কাজের লোকের সামনেও স্ত্রী আমার গায়ে হাত তোলে

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ব্যরিস্টার মিতি সানজানা

প্রশ্ন: চার বছর হয় আমার বিয়ে হয়েছে। প্রথম প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালোই ছিল। ধীরে ধীরে তাঁর আসল রূপ প্রকাশ পেতে শুরু করে। তাঁর প্রচণ্ড বদমেজাজ এবং উগ্র আচরণ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। রাগ করলে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে, আমার ওপর আক্রমণ করতেও সে পিছপা হয় না। রাগ করে অনেকবার আমার গায়ে হাত তুলেছে আমার স্ত্রী। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সে আমার সঙ্গে ঝগড়া করে। সম্প্রতি আমি তাকে জানিয়েছি যে আমার সঙ্গে থাকতে হলে তাকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে এবং নিজেকে সংশোধন না করলে তাকে আমি তালাক দেব।

এসব বলার পর কিছুদিন সে ভালো থাকে। আমার কাছে কান্নাকাটি করে মাফ চায়, কিন্তু কিছুদিন পর আবারও সেই একই পরিস্থিতি তৈরি করে। বাসায় কাজের লোকের সামনে আমার গায়ে সে হাত তুলেছে। তাকে থামাতে গেলে বলে আমি তাকে শারীরিক নির্যাতন করি। কোনোভাবেই আমি আর স্ত্রীর অত্যাচার সহ্য করতে পারছি না। এসব কথা আমার মা–বাবাও জানেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তাঁরাও সবকিছু মেনে নিয়েছেন। বেশ কয়েকবার আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু সে কখনোই সংশোধন হবে না। তার রাগ–জেদ তার কাছে আমার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দিন দিন তার উগ্রতা বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমি আর কোনোভাবেই স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে চাইছি না। আইনসংগতভাবে তার যা প্রাপ্য, সব আমি তাকে দিতে রাজি। কিন্তু আমি আমার স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি চাই। সে তার মতো ভালো থাকুক। দয়া করে আইনি সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।

আরও পড়ুন

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। পারিবারিক বা সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে, কোনো কলহ-বিবাদ তৈরির আশঙ্কা কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতদানের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করে, তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। চাইলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন।

তবে আপনি যেহেতু সম্পর্কটি থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন এবং কোনো ঝামেলা চাচ্ছেন না, সে ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদই আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান।

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, ‘কেউ তালাক দিতে চাইলে তাকে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বাস করছেন সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে।’ প্রশ্ন উঠতে পারে তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, ‘তখনই/পরবর্তী সময়ে/যথাশিগগির সম্ভব।’ নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডিসহ (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) পাঠালে ভালো হয়।

চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করতে হবে এবং সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।

যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তালাক কার্যকরের পর যে কাজির মাধ্যমে নোটিশটি করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক।

এ বিষয়ে অবশ্যই একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন। আগে মোহরানা দেওয়া না হলে পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া যদি স্ত্রীকে আগে কোনো ভরণপোষণ না দেওয়া হয়, এ বকেয়া ভরণপোষণসহ ইদ্দতকালীন (তালাকের নোটিশ প্রদান থেকে তালাক কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়) ভরণপোষণও প্রদান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আশা করি, আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।