বাড়িতেই চলুক আয়োজন

ছবি: প্রথম আলো

করোনার এই সময়ে নানা বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে দুর্গোৎসব। হয়তো প্রতিবছরের মতো এবার মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে হইহুল্লোড় হবে না ঠিকই, তাই বলে উৎসবের আনন্দ তো আর হারিয়ে যেতে পারে না। কাছের মানুষদের নিয়ে এই কটি দিন বাড়িতেই চলতে পারে আনন্দ আয়োজন।

ছবি: প্রথম আলো

দুর্গাপূজার মূল আকর্ষণ বিভিন্ন ধরনের খাবারদাবার। বলা চলে, খাবারদাবার না হলে দুর্গাপূজা পরিপূর্ণ হয় না। পূজার দিনগুলোয় বাড়িতে বাড়িতে থাকে নাড়ু, মুড়কি, মোয়াসহ নানা ধরনের খাবার আয়োজন। ষষ্ঠী থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত খাবার টেবিলজুড়ে পরিবেশিত হয় এসব খাবার। কোনো কোনো বাড়িতে পূজার কটা দিন থাকে নানা পদের নিরামিষ খাবারের প্রচলন। আবার কারও বাড়িতে চলে আমিষ আহার।

এই কয়েক দিন খাবার পরিবেশনায় বেশির ভাগ বাড়িতেই কাঁসার বাসনকোসনের ব্যবহার করা হয়। পূজায় যেমন থাকে খাবারের বাড়তি আয়োজন, তেমনি পরিবেশনেও থাকা চাই নতুনত্ব। দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটলেই পূজার আয়োজনের আভিজাত্য আসবে। তাই পূজার এই কটা দিন খাবার টেবিলের সাজে যুক্ত হতে পারে কিছু অনুষঙ্গ, যেগুলো টেবিলের সাজকে দেবে উৎসবের পূর্ণতা। এদিকে খুব ভালো হয়, যদি দিন ধরে ধরে সাজানো যায় খাবার টেবিল। তবে তা যেমন আনবে নতুনত্ব, তেমনি মুগ্ধ করবে অতিথিদের।

টেবিলে রানারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন বাটিকের কাপড়
ছবি: প্রথম আলো

খাবার টেবিলের পুরোনো রানারগুলো পরিবর্তন করে ফেলুন পূজা উপলক্ষে। টেবিলে রানারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন বাটিকের কাপড়। এ ক্ষেত্রে কাপড়টা উজ্জ্বল রং, যেমন: লাল, হলুদ, বাদামি হলে ভালো দেখাবে। ষষ্ঠীর দিন হয়তো বাটিকের কাপড় দিয়ে সাজালেন টেবিল, সপ্তমীর দিন সেখানে থাকতে পারে ফুলের ছোঁয়া। অষ্টমী, নবমী ও দশমীতেও রাখতে পারেন ভিন্ন ভিন্ন রঙের টেবিলক্লথ।

খাবার পরিবেশনার জন্য ষষ্ঠী থেকে নবমী বা দশমীর সকাল পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন কাঁসা বা পিতলের থালা, বাটি, গ্লাস বা বিভিন্ন তৈজসপত্র। সেই থালার চারদিকজুড়ে রাখতে পারেন নানা রকম ফুল। অষ্টমীর দিন খাবার পরিবেশনায় থাকতে পারে কলাপাতার ব্যবহার। পরিবেশনাটা হবে একটু ব্যতিক্রম। সরাসরি কলাপাতায় নয়, খাবার পরিবেশনার জন্য বড় থালায় বিছিয়ে দিতে পারেন কলাপাতাগুলো। সম্ভব হলে পদ্মপাতাও ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা শাল অথবা সেগুনপাতাও ব্যবহার করা যায় খাবার পরিবেশনার জন্য। বছরের অন্যান্য সময় সেগুলো খুব একটা কার্যকর না হলেও পূজার এ কটি দিনে পাতার ব্যবহার একটা বিরাট পরিবর্তন আনবে খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে। একঘেয়েমি কেটে যাবে। এসব পাতার ওপর সারি সারি সাজিয়ে দিন বিভিন্ন খাবারের বাটি। পাতায় খাবার পরিবেশনার সুবিধা হলো সেগুলো পরিষ্কারের ঝামেলা নেই। খাওয়া শেষে ফেলে দিলেই চলে।

খাবার পরিবেশনার জন্য বড় থালায় বিছিয়ে দিতে পারেন কলাপাতা
ছবি: প্রথম আলো

নবমীর দিনে খাবার পরিবেশনা চলতে পারে মাটির বাসনকোসনে। একটু আয়েশ সময় নিয়ে খাবার পরিবেশনের জন্য মাটির থালাবাসন ভালো। খাওয়া শেষে এই বাসনকোসনগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে, কড়া রোদে শুকিয়ে রেখে দিন, তাতে সেগুলো ভালো থাকবে দীর্ঘদিন।

দশমীর খাবারদাবার সাধারণত হয়ে থাকে জমকালো। সেদিন সব বাড়িতে নিরামিষ সরিয়ে আমিষ খাওয়া হয়। তবে সকাল থেকে খাওয়াদাওয়ার ধুম চলতে থাকে। সকালে দই, চিড়া, মুড়কি, মুড়ি, মিষ্টি খাওয়া হয়। মুড়ি, মুড়কি, মোয়া রাখার জন্য বাঁশ বা বেতের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করুন। দই রাখার জন্য ব্যবহার করুন মাটির হাঁড়ি। মিষ্টি রাখার জন্য কাঁসা বা পিতলের পাত্র ব্যবহার করা যায়।

মিষ্টি রাখার জন্য কাঁসা বা পিতলের পাত্র ব্যবহার করা যায়
ছবি: প্রথম আলো

দুপুরে সহজে পরিষ্কার করা যায়, সে রকম থালাবাসন বেছে নিন দশমীর খাবারদাবারের জন্য। কারণ, দশমীর দিন মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের তেল-মসলায় রান্না করা খাবার খাওয়া হয়। এদিন কাঁসার থালা-বাটির পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন চীনামাটির পাত্র। চীনামাটির বাসনকোসন খুব সহজে পরিষ্কার করা যায়।

ফুলের রূপ ও সুগন্ধ পূজার আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে আপনাকে যুক্ত রাখতে সহায়তা করবে
ছবি: প্রথম আলো

পুজোর পুরো সময় বাড়িতে ফুলের ব্যবহার করুন। খাবার টেবিলের একটি পাত্রে রাখুন বিভিন্ন ধরনের ফুল। ফুলের রূপ ও সুগন্ধ পূজার আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে আপনাকে যুক্ত রাখতে সহায়তা করবে। খাবার টেবিলে ফুলের পাশাপাশি মৃদু সুগন্ধের আগরবাতিও রাখতে পারেন।

সুগন্ধ ও সুখাদ্য—এই দুটিই যেহেতু পূজার মূল আকর্ষণ, তাই এগুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করুন, বিভিন্ন সময়ে। তাতে নতুনত্ব আসবে, কেটে যাবে করোনার গুমোট ভাব। বাড়িতেই আয়োজন হোক এবার আনন্দের।