মনের প্রভাবে খাবার যখন এলোমেলো

মন খারাপ থাকলে নাকি অনেকে বেশি খেয়ে ফেলেন
ছবি: অধুনা

মানবমন কতই না বিচিত্র! কেউ ভালোবাসেন রোদ ঝলমলে সকাল, কেউ মেঘধূসর বিকেল। ‘অদৃশ্য’ এই মনের ওপর কিন্তু নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় বিষয় নির্ভর করে। এই যেমন খাবার খাওয়া। বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা কিংবা অন্য কোনো মানসিক অসুস্থতার কারণে যেমন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটে, তেমনি সুস্থ ব্যক্তির মানসিক অবস্থার তারতম্যের কারণেও বদলে যায় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ। ‘বিষণ্নতায় ভুগলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণের আগ্রহ কমে যায়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আবার উল্টোটাও হয়। এ ধরনের রোগী বারবার খান এবং পরিমাণেও খান বেশি। দুশ্চিন্তায় আছেন, এমন রোগীর খাবারে রুচি কমতে পারে এবং তিনি সময়মতো না-ও খেতে পারেন। এর বাইরেও কিছু মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দেখা যায়,’ জানালেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রশিদুল হক।

ভিন্ন মানসিক রোগে ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস

কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগী এমন বস্তু খান, আদতে যা খাদ্যদ্রব্যই নয় (যেমন বালু, কাগজ প্রভৃতি)। শৈশবের মানসিক সমস্যায়, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায়, প্রসব–পরবর্তী মানসিক সমস্যায় এ রকম হতে পারে। সিজোফ্রেনিক ব্যক্তি বেশিও খেতে পারেন কিংবা কমও খেতে পারেন। আবার নোংরা বস্তুও খেতে পারেন। ‘অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মুটিয়ে যাওয়ার অবান্তর আশঙ্কায় খুব কম খান, অথচ দেখা যায় রোগীর ওজন স্বাভাবিকের চাইতেও কম। অন্যদিকে ‘বুলিমিয়া নার্ভোসা’ আক্রান্ত ব্যক্তি একসঙ্গে প্রচুর খাবার খেয়ে ফেলেন এবং তারপরই তাঁর অনুশোচনা হয়। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেন কিংবা যেসব ওষুধ খেলে ডায়রিয়া হতে পারে, সেগুলো সেবন করেন। কেউ আবার মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম করেন।

আরও কারণ

খাবার গ্রহণের তারতম্য হলেই আবার কাউকে মানসিক রোগী মনে করবেন না যেন। এই যেমন ‘শিশু খাচ্ছে না’—অভিভাবক এমনটি মনে করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশু প্রয়োজন অনুসারে ঠিকই খাচ্ছে এবং স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। খাবারে তারতম্যের নানান কারণের মধ্যে আছে—

  • স্বাদ, সুগন্ধ ও সুন্দর পরিবেশন খাবারের আগ্রহ বাড়ায়। অন্যথা হলে আগ্রহ কমে।

  • পছন্দ ও খাদ্যাভ্যাসও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। যেগুলোর অন্যথা হলে অনেকে খেতে পারেন না। কোনো খাবার খেতে গিয়ে কোনো এক সময়ের খারাপ অভিজ্ঞতায় পরে সেই খাবারে অনীহা হতে পারে। শারীরিক অসুবিধার কারণেও রুচি কমে।

ইতিবাচক পরিবর্তন

জীবনযাপনে খুব ছোটখাটো কিন্তু ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন এনে খাদ্য গ্রহণ স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দিলেন মো. রশিদুল হক—

  • প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম চাই। দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস না থাকাই ভালো। সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা খুবই প্রয়োজনীয়।

  • প্রতিদিন দুই বেলা ব্যায়াম করলে খুবই ভালো, না হলেও অন্তত এক বেলা আধা ঘণ্টা সময় রাখুন ব্যায়ামের জন্য, হোক না তা হালকা ব্যায়াম কিংবা হাঁটাহাঁটি। মানসিক চাপ কমবে।

  • খাবার খেতে হবে সঠিক সময়ে। একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে ঘণ্টা তিনেকের ব্যবধানে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

  • খাদ্যতালিকায় আনুন বৈচিত্র্য। রোজ একই ধরনের খাবার খেলে একঘেয়েমি আসতে পারে। টাটকা মৌসুমি ফল, তাজা শাকসবজি ও পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে।

  • পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খেতে চেষ্টা করুন, রোজ অন্তত এক বেলা হলেও। এমন অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

  • তাড়াহুড়া করে খাবেন না, ধীরেসুস্থে চিবিয়ে খাবেন।

  • এসব অভ্যাস গড়ে তোলার পরও খাদ্যাভ্যাস স্বাভাবিক করা না গেলে কিংবা কোনো শারীরিক অসুবিধা থাকলে বা মানসিক রোগের অন্য কোনো লক্ষণ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।