কুকুর নিয়ে প্রচলিত এই ধারণাগুলো ভুল

কুকুর বিভিন্ন আচরণ নিয়ে নানা রকম কথা প্রচলিত আছে মানুষের মধ্যে
ছবি: পেক্সেলস

পোষা কুকুরের বিভিন্ন শারীরিক ভঙ্গির নানা রকম মানে চালু আছে। এর কতটুকু সত্য আর কতটুকুই বা মিথ্যা, জানতে মাঠে নেমেছিলেন জীবনযাপনভিত্তিক লেখক ওয়েন্ডি রোজ গোল্ড। দীর্ঘদিন একাধিক পশুপাখির চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেক গবেষণা শেষে কিছু ধারণার কোনো ভিত্তিই খুঁজে পাননি তিনি। এই মিথগুলো যে মিথ্যা, সেটি আপনার জানা জরুরি। কারণ, এতে আপনার পোষ্য আরও সুরক্ষিত থাকবে।

লেজ নাড়ানো মানেই কুকুর খুশি নয়

কুকুরের লেজ নাড়ানোর নানা কারণ আছে
ছবি: পেক্সেলস

মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা আছে, লেজ নাড়ানো মানেই কুকুর খুব খুশি। তবে এই ধারণা সব সময় ঠিক নয়। লেজ নাড়ানো মূলত কুকুরের একধরনের যোগাযোগের ভাষা। একটি কুকুর যখন তাঁর মনিবকে দেখে খুশি হয়, তখন সে লেজটা ডান দিকে নাড়াচাড়া করে। কিন্তু কুকুর যদি খুব ধীরে লেজটা অর্ধেক নিচে রেখে নাড়াচাড়া করে, তাহলে বুঝবেন সে কিছুটা শঙ্কিত বা ভয় পাচ্ছে। আবার কুকুর যদি লেজটা স্বাভাবিকের চেয়ে জোরে নাড়ায়, তাহলেও বুঝতে হবে সে ভয় পাচ্ছে।

ঘাস খাওয়া মানেই কুকুর অসুস্থ্ নয়

সবুজ মাঠে নিয়ে গেলেই কুকুর খুশি হয়ে যায়। এদিক–ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। যাঁরা কুকুর পোষেন তাঁদের অধিকাংশই মনে করেন, কুকুর হঠাৎ ঘাস খাচ্ছে মানে সে অসুস্থ। এই কথাটিরও জোরালো কোনো ভিত্তি নেই। পশুচিকিৎসক লিন্ডসে বাটজার বলেন, ‘অসংখ্য লোক আমার কাছে এসে অস্থির হয়ে বলেন, তাঁর কুকুর তো ঘাস খাচ্ছে, সে অসুস্থ। মজার বিষয় হলো এই ধারণা ঠিক নয়; বরং ঘাস তার পেটের প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে।’

পেটে খিদে থাকলেও অনেক কুকুর ঘাস চিবোয়
ছবি: পেক্সেলস

সত্য হচ্ছে নানা কারণে কুকুর ঘাস খেতে পারে। এই যেমন পেটে খিদে থাকলে অনেক কুকুর ঘাস চিবোয়। আর আঁশযুক্ত ঘাস তার খিদে মেটাতে সাহায্য করে। কোনো কোনো কুকুর আবার নতুন স্বাদ পাওয়ার জন্যও ঘাস খেতে পারে।

বয়স্ক কুকুরকে নতুন কিছু শেখানো যায় না

বয়স্ক কুকুরকে নতুন কিছু শেখানো যায় না, এই ধারণা ঠিক নয়
ছবি: পেক্সেলস

সবাই মনে করেন, কুকুরকে যা শেখানোর কম বয়সেই শিখিয়ে ফেলতে হয়। কারণ, বয়স্ক কুকুরকে নতুন কিছু শেখানো যায় না। এই ধারণাও ঠিক নয়। এটা সত্য যে, ছোট্ট বয়সে কুকুরকে নানা ধরনের ট্রিকস শেখানো সহজ। কিন্তু বড় হয়ে গেলেও কুকুরকে নতুন নতুন বিষয় শেখানো যায়। তবে কুকুরের যদি দৃষ্টি, শ্রবণ আর চলাফেরায় অসুবিধা থাকে, তখন সে না–ও শিখতে পারে। বিশেষ করে যে বিষয়ে সে পুরোপুরি ফিট নয়, সেদিকে তার আগ্রহ কমে আসবে, সেটিই তো স্বাভাবিক। এটি সত্যি যে, যতক্ষণ কুকুরের মস্তিষ্ক ভালো থাকে, ততক্ষণ সে নতুন কিছু গ্রহণ করে।

কুকুর সবকিছু সাদাকালো দেখে

কুকুর নানা রকম রং দেখতে পায়
ছবি: পেক্সেলস

এটিও একটি অসত্য তথ্য। কুকুর শুধু সাদাকালো নয় আরও কিছু রং দেখতে পারে। আর তাদের নিজস্ব মন ও ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের মতো করে যেকোনো জিনিস দেখে থাকে। কিন্তু দেখার রংগুলো সীমাবদ্ধ। গঠনগতভাবে কুকুরের চোখে কিছু উপাদান কম থাকায় তারা লাল ও সবুজ রং গুলিয়ে ফেলে।

নতুন কুকুরের বন্ধু হতে হাত শুকতে দিন

ছবি: পেক্সেলস

এটি বেশ প্রচলিত একটি ধারণা, নতুন কোনো কুকুরের সঙ্গে দ্রুত সখ্য গড়ে তুলতে তার সামনে হাত বাড়িয়ে শুকতে দেওয়া কার্যকর উপায়। কিন্তু পশুপাখির আচরণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটির কোনো ভিত্তি নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটি বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারও সঙ্গে দেখা হলে বা প্রথম পরিচয়ের পর হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করা মানুষের এক ধরনের অভ্যাস। কিন্তু কুকুর তো আর মানুষ নয়। তাই প্রথমবার দেখা হওয়া কুকুরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা অনিরাপদ বোধ করে, এ থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বরং কুকুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কিছু সময় নিন। মালিকের কাছ থেকে তার আচরণ জেনে সেভাবে মেশার চেষ্টা করাই ভালো।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট