‘বড়বেলা’য় কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন ছোটবেলার ঈদ

একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? ঈদের স্মৃতি মনে করতে গেলেই আমাদের মন চলে যায় অতীতে? ছেলেবেলায় কাটানো ঈদগুলো নিয়ে ভাবতেও আমাদের আনন্দ লাগে, সঙ্গে একটু দুঃখও কি লাগে না? এ দুঃখগুলোই আজকাল আমরা দেখি ফেসবুকে। বড় হতে হতে আমাদের ঈদও পানসে হয়ে যায়। সারা বছরের ব্যস্ততা শেষে কেউ ঈদের দিন ঘুমান। কেউ ঈদের দিন বই পড়েন, সিনেমা দেখেন। অলস সময় কাটান। ফলে ঈদ আমাদের কাছে হয়ে গেছে ভালো খাবারের সঙ্গে সাধারণ আর দশটা ছুটির দিনের মতো। অথচ এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল?

ঈদের আগে সবাই মিলে কাজ করলে মা, স্ত্রী ও বোনের ওপর চাপ তো কমেই, একসঙ্গে আড্ডাও হয়। মডেল: শিরীন বকুল, তপন, নিবেদিতা, তানাকা ও সুবর্ণা
ছবি: সুমন ইউসুফ

সেই যে সারা রাত জেগে থেকে ঈদের অপেক্ষা, নতুন কাপড় লুকিয়ে রাখা বা চাঁদরাতে পটকা ফোটানো, সেমাই খাওয়া...ঈদের রাতে ভাইবোনের বিশাল বাহিনী নিয়ে গল্পের আসর বসানো। আমাদের এত রঙিন, এত আনন্দের ঈদ হুট করে এমন সাদাকালো কেন হয়ে গেল?

আমরা কি চাইলেই আবারও ফিরিয়ে আনতে পারি না শৈশব–কৈশোরের সেই হারিয়ে যাওয়া ঈদ? উত্তর হলো, কিছুটা হলেও পারি। পুরোটা না পারলেও ছোটবেলার সেই আনন্দের আংশিক আনন্দ আমরা বড় বয়সেও ফিরিয়ে আনতে পারি। ভাবছেন কীভাবে?

গ্রামে বা দেশের বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ করুন

উৎসব পূর্ণতা পায় মানুষে। কাজেই আপনার প্রথম কাজ হবে মানুষজন জড়ো করা। আশপাশের আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দিন। শিশুদের জন্য ছোট ছোট উপহারের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে গ্রামে গিয়ে ঈদ করুন।

আশপাশের আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দিন। সবাই মিলে খাওয়া–দাওয়া করুন
ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক, ডিভাইস, সারা দিন ঘুমের পরিকল্পনা বাদ দিন

প্রথমেই ঈদের দিনে ফেসবুক চালানোর পরিকল্পনা আর ঘরে শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর পরিকল্পনা থাকলে বাদ দিয়ে দিন। ছোটবেলায় আপনার ঈদের আনন্দ ছিল, কারণ আপনার চারপাশে ছিল অসংখ্য মানুষ। মানুষের আনন্দ কখনোই ডিভাইস, সিনেমা বা ফেসবুক দিতে পারে না। তবে হ্যাঁ, দল বেঁধে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে বাধা নেই। কাজেই এসবের মধ্যে আনন্দ খোঁজার বদ অভ্যাসটা অন্তত ঈদের দিন বাদ দিতে হবে।

ঈদের কার্ড বিলান

ঈদকার্ডের কথা মনে আছে? এখনো অনেক দোকানেই এই ঈদকার্ড পাওয়া যায়। এই ঈদে বন্ধুদের ঈদকার্ড পাঠিয়ে চমকে দিতে পারেন। বন্ধুরা চমকে যাবে, আপনার আনন্দ হবে ষোলআনাই। সময় থাকলে নিজেও হাতে বানাতে পারেন কার্ড। পরিবারের মানুষদেরও নানা কথা লিখে উপহার দিতে পারেন ঈদকার্ড। আপনার পরিবারের শিশুরা ঈদকার্ড বানিয়ে উপহার দিতে পারে বড়দের, প্রতিবেশী শিশুদের। বড়দেরও সেই আনন্দ আয়োজনে যোগ দিতে বাধা নেই।

আগের দিন হাত ভরে মেহেদি পরার মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে যায় ঈদের আনন্দ
ছবি: প্রথম আলো

আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ফোন করুন

ছোটবেলায় মারামারি, ঝগড়া যা–ই হোক, আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিশে যেতাম আবার। এই ঈদে সেটা ফিরিয়ে আনুন। যে বন্ধুর সঙ্গে রাগ করে এক বছর কথা বলেন না, তাকে এই ঈদে একটা ফোন দিয়েই দেখুন। পুরোনো দিনের গল্পের ঝাঁপি খুলে বসুন। কাজী নজরুল ইসলাম যেমনটা বলেছেন, ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন, হাত মিলাও হাতে।’

সালামি দিন

ছোটদের আর মুরুব্বিদের যেমন মা-বাবাকে সালামি দিন। পরিমাণে অল্প হলেও দিন। চেষ্টা করবেন চকচকে নোট দেওয়ার।

আপনার ঈদের আনন্দে অন্তর্ভুক্ত করুন বঞ্চিতদেরকেও
ছবি: প্রথম আলো

চাঁদরাত কাটান বিশেষভাবে

ছোটবেলার ভুলে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে বের করুন। চাঁদরাতে ফেসবুক স্ক্রল করে সময় নষ্ট না করে বন্ধুদের সঙ্গে রাতের বেলা রিকশায় করে না হয় ঘুরলেনই একটু। আনন্দ বাড়বে বৈ কমবে না। ঢাকায় থাকলে পুরান ঢাকায় ঘুরতে পারেন। মেয়েরা দল বেঁধে হাত রাঙাতে পারেন মেহেদিতে। মেহেদি উৎসবের সময় ইউটিউবে ছেড়ে দিতে পারেন ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ।’

চাঁদরাতে শপিং না করলে অনেকের ঈদ পূর্ণতা পায় না
ছবি: সংগৃহীত

পারিবারিক অনুষ্ঠান

ঈদের দিন পরিবারের বয়স্ক বা ছোট সব মানুষের জন্য লটারি বা ছোট ছোট ঘরোয়া খেলার আয়োজন করতে পারেন। রাখতে পারেন খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও। দেখবেন, এত দিন যে বাসা ছিল সুনসান নীরব, ঈদের আনন্দে সেই বাসা কত গমগম করছে। আমাদের কৈশোরের ঈদের আরও একটা অনুষঙ্গ ছিল ‘ইত্যাদি’। এখনো প্রতি ঈদে ‘ইত্যাদি’র বিশেষ ঈদ পর্ব হয়। পরিবারের ছেলে–বুড়ো সবাই মিলে ‘ইত্যাদি’দেখতে পারেন। আবার পরিবারের সবাই একসঙ্গে ওটিটিতে ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া সিনেমাও দেখতে পারেন।

এসব করে শৈশবে আমরা ফিরতে পারব না। তবে আমাদের হারিয়ে যেতে বসা ঈদের আনন্দ একটু হলেও ফিরিয়ে আনতে পারব। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে আমরা যে কতটা একা, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছি, প্রতিবছর ঈদ এলে সেটা আরও বেশি করে বুঝতে পারি। এবারের ঈদ আমাদের নিঃসঙ্গতার প্রাচীর ভেঙে আবারও উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে উঠুক।