ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে প্রতিবছর একজন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় ওআইসি স্বর্ণপদক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি বিভাগ মিলে যিনি সর্বোচ্চ সিজিপিএ পান, তিনি পান এই বিশেষ সম্মাননা। এ বছর ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক। ৫ জুন তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীর রহমান
অভিনন্দন
ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওআইসি মহাসচিবের কাছ থেকে স্বর্ণপদক। কেমন লাগছে?
ছোটবেলা থেকে ভালো ছাত্র হিসেবে মানুষের প্রশংসা শুনেছি। কিন্তু এত বড় স্বীকৃতি জীবনে এটাই প্রথম। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে আমি স্বর্ণপদক নিয়েছি।
কীভাবে এই পদকের জন্য মনোনীত হলেন?
আমার সিজিপিএ ছিল ৩.৯৯৪। সব কটি বিভাগের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ। সে জন্যই আমাকে স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত করা হয়।
শুরু থেকে কি আইইউটিতেই পড়ার পরিকল্পনা ছিল?
আমি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউটি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়—সব কটিতেই সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, আইইউটিতে পড়লে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে পারব। এটা আইইউটির সবচেয়ে বড় গুণ। তিন বছর ১০ মাসে প্রকৌশলের পড়া শেষ করা যায়। এ কারণে বুয়েটে ভর্তি হয়েও ওখান থেকে ভর্তি বাতিল করে আইইউটিতে চলে আসি।
কোন বিষয়গুলো আপনাকে এগিয়ে রেখেছিল বলে মনে হয়?
আমার মনে হয় একটা অভ্যাস আমাকে সব সময় এগিয়ে রেখেছে। সেটা হলো, অনেক দূরের অলীক স্বপ্ন না দেখা। আমি বরং স্বপ্নটাকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে নিতে চাই। একেকটা সপ্তাহের জন্য লক্ষ্য ঠিক করতে চাই। যখন আইইউটিতে ভর্তি হয়েছি, আমি কখনোই সেমিস্টারে ফাইনাল নিয়ে, কিংবা চার বছর পর কী করব, তা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। আমি শুধু ভেবেছি এই সপ্তাহে কয়টা কুইজ আছে, কয়টা ল্যাব রিপোর্ট আছে, কী পড়তে হবে, কয়টা ক্লাস আছে। শুধু একটা সপ্তাহের ওপর ফোকাস করেছি। আরেকটা বিষয় হলো ধৈর্য। একটার পর একটা ল্যাব, পরীক্ষা, কুইজ তো লেগেই থাকে। সেমিস্টারের শেষের দিকে খুব চাপে পড়তে হয়। ওই অবস্থায় কেউ হাল ছেড়ে দিলেই সিজিপিএ কমে যায়। ধৈর্যের পরিচয়টা তখনই দিতে হয়।
কে বা কী আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?
আইইউটির হোস্টেল ভীষণ সুন্দর। কিন্তু বাসা ছেড়ে হোস্টেলে চলে যাওয়াটা শুরুর দিকে আমার জন্য খুব কষ্টের ছিল। এই কষ্টটাই চার বছর পথচলার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। মানুষ কষ্ট পেলে হতাশ হয়ে যায়। আমার কাছে বরং কষ্টটাই অনুপ্রেরণা ছিল।
একাডেমিক জীবনের কোনো ঘটনা আলাদা করে মনে পড়ে?
প্রথম সেমিস্টারে সৈয়দ ইফতেখার আলী নামের একজন খুব কড়া শিক্ষক ছিলেন। তিনি ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট পড়াতেন। কোর্সটা খুব কঠিন। স্যারও অনেক কড়াভাবে খাতা দেখতেন। ছাড় দেন না একদমই। প্রথম সেমিস্টারের পর যখন ফলাফল দিল, জানলাম আমি প্রথম হয়েছি। সিজিপিএ এসেছিল ৩.৯৮। কিন্তু তখনো জানতাম না ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট কোর্সে কত পেয়েছি। একদিন আমি ক্যাফেটেরিয়ার সামনে দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ ইফতেখার স্যার ডেকে বললেন, ‘তুমি সেকশন “এ”–র ওয়ান থার্টি নাইন না?’ আমি বললাম, ‘জি স্যার।’ স্যার বললেন, ‘তুমি তো আমার কোর্সে হায়েস্ট পেয়েছ।’ যে স্যারকে সবাই ভয় পায়, তাঁর কাছ থেকে এ রকম একটা খবর শুনে ভীষণ ভালো লেগেছিল।
সব সেমিস্টারেই প্রথম হয়েছিলেন?
সেমিস্টার হিসাব করলে আমি শুধু একটা সেমিস্টারে পিছিয়ে পড়েছিলাম। ৪র্থ সেমিস্টারে ৩.৯৭ ছিল। বাকি সব সেমিস্টারে আমি সবার চেয়ে বেশি পেয়েছি।
ভবিষ্যতে কী করার পরিকল্পনা?
আইইউটিতে শিক্ষক হতে চেষ্টা করব। এটা আমার পরবর্তী লক্ষ্য। কিছু বিষয়ের প্রতি আমার আগ্রহ আছে। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান। দুটির কোনো একটা নিয়ে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছে আছে।