কোড ব্ল্যাক ও টিম অ্যাটলাস জিতল স্বর্ণপদক

ইন্দোনেশিয়ান ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিবছর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যা ‘ওয়ার্ল্ড সায়েন্স, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পিটিশন’ (বিশ্ববিজ্ঞান, পরিবেশ ও প্রকৌশল প্রতিযোগিতা) নামে পরিচিত। এতে সাতটি ক্যাটাগরি আছে। প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদকসহ একাধিক পুরস্কার জিতে নিয়েছে বাংলাদেশের টিম অ্যাটলাস ও কোড ব্ল্যাক।

১২ থেকে ১৭ মে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্যানকাসিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এবারের প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণ করে ১৮টি দেশের ৩১১টি দল। তাদের মধ্যে টিম অ্যাটলাস জিতেছে স্বর্ণপদক, বেস্ট প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড ও সেমি-গ্রান্ড অ্যাওয়ার্ড। অন্যদিকে বাংলাদেশের একমাত্র নারী রোবোটিক দল ‘কোড ব্ল্যাক’ স্বর্ণপদক ছাড়াও পেয়েছে মাইসো (মালয়েশিয়ান ইয়ং সায়েন্টিস্ট অর্গানাইজেশন) স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড।

স্বর্ণজয়ী অ্যাটলাস দলের সদস্যরা সবাই শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সানি জুবায়ের, ঢাকা কলেজের আবদুল্লাহ ইবনাহ হাসান, ঢাকার নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের মো. আল মাহমুদ, মারুফ মিয়া ও যশোরের দাউদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আতিক শাহারিয়ার।

কোড ব্ল্যাক দলে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস, বায়োটেকনোলজি বিভাগের নুসরাত জাহান সিনহা, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের তাহিয়া রহমান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের নুসরাত জাহান ও সনিয়া ইসলাম।

কোড ব্ল্যাক দলে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস, বায়োটেকনোলজি বিভাগের নুসরাত জাহান সিনহা, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের তাহিয়া রহমান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের নুসরাত জাহান ও সনিয়া ইসলাম।
ছবি: সংগৃহীত

রোবটের গায়ে নকশিকাঁথার নকশা

প্রতিযোগিতায় প্রহরী নামের একটি উদ্ধারকারী রোবট উপস্থাপন করে কোড ব্ল্যাক। উন্নত প্রযুক্তির এই রোবটের রয়েছে বিশেষ চাকা, যা ধ্বংসস্তূপেও ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জরুরি পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রোবটটি জীবিত ও মৃত ব্যক্তি শনাক্ত করতেও সক্ষম।

কোড ব্ল্যাকের তৈরি রোবট
ছবি: সংগৃহীত

প্রহরীতে থাকা স্বয়ংক্রিয় ফার্স্টএইড বক্স ধোঁয়া থেকে বাঁচতে এবং জীবিত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। কোড ব্ল্যাকের দলনেতা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘রোবটটির ডিজাইন মূলত কবি জসীমউদ্‌দীনের নকশিকাঁথার মাঠ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা, নকশিকাঁথার বিভিন্ন ফোঁড়ের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

পানির রোবট-ব্লু বট

টিম অ্যাটলাসের সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

টিম অ্যাটলাসের তৈরি রোবটটির নাম ছিল ‘ব্লু বট’, যা পানিতে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এ ছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণেও সক্ষম। রোবটটির বিষয়ে জানতে চাইলে টিম অ্যাটলাস দলের প্রধান সানি জুবায়ের বলেন, ‘প্রাথমিক পরীক্ষায় ব্লু বট উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। এর জিপিএস সেন্সর দূষণের উচ্চমাত্রা চিহ্নিত করতে পারে। এআইচালিত সিস্টেম রোবটকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার উপযোগী করে তোলে। এ ছাড়া রোবটটি জরুরি সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া ও উপকূলীয় এলাকার সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি শনাক্ত করতে সক্ষম।’

ব্লু বট
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিকূলতা, স্মরণীয় মুহূর্ত

রোবট সঙ্গে নিয়ে বিমানে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আছে। যাত্রাপথে এত বড় জিনিস বহন করাটাও কষ্টসাধ্য। বাধ্য হয়ে রোবটের বিভিন্ন অংশ খুলে ব্যাগে ভরে নিয়েছিলেন কোড ব্ল্যাকের সদস্যরা। এখানেই ঘটে বিপত্তি। বিমানে চাপের কারণে রোবটের কিছু অংশ বাঁকা হয়ে যায়। ফল পুরো রোবটটা আবার জোড়া দিতে গিয়ে বিপত্তিতেই পড়েন নির্মাতারা।

আরও পড়ুন

স্মরণীয় ঘটনাও ছিল। কোড ব্ল্যাক দলের অন্যতম সদস্য নুসরাত জাহান বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে আমরাই প্রথম বিচারকের মুখোমুখি হয়েছি। এ কারণে বুথ সেটআপের পর প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার তেমন সময় পাইনি। কিন্তু যখনই আমাদের রোবট সামনে চলতে শুরু করে, আশপাশের সব দল আমাদের ঘিরে দাঁড়ায়। রোবটটির সক্ষমতা দেখে দুজন এসে চালানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বিচারকার্যের পর আমরা বুথ খোলা রেখেছিলাম, সবাই যেন রোবটটি পরখ করে দেখতে পারেন। সবাই খুব আনন্দ পেয়েছেন। আমাদের রোবটের প্রশংসা করেছেন।’

দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশিক্ষায় উৎসাহী করা, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কোড ব্ল্যাক ও অ্যাটলাসের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি নিজেদের কার্যক্রমকে তাঁরা আরও বিস্তৃত করতে চান।