কুমড়ো ফুলে ফুলে
“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে প’ড়েছে লতাটা,
সজ্নে ডাটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা, তুই কবে আসবি?
কবেছুটি?”
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘মাগো, ওরা বলে’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো বাংলাদেশের চিরায়ত জীবনযাপনের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। চিরায়ত বাঙালি খাবার নিয়ে সন্তানের জন্য এক মায়ের অপেক্ষার কথাগুলো পাঠকের মনে তৈরি করে গভীর দ্যোতনা। ছেলে মাকে, মায়ের মুখের ভাষাকে ভালোবেসে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর মা ছেলেকে চিঠি লেখেন, নারকেলের চিড়া কোটেন। উড়কি ধানের মুড়কি ভাজেন। ছেলের প্রিয় সব খাবার নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন মা।
কবিতায় আছে পুঁইলতার কথা—
পুঁই লতাটা–নেতানো
“খোকা এলি?”
মমতা মাখা মায়ের হাতের রান্না সবার কাছেই প্রিয়। এই কবিতায় উঠে আসা কুমড়ো ফুল, পুঁইলতা, ডালের বড়ি, শজনে ডাঁটা, নারকেলের চিড়া ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই আয়োজন।
রন্ধনপ্রণালি দিয়েছেন সিতারা ফেরদৌস

কুমড়ো ফুলের বড়া
উপকরণ: মিষ্টিকুমড়োর ফুল ১২-১৪টি, ছোলার ডালের বেসন ১ কাপ, পোলাও চালের গুঁড়া ৩ টেবিল চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, শুকনা মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া সামান্য, লবণ স্বাদমতো, ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: কুমড়োর ফুল পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। তেল বাদে বাকি সমস্ত উপকরণ মিলিয়ে পানি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে কুমড়ো ফুল মিশ্রণে ডুবিয়ে গরম ডুবো তেলে ভেজে তেল ঝরিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

পুঁই চিংড়ি
উপকরণ: পুঁইশাক ৫০০ গ্রাম, চিংড়ি ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ, হলুদ সামান্য, লবণ পরিমাণমতো, তেল ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৫-৬টি।
প্রণালি: শাক কুটে বেছে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। চিংড়ি পরিষ্কার করে রাখতে হবে। তেল গরম করে রসুন, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও চিংড়ি দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে হলুদ ও লবণ দিয়ে পুঁইয়ের ডাঁটা দিয়ে কষিয়ে পুঁইশাক দিয়ে মাঝারি জ্বালে রান্না করতে হবে। ঝোল শুকিয়ে এলে নামাতে হবে।

ইলিশ ঝোলে ডালের বড়ি
উপকরণ: ইলিশ মাছ ১ কেজি ওজনের ১টি, মাষকলাইয়ের ডালের বড়ি ১২-১৫টি, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা বাটা আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া এক চা-চামচ, আস্ত কাঁচা মরিচ ৫-৬টি, তেল চার টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: ইলিশ মাছ টুকরো করে ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। ১ টেবিল চামচ তেল দিয়ে বড়ি ভেজে নিতে হবে। বাকি তেল গরম করে পেঁয়াজ বাদামি রং করে ভেজে সব বাটা মসলা ও গুঁড়া মসলা কষিয়ে লবণ ও বড়ি দিয়ে কষাতে হবে। পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর মাছ দিতে হবে। ঝোল কষে এলে কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নামিয়ে নিন।

নারকেল দুধে কুমড়োশাক
উপকরণ: কুমড়োর শাক ৫০০ গ্রাম, নারকেল দুধ ২ কাপ, চিংড়ি ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি ৫-৬টি, তেল ২ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, দারুচিনি ২ টুকরা, এলাচ ১টি, তেজপাতা ১টি, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: শাক কুটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। চিংড়ি পরিষ্কার করে নিতে হবে। গরম তেলে রসুন, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের ফোড়ন দিয়ে চিংড়ি ও কুমড়োশাকের ডাঁটা দিয়ে কষাতে হবে। লবণ, হলুদ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নারকেলের দুধ, তেজপাতা, দারুচিনি ও এলাচ দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। ঝোল কমে তেলের ওপর এলে নামাতে হবে।

শজনেডাঁটায় চ্যাপার পাঁচমিশালি
উপকরণ: শজনেডাঁটা (২ ইঞ্চি করে টুকরা করা) ১০টি, বেগুন (১ ইঞ্চি কিউব করে কাটা) ২ কাপ, মিষ্টি আলু (১ ইঞ্চি করে কিউব করে কাটা) আধা কাপ, তেল ৪ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, চ্যাপা শুঁটকি ৪টি, কাঁচা মরিচ ৪টি, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: শুঁটকি আঁশ ও মাথা ফেলে ধুয়ে নিতে হবে। তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি ও শুঁটকি ভাজতে হবে। এরপর তাতে সব মসলা দিয়ে কষাতে হবে। কষানো মসলায় সব সবজি ঢেলে কিছুক্ষণ নেড়ে অল্প পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। সবজি সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হলে চুলা থেকে নামাতে হবে।

নারকেলের চিড়া
উপকরণ: নারকেল (চিড়ার মতো পাতলা করে কাটা) দেড় কাপ, চিনি ১ কাপ, পানি আধা কাপ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, এলাচগুঁড়া সামান্য।
প্রণালি: চিনি ও পানি চুলায় দিয়ে ফুটে উঠলে লেবুর রস দিন। ময়লা ফেলে দিয়ে নারকেল ও এলাচ দিয়ে মাঝারি জ্বালে নাড়তে হবে। শুকিয়ে ঝরঝরে হলে ছড়ানো পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা করে মুখবন্ধ বয়ামে সংরক্ষণ করতে হবে।