জাপানের সাকুরা পিএইচডি করছেন বাংলা ভাষা নিয়ে

জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজে পিএইচডি করছেন সাকুরা ইশিকাওয়া। তাঁর গবেষণার বিষয় বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। সেই কাজেই দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে এলে তাঁর সাক্ষাৎকার নেন সজীব মিয়া

সাকুরা ইশিকাওয়া
ছবি: কবির হোসেন

ঢাকা কেমন লাগছে?

খুব ভালো লাগছে। ঢাকার যানজট নিয়ে বন্ধুদের কাছে যেমনটা শুনেছি, তেমনটা তো দেখছি না। তার চেয়েও বড় কথা, এত বাংলাভাষী মানুষের দেখা আগে কোথাও পাইনি।

বাংলাদেশে কি এবারই প্রথম এলেন?

হ্যাঁ, অবশেষে।

অবশেষে কেন?

তার কারণ, আমি বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছি ২০১৫ সালে। তখন আমি টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজে হিন্দি বিভাগে অনার্সে পড়ি। অনার্সের বিষয় হিন্দি হলেও বাংলা নিয়েও কম আগ্রহী ছিলাম না। সে বছরই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ভারতের কলকাতায় গেলাম। দুই মাসে বাংলা ও হিন্দির চর্চা ভালোই হলো। তারপর বিদেশে পড়ার অংশ হিসেবে আবার যাই ভারতে। কলকাতা ও দিল্লিতে থেকেছি এক বছর। তখন থেকেই বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা। সেটা সম্ভব হলো এত দিন পর। এ জন্যই বললাম, অবশেষে।

এবারের সফর সম্পর্ক কিছু বলুন...

ভাষাতত্ত্বে মাস্টার্স শেষ করে এখন আমি পিএইচডি করছি। আমার গবেষণার বিষয় বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও লিঙ্গুইস্টিক টাইপোলজি। এবারের প্রকল্পে আমরা মোশন ভার্ব নিয়ে কাজ করছি। কোনো বাক্য বলার সময় কোন ভাষায় মোশন ভার্ব কীভাবে প্রকাশ পায়, সেটিই দেখা হবে এই প্রকল্পে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজটি করছি। আমরা বাংলা ভাষায় এর ব্যবহার দেখব। তারপর বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে পার্থক্য খুঁজে বের করব।

বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হলেন কেন?

ভাষাতত্ত্বের দিক থেকে বাংলা অনেক মজার ভাষা। জাপানি ভাষার সঙ্গে অনেক মিল আছে। জাপানিভাষী হিসেবে এটা খুবই আনন্দের। কাজ করতে এসে এসব মিল আমি খুঁজে পেয়েছি। যেমন জাপান ও বাংলা ভাষার ওয়ার্ড অর্ডার বা বাক্যবিন্যাস এক—কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া। যুক্ত ক্রিয়ার ব্যবহার বাংলার মতো জাপানি ভাষাতেও আছে। ২০১৫ সাল থেকে বাংলা নিয়ে কাজ করতে করতে ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেছে।

কিন্তু আপনি তো হিন্দিতে স্নাতক, সেই বিষয়েও তো গবেষণা করতে পারতেন?

হিন্দি পড়ব নাকি বাংলা পড়ব—এ নিয়ে অনার্সেই আমার মধ্যে একটি দ্বিধা কাজ করছিল। তখন অবশ্য হিন্দি ভাষা নিয়ে পড়তে শুরু করি। হিন্দি পড়তে পড়তেই বাংলা নিয়েও পড়ার ইচ্ছা জেগে উঠল। তখন বাংলাও শুরু করলাম। দুটি ভাষা কাছাকাছি। আমি অনেক মিল খুঁজে পেলাম। আবার অনার্সের থিসিসের কথা যদি বলি—আমি থিসিস হিসেবে নিয়েছিলাম হিন্দিকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার পর কলকাতায় তথা পশ্চিমবঙ্গে কী প্রভাব পড়ল, সেই বিষয়। দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এ বিষয়ে অনেক নিবন্ধ পাঠ করেছি। সেসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছি; কিন্তু এই বিষয় নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করব কি না, তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।

প্রথম আলো কার্যালয়ে সাকুরা ইশিকাওয়া
ছবি: কবির হোসেন

তারপর?

২০১৮ সালে অনার্স শেষ করে একটি আইটি কোম্পানিতে আমি চাকরি শুরু করি। তখন ভাবলাম, আপাতত চাকরি করা যাক। যদি ভালো না লাগে আবার পড়াশোনা করা যাবে। ২০২১ সালে এসে মনে হলো, বয়স তো দৌড়াচ্ছে। মাস্টার্সটা করে ফেলা দরকার। ভাষাতত্ত্বে মাস্টার্স করে ফেললাম। তারপর পিএইচডি শুরু হলো। এবার গবেষণার বিষয় হিসেবে বেছে নিলাম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও লিঙ্গুইস্টিক টাইপোলজি।

আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন...

জাপানের ইবারাকি শহরে আমার জন্ম। আমার স্কুল-কলেজ এই শহরেই। তারপর অনার্স করতে চলে এলাম টোকিও শহরে। বাড়িতে আমার মা আর ছোট ভাই আছে।

আবারও কী বাংলাদেশে আসা হবে?

অবশ্যই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আমার পিএইচডি সম্পন্ন করতে তিন বছর লেগে যাবে। এর মধ্যে আরও অনেক কাজেই হয়তো আসতে হবে।