এই গাছের দাম সাড়ে ৬ লাখ টাকা, দেখে নিন বৃক্ষমেলার সর্বোচ্চ দামের গাছগুলো

প্রথম দিকে ঘোরাফেরা, দেখাশোনা আর শেষ দিকে কেনাকাটা। আর সব মেলার মতো জাতীয় বৃক্ষমেলায়ও এমনটাই দেখা যায়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলার মাঠে চলমান জাতীয় বৃক্ষমেলায় শেষবেলায় এখন তাই ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। গত শুক্রবার দুপুরের পর বৃক্ষপ্রেমীদের পদচারণে মুখর ছিল মেলা। মাসব্যাপী এই মেলা শেষ হবে ১২ জুলাই। তাই ক্রেতার সংখ্যাই বেশি, বিক্রেতারাও চূড়ান্ত দাম ঠিক করে ফেলেছেন।

দাম, জাত, বয়সের কারণে বৃক্ষমেলায় কিছু গাছ হয়ে ওঠে ‘সোনার চেয়েও দামি’। এদিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে বনসাই বা বামনবৃক্ষ। অন্য গাছও আছে। বিরল বৃক্ষের গায়েও আছে দামি তকমা। মেলা ঘুরে একটা বনসাই পাওয়া গেল, যার দাম ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। লাখি বৃক্ষের তালিকায় বড় বৃক্ষ নয়, বামনবৃক্ষই এগিয়ে। কেন? নার্সারি উদ্যোক্তাদের জবাব, এটা গাছের দাম নয়, সময় ও শিল্পের দাম। তাই বয়স্ক, নান্দনিক বনসাইয়ের দাম বেশি হয়ে থাকে।

বৃক্ষমেলায় দামের দিক থেকে সেরা ১০ গাছের খোঁজ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

বৃক্ষমেলায় এই চীনা বটের বনসাইটির দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা
ছবি: মনন মাহমুদ

চীনা বটের বনসাই

৬,৫০,০০০ টাকা

আমদানি করা এই চীনা বটটি দেশে এনে লালন–পালন করা হয়েছে ছয়–সাত বছর। ডিসি (দীপক কমার্শিয়াল) নার্সারি অ্যান্ড সার্ভিসেস বনসাইটির দাম হাঁকাচ্ছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। ডিসি নার্সারির স্বত্বাধিকারী দীপক কুমার নাথ বললেন, ‘এখানে দামটা আসলে শিল্পের। গাছকে ছোট রেখে শৈল্পিক রূপ দিতে হয়। তবেই হয়ে ওঠে নান্দনিক বনসাই। একটা বনসাই তৈরিতে সময় ও শ্রম দুটোই লাগে।’

ভূর্জপত্র

৫,০০,০০০ টাকা

লম্বা, ছিপছিপে সরু গাছ। পাতাও চিকন চিকন। নাম ভূর্জপত্র। পেপার ট্রি নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Betula utilis। পাওয়া যাচ্ছে ডিসি নার্সারির স্টলে। দূর থেকেই বোঝা যায় ভূর্জপত্রের কাণ্ড নরম। কাছে গিয়ে বোঝা গেল এর বাকল মসৃণ। কাগজ উদ্ভাবনের আগে এই ভূর্জপত্রের বাকলে লেখা হতো। দীপক কুমার নাথ জানালেন, মহাভারত ভূর্জপত্রের বাকলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। এটি তিনি এনেছেন ভারত থেকে। এই ভূর্জপত্র গাছের বয়স ১০ বছর।

ভূর্জপত্র
ছবি: মনন মাহমুদ

২৫ বছর বয়সী চীনা বট

৫,০০,০০০ টাকা

ফয়সাল নার্সারির চীনা বটের বনসাই গাছটির বয়স ২৫ বছর। তবে এটি চীন থেকে আমদানি করা হয়নি। দেশেই উৎপাদিত। ফয়সাল নার্সারি এই বনসাই সংগ্রহ করেছে রাজশাহীর এক ব্যক্তির কাছে থেকে। এই স্টলে আরেকটি দামি গাছ দেখা গেল। আফ্রিকান বাওবাব। ৮ বছর বয়সী এই বনসাই বাওবাবের দাম চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ টাকা।

চীনা বটের বনসাই গাছটির বয়স ২৫ বছর
ছবি: মনন মাহমুদ

ফাইকাস বনসাই

৪,০০,০০০ টাকা

বনসাইয়ের জন্য ফাইকাসগাছের জনপ্রিয়তা কম নয়। বরিশাল নার্সারির এই ফাইকাস বনসাই চীন থেকে আমদানি করা। আমদানির পর ১০ বছর ধরে এর আকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ফাইকাসগাছের বনসাই
ছবি: মনন মাহমুদ

চীনা বটের বনসাই

৪,০০,০০০ টাকা

চীন থেকে আনা কিশোরগঞ্জ নার্সারির এই বনসাইয়ের দামও ৪ লাখ টাকা। কর্মীরা জানান দুই বছর আগে এটা আনা হয়েছে। এর বয়স তাঁদের হিসাবে ৩০ বছরের বেশি।

এই বনসাইয়ের দামও ৪ লাখ টাকা
ছবি: মনন মাহমুদ

চীনা বটের বনসাই

৩,৫০,০০০ টাকা

আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টারের দাবি এই চীনা বটের বয়স ৩৫ বছর। নার্সারির কর্মীরা জানালেন চীন থেকে আমদানির পর পেরিয়ে গেছে ৮ থেকে ১০ বছর। এ বনসাইয়ের বিশেষ ভঙ্গি নজর কাড়ে।

চীনা বটের বনসাই
ছবি: মনন মাহমুদ

হিজলের বনসাই

৩,০০,০০০ টাকা

একদম দেশি গাছের বনসাই। গ্রিনল্যান্স নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে। হিজল বললেই তমাল নামটা চলে আসে। এখানে তমালগাছেরও একটা বনসাই আছে। তমালেরটার দাম ২ লাখ টাকা।

হিজলের বনসাই
ছবি: মনন মাহমুদ

কিং মনস্টেরা

২,৫০,০০০ টাকা

পাতাগুলোর সঙ্গে আমাদের বড় মানিপ্ল্যান্টের মিল পাওয়া যায়। তবে গাঢ় সবুজ পাতাগুলো চেরা। আলংকারিক এই গাছ আফ্রিকা থেকে সংগ্রহ করেছে হোসেন নার্সারি। তাদের দাবি গাছটির বয়স ৪০ বছর। তাদের কাছে আছে ১০ বছরের বেশি। এটি ঘরের গাছ (ইনডোর প্ল্যান্ট)। এখানে আড়াইলাখি আরেকটা গাছ দেখা গেল। সেটি অবশ্য বনসাই। নাম কৃষ্ণবট। কর্মীরা অবশ্য পকেট বট বলেও ডাকছেন। থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা এই গাছের বয়স ২০ বছর।

কিং মনস্টেরা
ছবি: মনন মাহমুদ

চীনা বট বনসাই

১,৬০,০০০ টাকা

ধাপে ধাপে উঠে গেছে চীনা বটটি। এই বনসাই পাওয়া যাচ্ছে ব্র্যাক নার্সারিতে। বয়স ২৫ বছর বলে জানা গেল।

চীনা বট
ছবি: মনন মাহমুদ

রামবুটান

১,২০,০০০ টাকা

লিচুর মতো স্বাদের রামবুটান ফল এখন অনেকেরই পরিচিত। লম্বা গাছে পাকা লাল রঙের রামবুটান ধরে আছে। পটুয়াখালী নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে ফল ধরা পাঁচ বছর বয়সী রামবুটানগাছ। এই স্টলে দেখা গেল আপেলগাছে সবে আপেল ধরেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করা। প্রায় ১০ বছর বয়সী আপেলগাছের দাম ৮০ হাজার টাকা।

রামবুটান
ছবি: মনন মাহমুদ

অ্যাডেনিয়াম

১,২০,০০০ টাকা

কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারির দাবি এই অ্যাডেনিয়ামগাছের বয়স ৪০ বছরের বেশি। এ দেশেই আছে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়েছে। মরুর গোলাপ ও প্রাকৃতিক বনসাই হিসেবে অ্যাডেনিয়ামের পরিচিতি আছে।

অ্যাডেনিয়াম
ছবি: মনন মাহমুদ

বাওবাব

১,২০,০০০ টাকা

বাওবাবের বনসাই। ২০ বছর বয়সী এই গাছ মহানন্দা নার্সারির।

বাওবাবের বনসাই
ছবি: মনন মাহমুদ

প্রেমনা

১,০০,০০০ টাকা

প্রেমনা বনসাই। এটি প্রেমনা মাইক্রোফিলাগাছ, বয়স ২০ বছর। বোঝাই যায় বেশ যত্নে তৈরি হয়েছে। নুসাইবা নার্সারিতে দেখা মিলল প্রেমনার। দাম ১ লাখ টাকা।

প্রেমনা বনসাই
ছবি: মনন মাহমুদ

স্প্যানিশ অলিভ

১,০০,০০০ টাকা

স্পেনের জলপাই। স্প্যানিশ অলিভগাছ দেখা গেল ইউনিক নার্সারিতে। চার বছর বয়সী এই গাছের দাম ১ লাখ টাকা। এটি স্পেন থেকে সংগ্রহ করা।

স্প্যানিশ অলিভগাছ
ছবি: মনন মাহমুদ

১০

রুটিফল

৮০,০০০ টাকা

ইউনিক নার্সারিতে ব্রেডফ্রুট বা রুটিফলের গাছও আছে একটি। সেটিতে ফল ধরেছে। দাম ৮০ হাজার টাকা।

ব্রেডফ্রুট বা রুটিফলের গাছ
ছবি: মনন মাহমুদ

আরও কিছু দামি গাছ

সূর্যডিম বা মিয়াজাকি আম দামের দিক থেকে এগিয়ে। এবারও তা–ই। মহুয়া নার্সারিতে ফল ধরা একটি মিয়াজাকি আমগাছের দাম ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হলো।

পাতাতেই যেন সব সৌন্দর্য। নাগাচূড়া। থাইল্যান্ড থেকে এনেছে নোয়াখালী নার্সারি। ১০ বছর বয়সী এ গাছের দাম ৫৫ হাজার টাকা।

সৌদি আরবের আজওয়া খেজুরের একটি গাছ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে সৌদি খেজুর নার্সারি। খেজুরসহ আরেকটি গাছ এ মেলায় বিক্রি করেছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়।

দেশি জামের মতোই রং। তবে আকারে বেশ বড়। ভিয়েতনামি জামের গাছ ফলসহ পাওয়া যাচ্ছে কাশবন নার্সারিতে। দাম ৪০ হাজার টাকা।

দেখে মনে হবে সদ্য ফোটা মুরগির ছানা বসে আছে টবের ওপর। নামও তেমন—চিকেন ফার্ন। আসলে এটা একধরনের ফার্ন। গার্ডেন সেন্টারে পাওয়া যাচ্ছে। দাম ৩ হাজার টাকা।