পূজার রান্নাবান্না

একটি বহুজাতিক ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তিনি। বন্ধু আর আত্মীয়মহলে রান্নার জন্যও খ্যাতি আছে বিটপী দাশ চৌধুরীর। রান্নাও করেন নিয়মিত। পূজা-পার্বণে সেই রান্নার তালিকা অবশ্য দীর্ঘ হয়। পছন্দের রান্নার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী রান্নাও করেন তিনি। এবার নকশার পাঠকদের জন্য রেঁধেছেন ও রেসিপি দিয়েছেন বিটপী দাশ চৌধুরী

পূজার সময় মেঝেতে পাত পেড়ে খাবার পরিবেশন করেন বিটপী দাশ চৌধুরী। ছবি: সুমন ইউসুফ
পূজার সময় মেঝেতে পাত পেড়ে খাবার পরিবেশন করেন বিটপী দাশ চৌধুরী। ছবি: সুমন ইউসুফ
কষানো খাসির মাংস
কষানো খাসির মাংস

কষানো খাসির মাংস
উপকরণ: খাসির মাংস আধা কেজি, টক দই ১০০ গ্রাম। পেঁয়াজ বাটা ও পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা পরিমাণমতো। হলুদের গুঁড়া ও শুকনা মরিচ, এলাচি দানা, সাত-আটটা দারুচিনি, সয়াবিন তেল, লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: টকদই, পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা দিয়ে মাংস মাখিয়ে রেখে দিন আধা ঘণ্টা। পাত্রে তেল নিয়ে গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি, এলাচি দানা, দারুচিনি দানা ফাটিয়ে ছেড়ে দিন। পেঁয়াজ বাদামি হয়ে এলে তাতে মাংস ছেড়ে দিন। ১৫-২০ মিনিট নাড়াচাড়া করুন। তেল মাংসের ওপর উঠে এলে দুই কাপ পানি দিয়ে মিনিট দশেক জ্বাল দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে নামানোর দুই মিনিট আগে কয়েকটি কাঁচা মরিচ মাঝখানে লম্বালম্বি কেটে ছেড়ে দিন। নামিয়ে মাংসের ওপর টমেটো ও ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।

মুগডালের শুকনো খিচুড়ি
মুগডালের শুকনো খিচুড়ি

মুগডালের শুকনো খিচুড়ি
উপকরণ: ১ কাপ বাসমতী চাল, আধা কাপ ভাজা মুগডাল, পরিমাণমতো পাঁচফোড়ন, আদা কুচি পরিমাণমতো, সয়াবিন তেল, লবণ ও হলুদের গুঁড়া, শুকনো মরিচ, কাঁচা মরিচ ও তেজপাতা। 
প্রণালি: চাল ও ডাল আলাদা করে ধুয়ে নিন। পাত্রে সয়াবিন তেল ঢেলে গরম করে তেজপাতা ও শুকনো মরিচ নেড়েচেড়ে পাঁচফোড়ন দিয়ে দিন। হালকা ভাজা হয়ে গেলে আদা কুচি ছেড়ে দিন। বাদামি রং হলে তেলের মধ্যে চাল ও ডাল দিয়ে দিন। এরপর পরিমাণমতো লবণ ও এক চা-চামচ হলুদের গুঁড়া দিয়ে চালটা ভেজে নিন। এবার তিন কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে মিনিট দশেক জ্বাল দিলে পানি কমে আসবে। তখনই বুঝতে হবে চাল সেদ্ধ হয়ে নরম হয়ে এসেছে। চুলা থেকে নামানোর আগে কয়েকটি কাঁচা মরিচ লম্বালম্বি করে কেটে খিচুড়ির ওপর ছড়িয়ে দিতে হবে।
খিচুড়ি পরিবেশনের সময় মাছ ভাজি, বেগুন ভাজি বা লুচি দেওয়া যেতে পারে।

আলুর দম
আলুর দম

আলুর দম
উপকরণ: আধা কেজি লাল আলু, পাঁচফোড়ন, শুকনো মরিচ, তেঁতুল বা লেবুর রস, এককাপ চিনি।
প্রণালি: আলুগুলো আগে সেদ্ধ করে নিন। তবে একেবারে গলে যাবার আগেই নামিয়ে খোসা ছাড়িয়ে আধা ভাঙা করে রাখুন। পাত্রে তেল নিয়ে গরম করে তাতে শুকনো মরিচ ছেড়ে দিন। মরিচ লাল হবার পর পাঁচফোড়ন দিয়ে একটু ভেজে নিন। তারপর পর সেদ্ধ আলু ও আধাকাপ পানি, হলুদের গুঁড়া ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে নাড়ুন কিছুক্ষণ। তারপর ঘন হয়ে আসলে দুই কাপ পানি দিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর আধাকাপ লেবুর রস ও এককাপ চিনি দিয়ে নাড়ুন। ঝোল ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে নিন। নামানোর আগে আগে ৬-৭টি কাঁচা মরিচ লম্বালম্বি কেটে দিয়ে দিন। মিনিট খানেক রেখে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

আমড়ার চাটনি
আমড়ার চাটনি

আমড়ার চাটনি
উপকরণ: আধা কেজি কাঁচা আমড়া, এর সঙ্গে স্বাদমতো সরিষা, মৌরি, সাদা জিরা, চিনি, লবণ, হলুদের গুঁড়া, শুকনা মরিচ ও সয়াবিন তেল।
প্রণালি: আমড়া আগে থেকে কেটে (আঁটিসহ) মৌরি ও জিরা দিয়ে ভেজে রাখুন। পাত্রে সয়াবিন তেল গরম করে তার ওপর দুটি শুকনা মরিচ ও সরিষা ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন। একটু লাল হয়ে এলে কেটে রাখা আমড়া তেলের মধ্যে ছেড়ে দিন। হলুদের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে দিন। নাড়াচাড়া করে ঘন হয়ে এলে আধা লিটার পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মিনিট দশেক পর আমড়া নরম হয়ে এলে ডালঘুটনি দিয়ে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে দিন। এখন এতে এক কাপ চিনি দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। চিনি গলে গেলেই নামিয়ে নিন। তবে নামানোর আগ মুহূর্তে ভাজা জিরা ও মৌরির গুঁড়া দিন।

পূজার সময় মেঝেতে পাত পেড়ে খাবার পরিবেশন করেন বিটপী দাশ চৌধুরী। ছবি: সুমন ইউসুফ
পূজার সময় মেঝেতে পাত পেড়ে খাবার পরিবেশন করেন বিটপী দাশ চৌধুরী। ছবি: সুমন ইউসুফ
লাবড়া
লাবড়া

লাবড়া
উপকরণ: মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, আলু, পেঁপে, মুলা, বরবটি, ফুলকপি, কাঁকরোল, পটোল এবং বাজারে পাওয়া যায় এমন যেকোনো সবজি এক কাপ করে। তেজপাতা, পাঁচফোড়ন, শুকনা মরিচ, ছ্যাঁচা আদা, ধনে গুঁড়া, তেল বা ঘি, হলুদের গুঁড়া, লবণ ও কাঁচা মরিচ।
প্রণালি: সব সবজি ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিন। পাত্রে পরিমাণমতো তেল বা ঘি ছড়িয়ে দিন। তেল একটু গরম হয়ে এলে শুকনা মরিচ ও তেজপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন। লাল হওয়ার পর পাঁচফোড়ন ও ছ্যাঁচা আদাটা দিন। একটু ভেজে নিয়ে সব সবজি ঢেলে দিয়ে হলুদের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে নাড়ুন। বাড়তি ঝাল খেতে চাইলে একটু মরিচের গুঁড়াও দিতে পারেন। কিছুক্ষণ নাড়ার পর সবজি থেকে পানি বের হয়ে এলে ঢেকে দিন। মাঝেমধ্যে ঢাকনা খুলে নাড়াচাড়া করুন। সবজি গলে যাওয়ার পর ধনেগুঁড়া ও লম্বা করে কাটা দু-তিনটি কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। দু-তিন মিনিট রেখে একটু ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

আস্ত বুটের ডাল
আস্ত বুটের ডাল

আস্ত বুটের ডাল
উপকরণ: ৪০০ গ্রাম বুটের ডাল। নারকেল কুচি, তেল, মেথি, মৌরি, শুকনো মরিচ ও তেজপাতা পরিমাণমতো।
প্রণালি: প্রেশার কুকারে বুট সেদ্ধ করে নিন। তারপর পাত্রের তেলের মধ্যে শুকনো মরিচ ও তেজপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। লাল হয়ে এলে মেথি, মৌরি ও নারকেল কুচি দিয়ে নাড়ুন। হালকা বাদামি হয়ে এলে পানিসহ সেদ্ধ ডাল দিয়ে লবণ ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে নাড়ুন। ডালটা সেদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে এলে ১ চা-চামচ চিনি দিয়ে নাড়ুন। চিনি দেওয়ার মিনিট দুয়েক পরেই নামিয়ে ফেলুন। পরিবেশনের আগে ওপরে নারকেল কুচি ছড়িয়ে দিন।

সরষে পটোল
সরষে পটোল

সরষে পটোল
উপকরণ: খোসা ছাড়ানো আধা কেজি পটোল, দুই টেবিল চামচ সরিষা ও ৪টা কাঁচা মরিচ একসঙ্গে বাটা, অল্প কিছু আস্ত সরিষা, হলুদ, লবণ ও চিনি।
প্রণালি: খোসা ছাড়ানো পটোলে অল্প লবণ ও হলুদ মেখে ডুবোতেলে হালকাভাবে ভেজে উঠিয়ে নিন। সরিষা ও কাঁচা মরিচ বাটা এক কাপ পানির মধ্যে গুলে নিন। একটি পাত্রে তেল ও আস্ত সরিষা ছেড়ে দিন। লাল হয়ে এলে সরিষা ও কাঁচা মরিচ বাটা তেলের মধ্যে ছেড়ে দিন। মিনিট দুয়েক পরে এর মধ্যে ভাজা পটোল ছেড়ে দিন। পটোল সেদ্ধ হওয়ার জন্য পরিমাণমতো পানি দিন। পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগে দুই চামচ চিনি দিয়ে শুকনো মসলাটা পটোলের গায়ে মেখে নামিয়ে নিন।

পায়েস
পায়েস

পায়েস
উপকরণ: গরুর দুধ দুই লিটার। ১০টি করে এলাচি ও দারুচিনির টুকরা। চার কাপ চিনি, এক কাপ পোলাওয়ের চাল, কিশমিশ, কাঠবাদাম ও ঘি। 
প্রণালি: দুধের সঙ্গে দারুচিনি ও এলাচি মিশিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে পোলাওয়ের চাল পরিষ্কার করুন। চাল ধোয়া যাবে না। এরপর পরিষ্কার চাল ঘি দিয়ে মাখিয়ে রাখুন। গরম দুধ চুলায় পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে তার মধ্যে ঘি দিয়ে মাখানো চাল ছেড়ে দিন। এভাবে মিনিট পনেরো জ্বাল দিন। চালটা সেদ্ধ হয়ে নরম হয়ে এলে চিনি ছেড়ে দিয়ে মিশিয়ে দিন। চাইলে এই সময় কাঠবাদাম ও কিশমিশ দেওয়া যেতে পারে। চিনি দেওয়ার দুই-তিন মিনিট পর নামিয়ে ফেলতে হবে পায়েস। নামানোর আগ মুহূর্তে এলাচি দানার গুঁড়া দেওয়া যেতে পারে।