সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেভাবে ‘ভার্চ্যুয়াল ভালোবাসা’কে জনপ্রিয় করে তুলছে

প্রায়শই অনলাইনের ভালোবাসা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ‘অফলাইনের সম্পর্ক’কেছবি: পেক্সেলস ডটকম
বিশ্বের প্রতি তিনজনের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ২৫০ কোটির বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় আছেন। তাঁরা সমাজে যে ভূমিকা পালন করছেন, সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে। এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের সমাজকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করছে। কিন্তু সমাজের বাইরে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে—এই নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। সেখান থেকেই পাঁচটি প্রভাব নিয়ে ‘ফাইভ ক্রেজি ওয়েজ সোশ্যাল মিডিয়া ইজ চেঞ্জিং ইয়োর ব্রেন রাইট নাউ’ শিরোনামে জানিয়েছে এএসএপি সায়েন্স নামে জনপ্রিয় ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম।

১. শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি হয়তো পাঁচ মিনিটের জন্য ঢুঁ দিতে গিয়েছিলেন। মাঝখানে দুই ঘণ্টা হাওয়া। এই দুই ঘণ্টার কোনো হিসাব নেই। কেন এ রকম হয়? নিউরোলজিস্টরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ক্রমাগত ‘নিউরোলজিক্যাল এক্সাইটমেন্ট’–এর ভেতর দিয়ে যান। এটা ছোট পরিসরে অনেকটা ড্রাগের মতো প্রভাব ফেলে। আর অনেক অল্প সময়ে নানান তথ্য পেতে থাকায় আমাদের মস্তিষ্ক কোনোটাকেই ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। ফলে দুই ঘণ্টা ধরে আপনি কী কী দেখলেন, কেমন লাগল, জানতে চাইলে আপনার বিশেষ কিছু বলার থাকে না।

২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটা ‘মাল্টিটাস্কিং’ প্ল্যাটফর্ম। আপনি হয়তো ইউটিউবে একটা গান ছেড়ে দিয়ে অঙ্ক করতে বসেছেন বা ফেসবুক চালাতে চালাতে গল্প করছেন। এতে আপনার মনোযোগের ক্ষেত্র বিভক্ত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে আপনার কাজের ফোকাস কমতে থাকে। অস্থিরতা বাড়ে। দেখা গেছে, ৮৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী সপ্তাহে অন্তত একবার ভাইব্রেশন বা ফোনকলের আওয়াজ পান, যখন ফোন ভাইব্রেট করেনি বা কোনো ফোনকলও আসেনি। এটাকে বলা হয় ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম।

৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ডোপামিন নিঃসরণে সহায়তা করে। যৌনানন্দ হলে, মোটিভেটেড হলে বা প্রেমে পড়লে যে ধরনের অনুভূতি হয়, অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও আপনাকে সেই অনুভূতি দিতে সক্ষম। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হওয়া খুবই সহজ। আর সেই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন।

৪. আপনি যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করেন, তখন শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে আপনি নিজের কথা বলেন, নিজের মন্তব্য ছড়িয়ে দেন। অন্যের কথা শুনতে চান না। অথচ আমরা যখন মুখোমুখি দুটো মানুষ কথা বলি, তখন নিজের কথা বলি শতকরা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ। অর্থাৎ নিজের কথা বলা আর অন্যের কথা শোনার মধ্যে ভারসাম্য থাকে। এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে।

৫. প্রেম করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ও বিভিন্ন ডেটিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, যাঁকে কখনো দেখেননি, যাঁর সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না, এমন ‘অপিরিচিত’ (অ্যানোনাইমাস) ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে তাঁদের ভালো লাগে। যখনই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বা পরিচিত হয়ে যান, তখন আগের ‘চার্ম’ বা ‘মোহ’ হারিয়ে ফেলেন। ব্যবহারকারীদের ওপর এমন গবেষণার পর এমন অনেক ডেটিং অ্যাপ বের হয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা সব সময়ই ‘অজ্ঞাত’ থাকবেন। এ রকম ‘হিডেন কোম্পানি’ও আছে যাদের কর্মীদের কাজ কেবল নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে প্রেমিক বা প্রেমিকার মতো করে কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া। ব্যবহারকারীরা অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। ভারতেও এই ধরনের অ্যাপ তুমুল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যক্তিকে সামাজিক সম্পর্কবিমুখ করছে। ‘অফলাইন’ সম্পর্ক থেকে ‘অনলাইন ভার্চ্যুয়াল ভালোবাসা’র সম্পর্ককে বেশি জনপ্রিয় করে তুলছে।