ধোঁয়াটে মটকা চা

তৈরি হচ্ছে মটকা চা
তৈরি হচ্ছে মটকা চা

টিন, সিমেন্টে বানানো ড্রামের মতো দেখতে বিশেষ চুলা। এর মধ্যে কয়লার আগুনে পুড়ছে মাটির ছোট্ট মটকা। পাশেই স্টিলের কেটলিতে রাখা বাড়িতে বানানো বিশেষ মসলার দুধ–চা। ক্রেতার ফরমাশ এলে তামার পাত্রে জ্বলন্ত মটকা রেখে তাতে চা ঢালা হয়। মটকার তাপে চা ফুটতে থাকে, বের হয় ধোঁয়াটে সুবাস। এভাবেই ভিন্ন স্বাদের মটকা চা বানাতে দেখা যায় মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ‘মটকা চা এবং মমো’ ক্যাফেতে। ব্যতিক্রমধর্মী চা এবং মমো নিয়ে বাটার গলিতে ছোট্ট পরিসরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে ক্যাফেটি। মাটির গ্লাসে পরিবেশিত ধোঁয়াটে স্বাদের এই চায়ে চুমুক দিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভোজনরসিকেরা। স্থানীয় ব্যক্তিদেরও এই বিশেষ চা নিয়ে রয়েছে বাড়তি আগ্রহ।
ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে চায়ের নাম এবং ঢাউস আকৃতির চুলা দেখে ফাইরুজ তাসফিয়া দাঁড়িয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ এই কলেজশিক্ষার্থী ফরমাশ দেন এক কাপ চায়ের। মাটির গ্লাসে ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিতেই মেলে ‘পোড়া’ স্বাদ, মুহূর্তেই মুগ্ধতা। পরের দিন প্রিয় বন্ধু থানসা রহমানকে নিয়ে আসেন চায়ের স্বাদ নিতে। এবার খাবার তালিকায় চিকেন মমোও আছে।
আবার সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে এসে এক গ্লাস চায়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে হাসনা রহমানের। তিনি বলেন, এখানকার চায়ের স্বাদ আলাদা। পরিবেশনায় ভিন্নতা আছে।

মটকা চা পরিবেশন করা হয় মাটির গ্লাসে। ছবি: সুমন ইউসুফ
মটকা চা পরিবেশন করা হয় মাটির গ্লাসে। ছবি: সুমন ইউসুফ

দুই তরুণ উদ্যোক্তা রেজাউল কবির ও পূর্ণেন্দু বিশ্বাস মিলে ক্যাফেটি চালু করেছেন। বিশেষ ধরনের চায়ের ক্যাফের পেছনে রয়েছে রোমাঞ্চকর গল্প। ভ্রমণপিপাসু এই উদ্যোক্তারা জানান, ইউটিউবে ভারতের পুনেতে তন্দুরি চায়ের একটি ভিডিও দেখেন। কেবল সেই চায়ের স্বাদ নিতে পুনেতে চলে যান এই দুই বন্ধু। পুনেতে দুই দিন অবস্থানকালে বেশ কয়েকবার চায়ের স্বাদ নেন। ‘দেশে এই চায়ের ক্যাফে করলে কেমন হয়’ ভাবতেই চায়ের প্রস্তুত প্রণালি বোঝার চেষ্টা করেন। চায়ের মসলাপাতি সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পূর্ণেন্দু বিশ্বাস কেরালা চলে যান। আর রেজাউল কবির দেশে চলে আসেন দোকানের পজেশন নিতে। তবে এই চায়ের বাস্তব রূপ দেন পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের স্ত্রী অনুশ্রী হালদার।
ইডেন মহিলা কলেজের এই শিক্ষার্থী ছোটবেলা থেকেই রান্না নিয়ে নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। ইতিমধ্যে রান্না–বিষয়ক কয়েকটি রিয়েলিটি শোতেও অংশ নিয়েছেন। অনুশ্রী বলেন, খামার থেকে সংগ্রহ করা গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে চিনি, বিশেষ চা–পাতা এবং পাঁচ ধরনের মসলা মেশানো হয়। আর চায়ে স্মোকি ফ্লেভার আনতে যোগ করা গরম মটকা। তবে মসলার প্রসঙ্গ এলে মুচকি হেসে জানান, কিছু বিষয় থাক না অজানা।
ক্যাফেটিতে মটকা চায়ের দুটি পদ আছে। ৩৫ টাকা দামের প্রিমিয়াম চায়ে শেষে দুধের সর যোগ করা হয়। তবে পরিমাণভেদে মটকা রেগুলার এবং মিনি চা মিলবে ২৫ টাকা এবং ১৫ টাকায়। খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয় মাটির তৈজসপত্র।
এর পাশাপাশি চিকেন, সবজি মমো, ওনথন, অ্যাপল পাইও মিলবে ক্যাফেটিতে। প্রতিদিন ৫০ লিটার চা বিক্রি হয় বলে জানান তাঁরা। হালকা শীতে ধোঁয়াটে চায়ের স্বাদ নিতে হলে এ দোকানে ঢুঁ মারতে পারেন।

গরুর দুধ
গরুর দুধ

রেসিপি
গরুর দুধ (ঘন), চিনি, বিশেষ (স্পেশাল) চা–পাতা, এলাচিসহ পাঁচ ধরনের মসলা দিয়ে চা বানানো হয়। এই চা তৈরি করে তামার পাত্রে নিয়ে তাতে জ্বলন্ত মটকা রাখা হয়। মটকার তাপে চা ফুটে ধোঁয়াটে স্বাদ যোগ করে। চায়ের স্বাদ বাড়াতে শেষে দুধের সর যোগ করা হয়।