বুয়েটে প্রথম আদনান: ঘুমানো, নামাজ, খাওয়া ছাড়া বাকি পুরো সময়ই লেখাপড়া করেছি

এ বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন রাজধানীর নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পেরোনো আদনান আহমেদ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীর রহমান

প্রথম আলো:

অভিনন্দন। প্রথম হয়ে কেমন লাগছে?

যে প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য লেখাপড়া করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানেই প্রথম হয়েছি। ভালো লাগছে।

প্রথম আলো:

প্রথম হওয়া তো সহজ কাজ নয়। আপনার কী মনে হয়, এ ধরনের সাফল্যের জন্য কী সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?

আমার মনে হয়, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য। আর ‘হাল না ছাড়ার মানসিকতা’। ভর্তি পরীক্ষার আগে অনেক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। সব পরীক্ষা যে ভালো হবে, এমন কোনো কথা নেই। কিছু পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে, কিছু পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল হবে না। সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।

আদনান আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

আপনার কোনো বিশেষ কৌশল ছিল?

আমার প্রস্তুতি শুরু থেকেই ছিল বুয়েটকেন্দ্রিক। চেষ্টার ক্ষেত্রে কোনো আপস করিনি। পরীক্ষার হলে আতঙ্কিত হইনি। পরীক্ষার হলে আতঙ্কিত না হওয়াটাই আসল। নার্ভাস হলে জানা উত্তরও ভুল হয়ে যায়।

প্রথম আলো:

সব মিলিয়ে প্রস্তুতি কেমন ছিল?

অনলাইনে ক্লাস আর অফলাইনে পরীক্ষা দিয়েছি। ভর্তি পরীক্ষার সময়টাতে অনেক রাত জাগতাম। অনেক সময় সন্ধ্যায় পড়তে বসে, সকালে নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছি।

প্রথম আলো:

প্রথম হবেন—আগে থেকে টের পাচ্ছিলেন?

পরীক্ষা দেওয়ার পর বুঝেছিলাম, প্রথম দিকে থাকব। কিন্তু প্রথম হব, এতটা আত্মবিশ্বাস ছিল না।

আদনান আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

ভবিষ্যতে যাঁরা ভর্তি পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?

মাথা ঠান্ডা রেখে বুঝে বুঝে পড়তে হবে। মুখস্থ করা যাবে না। পাশাপাশি, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।  

প্রথম আলো:

ছোটবেলা থেকেই কি ভালো ছাত্র ছিলেন?

আমার স্কুল ছিল চট্টগ্রামে, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। সেখান থেকে ঢাকার নটর ডেম কলেজে সুযোগ পাই। ২০২২ সালের প্রথম দিকে আমি ঢাকা চলে আসি। হোস্টেলে উঠি। হোস্টেলে এক রুমে চারজন ছিলাম। ওই খানে থাকা, খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা হচ্ছিল। বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকতাম। তবে এই অসুস্থতাকে আমি পাত্তা দিতাম না। পড়ালেখায় ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করতাম। ঘুমানো, নামাজ, খাওয়া-দাওয়া বাদে বাকি সব সময় পড়ালেখা করতাম। চেষ্টা করতাম কোনো সময় যাতে নষ্ট না হয়। চট্টগ্রাম থেকে এসে দেশসেরা একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি। সবার আলাদা প্রত্যাশা ছিল। সেটা মাথায় রেখে পড়াশোনা করেছি।

প্রথম আলো:

এই যাত্রায় নিশ্চয়ই অনেকের অবদান ছিল?

অবশ্যই। বিশেষ করে আমার মা-বাবার। বেশির ভাগ সময় সকালের নাশতা আমি আম্মুর হাতে করতাম। খুব সকালে উঠে পড়া শুরু করতাম, খাওয়ার সময় পেতাম না। আম্মু তখন খাইয়ে দিত। আব্বু যথেষ্ট কষ্ট করেছেন। প্রবাসে থেকে উৎসাহ, মোটিভেশন দিয়েছেন।

প্রথম আলো:

কোন বিষয়ে পড়বেন ভাবছেন?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল। আমার ইচ্ছা আছে, যেকোনো টেক জায়ান্ট কোম্পানিতে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে যুক্ত হওয়ার। সেই ভাবনা থেকেই কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বেছে নেওয়া।