কমিকসও হতে পারে পড়াশোনার বিষয়

দেশে রাজনৈতিক কার্টুনচর্চা এখন ক্ষীণধারা নদীর মতো। কষ্টেসৃষ্টে ধারাটা যাঁরা টিকিয়ে রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে মেহেদী হক অন্যতম। কৈশোরে যে রম্য ম্যাগাজিনটিতে এঁকে হাত পাকিয়েছেন, সেই ‘উন্মাদ’-এর এখন তিনি নির্বাহী সম্পাদক। ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’-এর জ্যেষ্ঠ কার্টুনিস্ট। তবে মেধা-শ্রমের সিংহভাগ দিচ্ছেন ঢাকা কমিকসে। প্রতিষ্ঠানটি খুলে জমিয়ে তুলেছেন দেশের কমিকসের বাজার। প্রকাশক হিসেবে তো বটেই, নিজেও সমানে কমিকস এঁকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। এ বাবদে ২০১৬ সালে পেয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘নারায়ণ দেবনাথ পুরস্কার’সহ আরও কিছু সম্মাননা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেহেদী হকের পড়াশোনার বিষয় ছিল নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তরও করেছেন। আর এক বছর হলো বৃত্তি নিয়ে পড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া কলেজ অব দ্য আর্টসে। এবারের পড়াশোনার বিষয়টা মেহেদী হকের মনের মতো—কমিকস। মূলত শিক্ষাজীবনের এই পর্বটি নিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বললেন মাহফুজ রহমান

প্রথম আলো:

শিক্ষাজীবনে বেশ কয়েক বছর বিরতির পর কমিকস নিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করলেন, এই উদ্দীপনার উৎস কী?

মেহেদী হক: আরও জানার ইচ্ছাটাই মূল। কারণ, নিজেরা নিজেরা কমিকস আঁকছি-লিখছি, কিন্তু এর ইতিহাস, ভবিষ্যৎ এবং আমরা আদতে কোন জায়গায় আছি, এসব জানার একটা বিরাট তাগিদ ছিল। আমাদের দেশে কার্টুন বা কমিকস নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ এখনো নেই; তাই মনে হলো, সবচেয়ে সেরা কোনো জায়গায় আবেদন করে দেখি। ভাবিনি যে ক্যালিফোর্নিয়া কলেজ অব আর্টস থেকে আমাকে মেরিট স্কলারশিপ (এমএফএএম) দিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেবে।
২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনায় স্নাতক করে বুয়েটে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছি। এরপর ১০ বছর ঢাকা কমিকস নিয়ে কাজ করার ফলে দেখতে দেখতে আমার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি এসে যাওয়ার পরও কিন্তু স্নাতকোত্তরে পড়ার জন্য আবেদন করেছি। কারণ, এখনকার পৃথিবীতে বয়স, অবস্থান বা অন্য কোনো পরিচয়ের কারণে কোনো কাজে আটকে থাকা উচিত নয় বলে মনে করি।

দেখে কে বলবে, ইনিই বিভাগের ডিন! জাস্টিন হল। সামারের শেষ ক্লাসে হাজির হয়েছিলেন ব্যাটম্যানের রবিন সেজে। তাঁর সঙ্গে মেহেদী হকের সেলফি।
প্রথম আলো:

কমিকস তো আপনার শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসা। এখন ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে কমিকসকে কীভাবে দেখছেন?

মেহেদী হক: এখানে যাঁরা পড়ান, তাঁরা এখনো তাঁদের শৈশব-কৈশোরেই আছেন। আমরা আদতে অনেক দ্রুত বড় হয়ে যাওয়ার ভান করি মাত্র। আমার শিক্ষকেরা কমিকসের ইতিহাস বা থিওরি নিয়ে ডক্টরেট করা সব অধ্যাপক, সোজা কথা পণ্ডিত যাকে বলে। বিখ্যাত সব গ্রাফিক নভেলিস্ট তাঁরা। বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ডিসি ও মার্ভেলের ‘প্রো’ আঁকিয়ে। কিন্তু তাঁরা যখন ক্লাস নেন বা কথা বলেন, মনে হয় যেন আমাদের খুব চেনা কোনো ‘কমিকস নার্ড’-এর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। তবে এখানে প্রধান পার্থক্য হলো, তাঁরা যা-ই করেন, বেশ গুরুত্ব দিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে করেন। এবং তাঁদের ‘ডকুমেন্টেশন’ খুব ভালো।

আমার থিসিস সুপারভাইজারের পরামর্শে আমার আত্মজীবনীমূলক গ্রাফিক নভেল অর্থাৎ থিসিসটা এখন আমার কন্যা অনসূয়া অবনীকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হচ্ছে। মানে পুরো গল্পটা আমি ওকেই শোনাচ্ছি। এটা একটা অন্য রকম ‘ওয়াল ব্রেক’ মনে হচ্ছে আমার কাছে।
প্রথম আলো:

ক্যালিফোর্নিয়া কলেজ অব দ্য আর্টসে কমিকস নিয়ে পড়াশোনার ধরনটা কেমন?

মেহেদী হক: খুব অন্য রকম। এখানে একেবারেই প্রতিযোগিতামূলক কিছু নেই। মানে কে কার চেয়ে সেরা, এটা দেখা হয় না। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আলাদা ব্যক্তি হিসেবে পড়ানো হয়। যে যেমন, তাঁকে সে রকম কিছু কাজ করতে উৎসাহ দেওয়া হয় এবং তাঁর থেকে সেরাটা বের করার চেষ্টা করা হয়। এখানকার মূল শিক্ষা-দর্শন হলো, যে যার সেরাটা করবে। আর তা যতটা সম্ভব মৌলিকভাবে করবে। আমরা যাঁরা বাংলাদেশে মুখস্থ করে পড়েছি এবং সব সময় একটা প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে পরীক্ষা কবে হবে ভেবে প্রবল উৎকণ্ঠা নিয়ে থেকেছি, তাঁদের জন্য একবারেই ভিন্ন একটা ব্যাপার। আর আপনি যখন জানবেন যে কার কাজ কত ভালো, তা আরেকজনের সঙ্গে তুলনা করে ফার্স্ট-সেকেন্ড ব্যাপারটা নেই, তখন পড়াশোনার উদ্দেশ্যটাই পাল্টে যায়। তখন নিজের আগ্রহটাই প্রধান হয়। আমি খুবই উপভোগ করেছি এই ধরনটা। আর এখানে শিক্ষার্থীদের একে-অন্যের কাজের মূল্যায়ন করতে হয়। এবং অন্য কাউকে ছোট না করেও কীভাবে সমালোচনা করা যায়, এটার বেশ বড় একটা চর্চা হয়। আর যেহেতু কমিকস নিয়ে পড়াশোনা, সেটা পড়তেও মজার। ইতিহাসও ঠিক সাল ধরে মুখস্থ না করে কালক্রম ও সেটার কী প্রভাব কোথায় পড়েছে, সামনে কী হতে পারে, এসব নিয়ে আড্ডা হয়। যেমন হয়তো একটা গ্রাফিক নভেল পড়ে এসে পরদিন সেটা নিয়ে কার কোন জায়গাটা ভালো লেগেছে, তা নিয়ে নিজের মতো করে প্রেজেন্টেশন করতে বলা হয়। আর আমাদের মাস্টার্সের ফাইনাল কাজটা হলো একটা গ্রাফিক নভেল আঁকা। যে যাঁর পছন্দের একটা গল্প নিয়ে গ্রাফিক নভেল আঁকবে। আমি যেমন ফাইনাল থিসিস হিসেবে আমার কার্টুনিস্ট হয়ে ওঠার গল্পটাই একটি গ্রাফিক নভেল আকারে করছি।

ক্লাসে সহপাঠীদের সঙ্গে মেহেদী হকের সেলফি
প্রথম আলো:

যুক্তরাষ্ট্রে আপনার পড়াশোনা শেষ হলে বাংলাদেশের কমিকস কীভাবে উপকৃত হবে?

মেহেদী হক: দুইভাবে হবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রথমত, মার্কিন কমিকস কমিউনিটি আমাদের কাজ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। সেটা জানানোর একটা পথ এখন খুলে গেছে বলে মনে করি। আমাদের ফ্যাকাল্টি ডিন জাস্টিন হল ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কোনো কমিকস বা কার্টুনের একাডেমিক ডিপার্টমেন্ট খুললে সেখানে একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম করা যেতে পারে বলে আলাপ করেছেন। তাঁরা অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে আদান-প্রদানে সব সময়ই খুব আগ্রহী। বাংলাদেশের মৌলিক গল্পগুলো তাঁরা জানতে আগ্রহী। ফলে আমাদের দেশের কাজ অনূদিত হয়ে কমিকসের বিশ্ববাজারে যাওয়ার পথটাও এখন সুগম হবে। আর এই আদান-প্রদান শুধু অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে, এমন নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গা থেকেও এর মূল্য অনেক।
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে কমিকস, কার্টুন ইত্যাদির কোনো মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। আমার মূল লক্ষ্য মার্কিন কমিকসশিল্পের এই জ্ঞান যতটা সম্ভব আমাদের দেশে নিয়ে আসা। এ বিষয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেলে আমি তা কাজে লাগাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। আর সে সঙ্গে সরাসরি আমাদের কমিকসের কাজেও এর প্রভাব পড়বে। কারণ, প্রতিবছর ঢাকা কমিকস থেকে আমরা বেশ কটি কমিকস বই প্রকাশ করছি।
এখানে একটা ব্যাপার বলে নেওয়া জরুরি, আমরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের ‘পপুলার’ ঘরানার সবকিছু সহজে দেখতে পাই; যেমন সুপারহিরো জনরা, সায়েন্স ফিকশন কমিকস ইত্যাদি। কিন্তু পড়াশোনা করতে এসে উপলব্ধি হলো, এর বাইরে কমিকসের এক বিশাল ভান্ডার আছে; যার তুলনায় সুপারহিরো বা অন্য যেসব দেখে বা পড়ে আমরা বড় হয়েছি, তা নিতান্তই সামান্য। সেসব বরং একেকটা সাব-জনরা। সেখানে বরং অনেক কাজ হচ্ছে সাহিত্য, স্মৃতিকথা, জীবনী নিয়ে; এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘গ্রাফিক মেডিসিন’ নামে একটা নতুন ধারাও চালু আছে। আমাদের দেশে এ রকম কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। আমি যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছয়টি ঘটনার একটি অ্যান্থোলজি নিয়ে কাজ করছি। আমার শিক্ষকের নির্দেশনায় এতে ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ নিয়ে কাজ করেছি। আর কাজটি করার সময় উপলব্ধি করেছি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা সম্পর্কে বাইরের বিশ্ব কত কম জানে! আমার এই কাজের মেন্টর ছিলেন ভিয়াতনামিজ-মার্কিন গ্রাফিক নভেলিস্ট জিয়া বাও। তিনি অন্যতম বেস্ট সেলার ভিয়তনামেরিকা নামের গ্রাফিক নভেলের নভেলিস্ট। তিনি একদিন বললেন, ‘তোমাদের এই ভয়ানক গণহত্যার কথা আমরা কিন্তু সেভাবে জানিই না! এমনকি যাঁরা অনেক সচেতন, তাঁদের অনেকে জানে, ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানের একটা যুদ্ধ হয়েছিল! আমি মনে করি, তোমাদের এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর কাজ করা উচিত এবং অবশ্যই ইংরেজিতে।’ এ কথার ফলে আমি যেমন আমাদের ঢাকা কমিকস থেকে বেশ কিছু কাজ আন্তর্জাতিক পাঠককে মাথায় রেখে ইংরেজিতে করতে চলেছি।

প্রথম আলো:

যাঁরা দেশের বাইরে কার্টুন-কমিকস নিয়ে পড়তে চান, তাঁদের জন্য কী বলবেন?

মেহেদী হক: যদি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ভালো না লাগে, তাহলে শুধু ‘বাইরে পড়তে চাচ্ছি’, এ কারণে না যাওয়াই ভালো। কারণ, বিষয়টি পছন্দ না করলে সব কাজই চাপের মনে হতে পারে। আর যাঁরা পছন্দ করেন এবং সত্যিই পড়তে চান, তাঁরা অবশ্যই প্রচুর কাজ করে ভালো পোর্টফোলিও তৈরি করুন। এতেই সময় দিন। পুরো প্রক্রিয়ায় মাঝেমধ্যে এক-দেড় বছরও লেগে যেতে পারে, সেটা আগে থেকেই মাথায় রাখুন। আর আপনি কোন ব্যাকগ্রাউন্ডের, তার চেয়ে আপনার কাজের মানটাই কিন্তু এখানে মুখ্য। ইউরোপ-আমেরিকায় কমিকস, কার্টুন, অ্যানিমেশন নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ প্রচুর। ইউরোপ কমিকসে (www.europecomics.com) ‘Pro’ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে সহজেই কোথায় কোথায় এ বিষয়ে পড়তে যাওয়া যাবে, তা জানতে পারবেন যে কেউ।

প্রথম আলো:

ঢাকা কমিকসের মাধ্যমে আপনি তরুণ কমিকসশিল্পী ও কার্টুনিস্টদের পথ দেখাচ্ছেন। ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য আরও কী করতে চান?

মেহেদী হক: ভবিষ্যতে কমিকস ও কার্টুন নিয়ে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে চাই। আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান তরুণ আঁকিয়ে আছেন। তবে তাঁদের অনেকেই বিভ্রান্ত। বেশির ভাগই দেখা যায় নিজের সব বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেশের শিল্পীর মতো করে কাজ করতে চান। কেউ জাপানি স্টাইলের মাঙ্গা আঁকিয়ে হতে চান। কেউ মার্কিন স্টাইল কপি করে সুপারহিরো আঁকতে চান। কিন্তু আমাদের নিজেদের গল্প যে আমাদেরই বলতে হবে এবং পৃথিবীর কত লোক যে তা জানার জন্য বসে আছে, সেটা তাঁদের বোঝানো জরুরি। এর একটা বিরাট বাজারও পড়ে আছে।

চলছে ‘সিরিয়াস’ প্রেজেন্টেশন
ছবি: মেহেদী হক
প্রথম আলো:

কার্টুন-কমিকসকে পেশা হিসেবে নেওয়ার বেলায় দেশের তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

মেহেদী হক: কাজে নিবিষ্ট থাকা জরুরি। এখন সবাই খুব অস্থির। যিনি কার্টুনিস্ট পরিচয়ে কাজ শুরু করেছিলেন, তিনি হয়তো এখন কার্টুন আঁকা বাদে সবই করছেন, এমনটাও দেখছি। আবার মানুষ একজন কার্টুনিস্টের হয়তো কাজ চেনে না, কিন্তু কার্টুনিস্টের চেহারা চেনে। আবার নিজে যেটা মনে করি, সেটা না করে যেটা অন্যেরা চাইছে, সেটা করার ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছেন অনেক প্রতিভাধর। এভাবে সাময়িক চটক হয়তো তৈরি করা সম্ভব; কিন্তু যেকোনো সৃজনশীল কাজই সময় নিয়ে ধীরে ধীরে এগোনোর বিষয়। সৃজনশীল কাজে পথচলাটা অনেকটা ম্যারাথনের মতো, ধীরে ধীরে চারদিক দেখতে দেখতে যাবেন এবং গন্তব্যটা বহুদূর। এটা ১০০ মিটার স্প্রিন্ট না। একছুটে গিয়ে অনেকেই তাই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন কিংবা হারিয়ে যাচ্ছেন। তাই এ ধরনের পেশায় কেউ আসতে গেলে অবশ্যই ধীরে ধীরে তাঁর কাজ উত্তরোত্তর ভালো করেই আসতে হবে। ড্রয়িং বেসিক যেমন জানা থাকা জরুরি, তেমন জরুরি নিজের চারপাশ পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা। সবাই যা দেখে তা এঁকে ফেলা আঁকিয়ের কাজ নয়, আঁকিয়ের কাজ হলো সবার যা দেখা উচিত, তা আঁকা। আর তা জানতে গেলে আগে নিজের ভাবনাটা পোক্ত করা জরুরি। এখন প্রচুর স্কিলের প্র্যাকটিস চলছে চারপাশে, কে কত আপডেটেড সফটওয়্যার দিয়ে কত ভালো রেন্ডার করতে পারছে, কে কতটা ‘বাইরের’ মতো করে কাজ করে, এসবই মূল লক্ষ্য হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেটা আসল জায়গা, সেই ভাবনায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। কেউ যদি ভালো আইডিয়া নিয়ে মৌলিক কাজ করতে পারে, যে কাজে মানবিক আবেগ টের পাওয়া যায়, তাহলে পুরো পৃথিবীতে তার কাজের কোনো অভাব নেই। প্রচুর স্টুডিও বসে আছে ভালো আইডিয়াওয়ালা দক্ষ আঁকিয়ের জন্য।

প্রথম আলো:

অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আঁকিয়েদের জায়গা দখল করে ফেলবে। আপনার কী মনে হয়?

মেহেদী হক: বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যাঁরা আঁকছেন, তাঁদের জায়গা দখল হবে না। এআই আদতে আরেকটি নতুন ‘টুল’ ছাড়া কিছুই নয়। বরং এটা আসার ফলে মৌলিক আইডিয়ার গুরুত্ব নতুন করে বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস। আর এআই কিন্তু এখনো মন্তব্য করার মতো জায়গায় এসে থিতু হয়নি। অনেক ‘ট্রায়াল-এরর’ চলছে। যেমন এখন তারা যা-ই বানাচ্ছে, সবই কোনো না কোনোভাবে অন্য কারও কপিরাইটেড কাজ। এসব আইনি জটিলতা মোকাবিলা করে আরেকটু সময় পার হলে ভালো করে বোঝা যাবে। 

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

পড়াশোনার বাইরে আপনি এখন আর কী কী করছেন?

মেহেদী হক: রাজনৈতিক কার্টুন আঁকছি ডেইলি নিউ এজ পত্রিকায়। এ সময়ে এসে এমন একটা পড়াশোনায় তাঁরা আমাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন। আর সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বাবা হয়েছি। আমার থিসিস সুপারভাইজারের পরামর্শে আমার আত্মজীবনীমূলক গ্রাফিক নভেল অর্থাৎ থিসিসটা এখন আমার কন্যা অনুসূয়া অবনীকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হচ্ছে। মানে পুরো গল্পটা আমি ওকেই শোনাচ্ছি। এটা একটা অন্য রকম ‘ওয়াল ব্রেক’ মনে হচ্ছে আমার কাছে।

প্রথম আলো:

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মেহেদী হক: গত ১০ বছর বাংলা কমিকস নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেছি। এবার আমাদের নিজেদের লোকগল্প ও অন্যান্য সব নিয়ে অ্যানিমেশন শুরু করতে যাচ্ছি। কমিকস শুরু করার আগে অনেকেই বলেছিলেন, এটা ব্যবসাসফল হবে না। কাজ করে দেখেছি, সেটা সত্য নয়। অ্যানিমেশন সেক্টরেও এই কাজ করার চেষ্টা করব।