মায়ের জন্মদিনে মেয়ে পাঠালেন ‘প্রথম আলো’ কেক

দেশের বাইরে থাকেন জেইন রউফ। দেশে থাকা মায়ের জন্মদিনে একটু অন্য রকম কিছু উপহার দিতে চাইছিলেন তিনি। বিদেশে বসেই কেকের কারিগর উম্মে সালমাকে মনের সেই ইচ্ছার কথা জানান মেয়ে। সকালে চায়ের সঙ্গে ‘প্রথম আলো’ পড়াটাই মায়ের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এই থিমকে কাজে লাগিয়েই উম্মে সালমা বানিয়ে ফেলেন একটি কেক, যা দেখলে যে কেউ প্রথমে ভাববেন, এটি সত্যিই ওই দিনের টাটকা প্রথম আলো। পুরো পত্রিকাই আসলে খাওয়া যায়—এমন কাগজে বানানো হয়েছে; আর কেকটা তো খাওয়া যাবেই!

এই প্রথম আলো খাওয়াও যায়
ছবি: সংগৃহীত

উম্মে সালমা বলেন, ‘মেয়ে জানিয়েছেন, তাঁর মা কেকটা খুব পছন্দ করেছেন। আর ওই আন্টি উত্তরায় তাঁর বাসায় আমাকে দাওয়াতও দিয়েছেন। কেকের রং, মোটিভসহ বিভিন্ন বিষয় মেয়ে যেমন চেয়েছেন, তেমন করেই বানানোর চেষ্টা করেছি। কেকটা বানানোর পর নিজের কাছেই ভালো লেগে যায়।’

উম্মে সালমা ‘ডীন’স বেকারী’র স্বত্বাধিকারী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ২০১৩ সাল থেকে শখের বশে শুরু করেন বেকিং। তবে ব্যবসায়িক উদ্যোগের শুরু করোনাকালে, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে করোনাতেই মারা যান উম্মে সালমার বাবা। মূলত, করোনায় মানসিক চাপ কমানোর জন্যই উদ্যোগটা শুরু করেছিলেন। তবে শখ বা পছন্দের কাজকেই পেশা হিসেবে নিতে পারায় তা কাজে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।

এই পত্রিকাটি কেকেরই অংশ
ছবি: সংগৃহীত

উম্মে সালমা বললেন, ‘পড়াশোনা শেষ করার পর সেভাবে চাকরিতে ঢোকার সুযোগ হয়নি। করোনায় ঘরে বসা ছিলাম। তবে উদ্যোগের শুরুতে আত্মীয়স্বজনের অনেকেই সাহস দেওয়ার পরিবর্তে ভয় দেখিয়েছে। বলেছে, কেক বানিয়ে কিছু করতে পারব না। আবার অনেকে নিজেরা কেক কিনেছেন। কেবল কেক কিনেই ক্ষান্ত দেননি, তাঁদের পরিচিতদের আমার কাছ থেকে কেক কেনার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন। শুরুতে আমাকেও বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। তবে এখন পরিচিত–অপরিচিত ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

প্রথম আলো পত্রিকা নিয়ে থিম কেকটি সম্পর্কে উম্মে সালমা জানান, কাস্টমাইজড কেক তৈরিতে মূলত ক্রেতাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। নিজের ভাবনাও তুলে ধরার সুযোগ থাকে। আলোচনার পর কেকের একটি খসড়া এঁকে ক্রেতাকে দেখানো হয়; ক্রেতার সেটা পছন্দ হলে তবেই বানানো হয়। কাস্টমাইজড থিম কেকগুলো বানাতে চার ঘণ্টা থেকে দুই দিন পর্যন্ত লেগে যায়। ক্রেতা বেশি দামের বাটার ব্যবহার করবেন, না কম দামের বাটার ব্যবহার করবেন, কত পাউন্ডের কেক, ডিজাইন কেমন—সব মিলে কেকের দাম নির্ধারণ করা হয়। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার কপি, শিউলি ফুল, জামদানি মোটিফ, ‘উইশ নোট’ বা শুভকামনা জানানো—সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বেসিক ভ্যানিলা ফ্লেভারের কেকটি। এই কেকের ক্রেতার বিশেষ আবদার ছিল পত্রিকাটির জন্য। এই মেয়ে তাঁর মায়ের পছন্দকে প্রাধান্য দিতেই এ ধরনের কেক বানানোর অর্ডার দিয়েছিলেন।

উম্মে সালমা
ছবি: সংগৃহীত

উম্মে সালমা বলেন, প্রথম আলোর প্রথম পাতাটি সম্পূর্ণ খাওয়ার যোগ্য কাগজে করা হয়েছে। পত্রিকার ভাঁজকে স্পষ্ট করতে পেছনে দুই পরতের ফনডেন্ট (গুঁড়া চিনি বা আইসিং সুগার দিয়ে বানানো একধরনের চিনির রুটি) লাগানো হয়েছে। কেকের পত্রিকাটি খুলে দুই ভাঁজও করা যাবে। প্রথমে আরেক দিনের পত্রিকার একটি কপি দিয়ে কেক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে সেদিনের পত্রিকার ক্রিকেট খেলার কোনো একটি ছবি অনেক বড় ছিল বলে পুরো পত্রিকার অবয়ব স্পষ্ট করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে তা বাদ দেওয়া হয়।

রাজধানীর শ্যামলীতে ১১ বছর বয়সী ছেলে এবং ব্যাংকার স্বামী গোলাম রব্বানীকে নিয়ে উম্মে সালমার সংসার। বাসায় বসে সালমা একাই কেক বানান। স্বামী ও ছেলে মাঝেমধ্যে সহায়তা করেন। কেকের কাঁচামাল কেনার জন্য পরিচিত ডিলার এবং কেক বানানোর পর তা ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সালমা বলেন, দিনে তিনি দুটি, খুব বেশি হলে তিনটি কেকের অর্ডার নেন। শীতকালে বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বেশি থাকে বলে এ সময় কেকের বিক্রি বাড়ে। এ সময় খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। অন্য সময় লাভের পরিমাণ কমে যায়।
ব্যবসা থেকে আসা টাকা দিয়ে কী করেন? জানতে চাইতেই উম্মে সালমা বললেন, ‘নিজেই খরচ করি। স্বামী বা অন্যরা কেউ কিছু বলেন না। মাকে কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করি। নিজের শখ-আহ্লাদ পূরণ করি। আর স্বামীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঝেমধ্যে সংসারের জন্যও কিছু করার চেষ্টা করি। তবে ব্যবসার বয়স খুব বেশি দিনের নয়, তাই সেভাবে ইচ্ছা অনুযায়ী সব করতে পারি না।’

প্রথম আলো কেক
ছবি: সংগৃহীত

এখন পর্যন্ত এ ব্যবসায় বড় চ্যালেঞ্জ কী, তা জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার কেকের অর্ডার বেশি পাই। অন্যদিকে, এই দুই দিন স্বামীর অফিস ছুটি থাকে। তাই স্বামী ও সন্তানকে কোয়ালিটি বা গুণগত সময় দেওয়ায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। নিজের পরিচিতি বাড়ানোসহ নতুন ব্যবসা বলে আমাকেও এ ব্যবসায় একটু বেশি সময় দিতে হচ্ছে এবং পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’