মায়ের হাতের রান্না
>প্রত্যেক সন্তানের কাছেই প্রিয় তার মায়ের হাতের রান্না করা খাবার। আজ যাঁরা খ্যাতিমান রান্নাবিদ, তাঁরাও রান্নাটা শিখেছেন মায়েদের কাছ থেকে। ৮ মে মা দিবসের আগে নকশার নিয়মিত কয়েকজন রান্নাবিদ পাঠকদের জন্য দিয়েছেন মায়ের কাছ থেকে শেখা রান্নার রেসিপি।

বিফ কাটা মসলা
রেসিপি: ফাতেমা আজিজ
উপকরণ: গরুর মাংস টুকরা করা (পেছনের রানের চাকা মাংস) ১ কেজি, পেঁয়াজ মিহি করে স্লাইস করা ১ কাপ + আধা কাপ, তেজপাতা ১টি, দারুচিনি (২ সেন্টিমিটার) ৩টি, ছোট এলাচি ৪টি, গোলমরিচ আধা চা-চামচ, আদা (মিহি কুচি/ঝুরি করা) ১ টেবিল চামচ, রসুন কুচি দেড় চা-চামচ, গোটা শুকনা মরিচ ৬টি, টক দই সিকি কাপ, সিরকা ২ টেবিল চামচ, লবণ ২ চা-চামচ বা স্বাদমতো, চিনি ২ চা-চামচ বা স্বাদমতো, মাঝারি আকারের আলু ৪টি (একেকটি আলু লম্বালম্বি ৬ টুকরা হবে) ও তেল পৌনে এক কাপ।
প্রণালি: মাংস ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। যেই হাঁড়িতে মাংস চড়াবেন, সেই হাঁড়িতে মাংস নিয়ে আলু, ১ কাপ পেঁয়াজ কুচি, চিনি ও আধা কাপ তেল বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিন। এবার হাতধোয়া সামান্য পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে রান্না করুন কিছুক্ষণ। ফুটে ওঠার পর মাংস কিছুটা সেদ্ধ হয়ে এলে আলুর টুকরাগুলো দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। পাঁচ-সাত মিনিট পর ঢাকনা খুলে আরেকবার নেড়ে আঁচ কমিয়ে ঢেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা মৃদু আঁচে রান্না করুন। পানি শুকিয়ে গেলে মাংস সেদ্ধ না হলে আধা কাপ ফুটানো গরম পানি দিয়ে নেড়ে পুনরায় ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হলে পাশের চুলায় একটি প্যানে বাকি তেল গরম করে অবশিষ্ট পেঁয়াজ কুচি মাঝারি আঁচে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ কিছুটা নরম হয়ে রং পরিবর্তন হয়ে এলে চিনি দিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন। সোনালি রং করে ভেজে কাটা মসলার মাংস কারি বাগার দিতে হবে। মাংসের সঙ্গে বেরেস্তা ভালো করে মিশিয়ে নেড়ে আঁচ কমিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। মাংস থেকে তেল ছাড়া শুরু করলে চুলা বন্ধ করে দিন। পাঁচ মিনিট পর পাত্রে বেড়ে পরোটা, লুচি, নান, সাদা ভাত বা পোলাওয়ের সঙ্গে গরম-গরম পরিবেশন করুন। কখনো যদি এই তরকারি বেঁচে যায়, সেটা দিয়ে মুড়ির সঙ্গে মাখিয়ে খেতে পারেন।
মা ফওজিয়া খাতুনের কাছ থেকে এ রেসিিপটি শিখেছেন ফাতেমা আজিজ।

নারকেল দুধে মোরগ পোলাও
রেসিপি: জেবুন্নেসা বেগম
উপকরণ: পোলাওয়ের চাল ১ কেজি, ঘি আধা কাপ, তেল আধা কাপ, দেশি মুরগি আধা কেজি, লবণ পরিমাণমতো, আলু ১টি, চিনি ১ চা-চামচ, নারকেলের দুধ ২ কাপ, কাঁচা মরিচ ৭-৮টি, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা কয়েকটা, রসুনবাটা দেড় টেবিল চামচ, বেরেস্তাবাটা দেড় চা-চামচ, কেওড়া পানি দেড় টেবিল চামচ, বাদামবাটা ১ চা-চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, কিশমিশবাটা ১ চা-চামচ এবং এলাচ, জায়ফল ও জয়ত্রী গুঁড়া আধা চা-চামচ।
প্রণালি: পোলাওয়ের চাল পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে লেবুর রস দিয়ে মেখে রাখুন। আলু টুকরা করে সামান্য লবণ মেখে ভেজে রাখুন। দেড় টেবিল চামচ ঘি রেখে বাকি ঘি ও তেল পাত্রে ঢেলে গরম করে নিন। এতে আদা বাটা, রসুনবাটা ও বেরেস্তাবাটা কষিয়ে ঢেলে দিন। মাংস কষিয়ে বাদামবাটা, কিশমিশবাটা ও লবণ দিন। এবার চার ভাগের এক ভাগ নারকেলের দুধ দিয়ে ঢেকে দিন। প্রয়োজনে সামান্য পানি দিন। মাংস সেদ্ধ হলে তেল ওপরে উঠে এলে এলাচ, জায়ফল, জয়ত্রীর গুঁড়া ও চিনি দিয়ে নামিয়ে নিন। মাংস তুলে ভাজা মসলা আলাদা করে রাখুন। মসলা থেকে তেল ছেঁকে রাখুন। অন্য পাত্রে বাকি ঘিতে এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা ভেজে সামান্য পেঁয়াজ কুচি, বাকি আদা ও রসুনবাটা দিয়ে পোলাওয়ের চাল ও মুরগির তেল দিয়ে কষান। দেড় কাপ নারকেলের দুধ ও দেড় কাপ গরম পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা তুলে কিছু পোলাও তুলে নিয়ে ভাজা মসলা ও মুরগি দিয়ে পোলাও দিয়ে ঢেকে দিন। এর ওপর কেওড়া পানি, কিশমিশ, বেরেস্তা, কাঁচা মরিচ দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে দিন। ৫-৬ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দিন। গরম গরম সালাদের সঙ্গে পরিবেশন।
মা ফেরদৌস আরা খন্দকারের কাছ থেকে জেবুন্নেসা বেগম শিখেছেন এ রান্নাটি।

মধুভাত
রেসিপি: জোবাইদা আশরাফ
উপকরণ: বিন্নি চাল ২ কাপ, কালিজিরা চাল ৬ কাপ, জালা চালের গুঁড়া ১ কাপ (অঙ্কুরোদ্গম হওয়া ধানের চাল), নারকেল কোরা ২ কাপ, চিনি ৪ কাপ বা স্বাদমতো, তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচি ৪টা করে, চিনাবাদাম, কিশমিশ, লবণ পরিমাণমতো ও গুঁড়া দুধ ২ কাপ।
প্রণালি: বিন্নি চাল, কালিজিরা চাল ধুয়ে একটা বড় ডেকচিতে নিতে হবে। চালের তিন গুণ বেশি পানি দিয়ে চাল সেদ্ধ করতে হবে। চিনি, জালা চালের গুঁড়া ছাড়া বাকি সব উপকরণ দিয়ে ভাত রান্না করতে হবে। সেদ্ধ হলে পায়েসের মতো ঘুঁটনি দিয়ে ঘুঁটে নিতে হবে। গরম অবস্থায় জালা চালের গুঁড়া মেশাতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে ভালো করে ঘুঁটনি দিয়ে ঘুঁটে নিতে হবে। চিনি মেশাতে হবে। এরপর ডেকচির ঢাকনার ওপর মোটা টাওয়েল দিয়ে পুরো ডেকচি বেঁধে রাখতে হবে ৮-৯ ঘণ্টা। তারপর ফ্রেশ নারিকেল দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। এটা সাধারণত রাতে রান্না করে রেখে সকালে খাওয়া হয়। গরমের সময় ফ্রিজে রেখে পরিবেশন করলে অনেক স্বাদ হয়।
মা জরিনা বেগমের কাছ থেকে এ রান্নাটা শিখেছেন জোবাইদা আশারাফ।

ফলি মাছের কোপ্তা
রেসিপি: সিতারা ফিরদৌস
উপকরণ-১: ফলি মাছের পিঠের অংশ ৫০০ গ্রাম, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচের চার ভাগের এক ভাগ, মরিচবাটা আধা চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, তেল ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ ও ভাত আধা কাপ।
উপকরণ-২: ঘন নারকেলের দুধ ২ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, জিরাবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, বেরেস্তা আধা কাপ, শুকনা মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ পরিমাণমতো, চিনি আধা চা-চামচ ও গরম মসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ।
প্রণালি: ভাত বেটে নিতে হবে। মাছ থেঁতো করে কাটা বেছে, সব উপকরণ দিয়ে মাখিয়ে আধা ইঞ্চি পুরু করে রুটির মতো বেলে পাঁচ-সাত মিনিট ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। পানি থেকে উঠিয়ে ঠান্ডা করে ছোট ছোট বরফি আকারে কেটে নিতে হবে। তেল গরম করে সব বাটা মসলা ও গুঁড়া মসলা কষিয়ে নারকেলের দুধ দিতে হবে। ফুটে উঠলে লবণ ও চিনি দিয়ে মাছের বরফিগুলো দিতে হবে। তেলের ওপর এলে বেরেস্তা ও গরম মসলার গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নামাতে হবে।
মা সাঈদা রহমানের কাছ থেকে এই রেসিপিটি শিখেছেন সিতারা ফিরদৌস।