কেক যখন কার্টুন চরিত্র, কখনো বা শাড়ি পরা বউ!

মিশু রহমানের মা জন্মদিন উদ্যাপন পছন্দ করেন না। দিনটিতে তেমন কিছুই করা হয় না কারও। কিন্তু মিশু এবার এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন, যেটা মাকে চমকে দেবে এবং রাগ করবেন না। রবীন্দ্রনাথ মায়ের প্রিয়। ঠিক করলেন, ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ দেবেন। কিন্তু সেটা তো মায়ের পড়া। তবে দেবেন কিন্তু পড়তে নয়, খেতে।
শুধু রচনাবলীই নয়, প্রিয়জনকে চমকে দিতে এখন বিভিন্ন নকশার কেক উপহার দেওয়া যায়। অনলাইনে দিন দিন কাস্টোমাইজ ও ফনডেন্ট কেকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। জন্মদিন, বিয়ে, বিশেষ দিবস বা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে অনেকেই নকশাদার কেকের দিকে ঝুঁকছেন। মিশু রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে প্রায়ই দেখি অনেক ডিজাইনের কেক। ভাবলাম, মায়ের জন্যও কিছু করি। ডিনার শেষে টেবিলে কেকটা রাখার পর মা অবাক হয়ে যায় যে বই রেখেছি বলে। কিন্তু যখন বললাম, এটা কাটতে হবে, কিছুটা ভড়কে যান। তবে খুশি হয়েছিলেন।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে উম্মে আকলিমা এখন কেক বানানোর কারিগর। বেকারি ও কেক বানানোর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের কাছে তিনি আনিকা নামেই বেশি পরিচিত। স্বামী আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছিলেন ডেন্টিস্ট। তিনিও সে পেশা ছেড়ে এখন কেক তৈরির দিকেই মনোযোগ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে তাঁরা শুরু করেন ‘পুনিজ কিচেন’। কেকের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের কাছে নামটি পরিচিত।
এত নকশার কেক বানানোর আগ্রহ সম্পর্কে আকলিমা বলেন, ‘আমরা পুরো পরিবারই ফুডি। আর ছোট থেকে কেক ও সুগার ক্র্যাফটের প্রতি আকর্ষণ ছিল। নিজেদের জন্যই টুকটাক কিছু বানাতাম। শখ থেকেই শুরু হয়েছিল। এখন পেশা হিসেবেই নিয়েছি।’ জানালেন, এর জন্য কোনো প্রশিক্ষণ নেননি। বই পড়ে, ইউটিউব দেখে শিখেছেন।

‘পুনিজ কিচেন’-এর ফেসবুক পেজে ঢুঁ দিলেই দেখা মিলবে নানা রকম কার্টুন চরিত্র, লাল টুকটুকে শাড়ি পরা বউ বসে আছে। হবু জামাইয়ের পাগড়িসহ পাঞ্জাবি, ডাক্তারি সরঞ্জাম, পুরো রান্নাঘরের সেট কিংবা গাড়ি। আরও অনেক কিছুই আছে। এর স্বত্বাধিকারী আকলিমা বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁরা এক হাজারের ওপর নকশা করেছেন। চার থেকে সাত দিন আগে অর্ডার নেওয়া হয়। নকশাভেদে কেজিপ্রতি কেকের দাম পড়বে ২ হাজার ২০০ থেকে আট হাজার টাকা। অনলাইনভিত্তিক এ শপটির অফিস আছে। নকশা বোঝার জন্য কেউ চাইলে সেখানে গিয়েও কথা বলতে পারেন।
আফরিন নাহার সিদ্দীকী পড়াশোনা শেষ করে বেকিংকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ‘ডিবেক’ চালু করেন ২০১৪ সালে। আমেরিকান টিভি চ্যানেল টিএলসির রান্নার নানা অনুষ্ঠান দেখতেন। সেখান থেকেই হাতেখড়ি। আফরিন এরপর পর্যটন করপোরেশনে একটা কোর্স করেন। সুগার ডো দিয়ে বিভিন্ন নকশা করতে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ অন্যকে চমকে দিতে পছন্দ করে। আর জন্মদিনের পাশাপাশি বিয়েতেও কেকের অর্ডার করছে।’ প্রতিদিন তিন থেকে চারটি কেকের অর্ডার পান। ‘ডিবেক’-এ প্রতি কেজি কেকের দাম পড়বে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

শখের বসে প্রায়ই অফিসে সহকর্মীদের কেক বানিয়ে খাওয়াতেন সাদিয়া জামান। তাঁদের উৎসাহেই ফনডেন্ট কেক বানানো শুরু করেন। ছুটির ফাঁকে অনলাইনে কেকের অর্ডার নেন। ফেসবুকে পাওয়া যাবে ‘টুমোরোস’ নামে। নানা রকম কার্টুন চরিত্রের কেক দেখা যায় সেখানে। এদের কেকের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
সুগারক্যাসল, বেকারস ডেলাইট, সুমিজ হট কেকসহ আরও কিছু কেকের অনলাইন শপ আছে। বন্ধু বা প্রিয় মানুষের পছন্দ ও পেশা অনুযায়ী সে ধরনের কেক উপহার দেওয়াই যায়। যাঁকে দেবেন, তিনি এ রকম কিছু পেয়ে খুশিই হবেন। উপহারের ধরনটাও হবে ভিন্ন।