‘নীলা’ গানে ভাইরাল হওয়া ফ্লোরেন্সের কথা
ইদানীং ইংরেজি গানই বেশি কভার করেন। তবে ফ্লোরেন্স বৈদ্যকে ফেসবুক দুনিয়ার মানুষ চিনেছিল কিন্তু তাঁর বাংলা গান শুনে। ২০২১ সালের শেষ দিকে ফ্লোরেন্স ও তাঁর বন্ধু মিলে কভার করেছিলেন মাইলসের ‘নীলা’। ভিডিও রেকর্ড করে ফেসবুকে আপলোড করতেই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে গানটি। ভিউ ছাড়িয়ে যায় আট লাখ, শেয়ার হয় প্রায় চার হাজারবার। মাইলসের ভোকাল হামিন আহমেদও গানটি শেয়ার করে ভালোবাসা জানিয়েছিলেন সেবার। ইংরেজি গান ‘স্টেরিও হার্টস’ কিংবা ‘আনটিল আই ফাউন্ড ইউ’ কভার করেও প্রশংসায় ভেসেছেন তিনি।
যেভাবে শুরু
কিছুদিন আগেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন ফ্লোরেন্স বৈদ্য। রাজধানীর হলিক্রস কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এখন মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকলেও তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটে। মাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানেই পড়ালেখা করেছেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম গান শেখা। শুরুটা হয় ক্ল্যাসিক্যাল গান দিয়ে। যদিও দুই বছর পরই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখাটা বন্ধ হয়ে যায়; তবে গান বাদ দিতে চাননি ফ্লোরেন্স। পরিবার ও বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় নিজে নিজেই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
শিখেছেন তো ক্ল্যাসিক্যাল, বিদেশি গানে গেলেন কী করে? খুলে বললেন ফ্লোরেন্স বৈদ্য, ‘ফেসবুকে গান গাইতে গাইতে একসময় টের পেলাম, ইংরেজি গানে বেশ আগ্রহ পাচ্ছি। গাইতে গিয়ে দেখলাম, ইংরেজি গানের উচ্চারণ আমাদের ইংরেজি উচ্চারণ থেকে একদম আলাদা। কেউ যখন ওই গানগুলো গাইছে, তখন উচ্চারণ পাল্টে যাচ্ছে। আমি মূল গানের উচ্চারণ অনুসরণ করে গানগুলো গাওয়ার চেষ্টা শুরু করলাম।’
অষ্টম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একদিন গান রেকর্ড করে ফেসবুকে আপলোড করেন ফ্লোরেন্স। তখন থেকে অনলাইনে মাঝেমধ্যে গান তুলে দিতেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর একটু বেশি বেশি গান আপলোড চলতে থাকে। আর ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পুরোদমে গান নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
নেট–দুনিয়ায় প্রশংসা পেয়ে ২০২১ সালে নিজের একটা ফেসবুক পেজ খুলে ফেলেন এই তরুণী। নাম দেন ‘ফিরেনজে’ (ফ্লোরেন্সের ইতালীয় রূপ)। সেখানে নিয়মিত নতুন নতুন গানের কভার আপলোড করেন ফ্লোরেন্স। কিছুদিন আগে একটি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। সংগীত পরিচালনার নানা দিক শেখার চেষ্টা করছেন এখন।
প্রশংসার সঙ্গে নেতিবাচক মন্তব্যও হজম করতে হয়। এসব মন্তব্য নিয়ে ফ্লোরেন্স বলেন, ‘অনেকে মনে করে, আমি ইংরেজি গান গাইছি বলে বাংলাটা ভুলে যাচ্ছি কিংবা কম গুরুত্ব দিচ্ছি। ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ইংরেজি গানের চর্চাটা একটু কম। এর পেছনে অবশ্যই মানুষের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দায়ী। আমি এ ধারণা ভাঙতে চাই।’
ইংরেজি গান গাইতে বেশি ভালো লাগলেও বাংলাদেশের ব্যান্ডের গান শুনতে বেশি পছন্দ করেন ফ্লোরেন্স। মেঘদল, আর্বোভাইরাস, আর্টসেল ও শিরোনামহীন তাঁর প্রিয় ব্যান্ড।
গান ঘিরেই সব
ফ্লোরেন্সের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর পরিবার। গান নিয়ে মা ও বোন সব সময় খুব উৎসাহ দেন। চাকরিসূত্রে বাবা দূরে থাকেন বলে হয়তো তাঁর উৎসাহটা খুব বেশি দেখার সুযোগ হয় না। তবে মাঝেমধ্যেই নাকি বন্ধুদের ধরে মেয়ের গান শোনান তাঁর বাবা।
গানের বাইরে গল্প পড়তে ও শুনতে খুব ভালোবাসেন ফ্লোরেন্স। ‘গল্প শুনতে’ বলতে হচ্ছে, কারণ বই পড়ার চেয়ে অডিও বুক শুনতেই তাঁর বেশি ভালো লাগে। গানের মানুষ, শুনতে বেশি ভালো লাগবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
কয়েক দিন পরই উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরোবে। এরপর নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চান ফ্লোরেন্স। সেটারই প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। নার্সিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছার পাশাপাশি তিনি গান চালিয়ে যেতে চান আজীবন।
নার্স হিসেবে ফ্লোরেন্স সত্যিই আলো ছড়াবেন কি না, সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে লেখা শেষ করার আগে একটা ছোট্ট তথ্য মনে করিয়ে দিই। আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কাকে, জানেন তো? ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। নার্সিংয়ে অনন্য অবদানের জন্য আঠারো শতকে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ এই নারীর জন্মদিনটি আজও ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।