার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে আপনার চাচাতো ভাইয়েরা আপনার বাবার সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বাবা যদি তাঁর সব সম্পত্তি আপনাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর জীবিত অবস্থায় আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে হস্তান্তর করে দিতে হবে। দান করার সঙ্গে সঙ্গে ওই সম্পত্তি হস্তান্তরও করতে হবে।

হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্তসম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, মা–বাবা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে নাতি-নাতনি ও নাতি-নাতনি থেকে নানা-নানি সম্পর্কের মধ্যে নামমাত্র ১০০ টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে।

দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়ে থাকে। কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে গ্রহণ করাকে দান বলা হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপিঅ্যাক্ট)–এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাঁকে দান বলা হয়। দান বা হেবা বৈধ হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়—

• দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান।

• গ্রহীতার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা।

• দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান।

একবার সম্পত্তি দান বা হেবা করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর করা না হলে, কিছু ক্ষেত্রে তা বাতিল হতে পারে। হেবা করার পদ্ধতি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দান যেকোনো ধর্মের লোকেরাই করতে পারেন। দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। প্রতিটি হেবা দান দলিলের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আপনার বাবা যদি জীবিত থাকা অবস্থায় আপনার, আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান, তাহলে তিনি হেবা দলিল সম্পাদন এবং রেজিষ্ট্রি করে তা করতে পারেন। অন্যান্য উত্তরাধিকাররা এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করতে পারবে না।

পাঠকের প্রশ্ন পাঠাবেন যেভাবে

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA