সিডনিতে যেমন দেখলাম ‘গুড মর্নিং বাংলাদেশ’

অস্ট্রেলিয়ার দাতব্য সংস্থা ক্যানসার কাউন্সিলের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে ‘গুড মর্নিং বাংলাদেশ’। দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা প্রবাসী বাংলাদেশিদের এ কার্যক্রম দেখতে গিয়েছিলেন কাউসার খান

প্রতিবছর মে মাসে সিডনির কয়েকটি জায়গায় বসে এই চায়ের আসর
ছবি: সংগৃহীত

শীতের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে সিডনির ব্ল্যাকটাউনে এসেছি। এখানকার মিনি পার্কেই হবে এবারের ‘গুড মর্নিং বাংলাদেশ’। প্রাঙ্গণে ঢুকে দেখি স্টলে স্টলে চা-পরোটা, শিঙাড়া-সমুচা, পিঠাপুলি, জিলাপি আরও কত–কী! মনে হলো বিদেশবিভুঁইয়ে দেশি খাবারদাবারের কোনো মেলা চলছে। ঘুরতে ঘুরতে একটা ব্যতিক্রম অবশ্য চোখে পড়ল, কোনো খাবারেরই মূল্য উল্লেখ নেই। আগত ব্যক্তিদের অনেকে স্টল ঘুরে ঘুরে ইচ্ছেমতো দামে এসব খাবার  কিনছেন, খাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার শুধুই চায়ে চুমুক দিতে দিতে গল্পে মেতেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে দর্শনার্থী—সবাই প্রায় বাংলাদেশি। বেলা বাড়তে বাড়তে আয়োজনটা রীতিমতো মিলনমেলায় রূপ নিল।

কার্যক্রমটি ‘অস্ট্রেলিয়াস বিগেস্ট মর্নিং টি’ বা অস্ট্রেলিয়ার সকালের চায়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার দাতব্য সংস্থা ক্যানসার কাউন্সিলকে তহবিল সংগ্রহ করে দিতে যে কেউ এটি আয়োজন করতে পারে। যেমন প্রায় দুই যুগ আগে প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুরু করেন ‘গুড মর্নিং বাংলাদেশ’। এখন প্রতিবছর মে মাসে সিডনির কয়েকটি জায়গায় বসে এই চায়ের আসর।

ব্ল্যাকটাউনের আয়োজনটি হয় ১৯ মে। সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ ক্যানসার কাউন্সিলের পরিচালকমণ্ডলী ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনটি তুলে ধরতে অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার গণমাধ্যমের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

পেশা ভুলে সবাই শরিক

স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এসেছেন নানা পেশার বাংলাদেশিরা। সপ্তাহের ছুটির দিনে নিজের সাধ্যমতো খাবার বানিয়ে হাজির হয়েছেন। কেউ কেউ এনেছেন নিজের আঁকা ছবি, বই। পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির যোগ ঘটাতে সন্তানদেরও সঙ্গে এনেছেন।

অনেকের সঙ্গেই কথা হলো। যেমন স্বেচ্ছাসেবী জেসি চৌধুরী সিডনির নর্থ ওয়েস্ট ডিজঅ্যাবিলিটি সার্ভিসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও চিকিৎসক। নিজের অভিজ্ঞতা বলছিলেন তিনি, ‘আয়োজনের আগে আমি নিজেই বাজার করি, রান্না করি। নিজের প্রশান্তির জন্য কাজটা করি।’

চা-নাশতায় শরিক হতে এসেছিলেন জ্যেষ্ঠ প্রযুক্তি–বিশেষজ্ঞ মোস্তফা আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দান করা যতটা সহজ, এখানে তেমন নয়। এখানে সংস্কৃতিটাই হলো কিছু করে তহবিল সংগ্রহ করা। আর গুড মর্নিং বাংলাদেশ আয়োজনটি বহু পুরোনো এবং আমাদের একটি ভরসার জায়গা। তাই বাংলাদেশি হিসেবে আরেক বাংলাদেশির উদ্যোগে যুক্ত হতে এসেছি।’

তিনটি আয়োজন থেকে এবার ২৩ লাখ টাকার বেশি অর্থ সংগৃহীত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানসার কাউন্সিলের কাজে তা তুলে দেওয়া হবে। এই প্রতিষ্ঠান ক্যানসার গবেষণায় কাজ করে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও আছে যুক্ততা।

যেভাবে শুরু

ওয়েস্টার্ন সিডনিতে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন বাংলাদেশের ড. আবদুল হক। ঘনিষ্ঠ একজনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তাঁকে খুব নাড়া দিয়েছিল। সেটা ২০০১ সালের কথা। এরপরই বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে শুরু করে ‘গুড মর্নিং বাংলাদেশ’।

শুরুর সময় আবদুল হকের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন সিডনির অবার্ন হাসপাতালের মেডিকেল স্টাফ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আয়াজ চৌধুরী। তিনি শুরুর গল্প বলছিলেন, ‘হক ভাই গুড মর্নিং বাংলাদেশ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশি ফোরাম ফর কমিউনিটি এনগেজমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে আমাকে সভাপতি করেছিলেন। এখনো আমি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ক্যানসার হাসপাতালের জন্যও প্রায় দেড় কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি আমরা।’

প্রয়াত আবদুল হকের ‘গুড মর্নিং বাংলাদেশ’ কার্যক্রমটি এখন পরিচালনা করছেন তাঁর মেয়ে রুবায়েত হক ও জামাতা তানভীর শহীদ। আবদুল হকের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সিডনির ব্ল্যাকটাউনে একটি সংরক্ষিত এলাকা তাঁর নামে রাখার প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্থানীয় কাউন্সিল।