রান্না নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন মারিয়া

রান্না-এই শব্দটার সঙ্গে বেশ ছোটবেলা থেকেই পরিচিত উপস্থাপক ও মডেল মারিয়া নূর। মা নাসিমা খান পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকতেন, তখন স্কুল থেকে ফিরে নিজের পছন্দের খাবারটা নিজেই তৈরি করতেন মারিয়া নূর। তখন থেকেই রান্নায় হাতেখড়ি মারিয়ার। মা-ও ভালো রাঁধতে পারেন, তাই মারিয়া এই রান্না শিখেছেন বেশ নিখুঁতভাবেই।
বর্ণিল খাবারদাবারের প্রচ্ছদের জন্য ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে কথা হচ্ছিল মারিয়া নূরের সঙ্গে। কথার মাঝেই যেভাবে ঝটপট হাতে রেসিপি লিখে দিচ্ছিলেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছিল এ কাজে কতটা পটু তিনি।
‘জানেন, এখনো যত রাতই হোক না কেন, বাড়ি ফিরে নিজের রান্নাটা নিজেই করে থাকি,’ বললেন মারিয়া। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কাজ শেষ করলেন। এই কাজ করতে গিয়ে বেশ মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। ‘আমরা তো রান্না করার সময় শুধু রান্নাতেই গুরুত্ব দিই। তবে ছুরি দিয়ে সবজি-মাছ কাটা, খুন্তি নাড়ানো, রান্নায় তেল, লবণ ছড়িয়ে দেওয়ার যে বিশেষ ধরন আছে, তা এ অনুষ্ঠান করতে গিয়েই জানতে পারলাম।’
রান্নার ব্যাপারে যাঁর এত আগ্রহ, তিনি খেতেও নিশ্চয়ই পছন্দ করেন? মারিয়ার উত্তর একেবারেই উল্টো। ‘আসলে খাবারদাবারের ব্যাপারে আগ্রহ আমার একেবারেই কম। অনেক দিন ধরেই ভাত খাই না। নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে প্রতিদিনই বাসায় মুরগি দিয়ে কোনো না কোনো খাবার তৈরি করি। বাইরে গেলে সুশি আর স্যুপ প্রথম পছন্দ। ভালোবাসি মায়ের হাতে তৈরি সবজির যেকোনো পদ।’
মারিয়া যে পাকা রাঁধুনি, কাছের মানুষদের কাছে তা নিশ্চয়ই আর অজানা নয়। তো কাছের মানুষেরা তাঁর হাতের কোন রান্নাটি খেয়ে মুগ্ধ হন, জানতে চাইলে উত্তর এল, পেরি পেরি চিকেন আর গরুর ঝাল মাংস। এই দুটি পদ খাওয়ার জন্য বন্ধুরা প্রায়ই হানা দেয় তাঁর বাড়িতে। ‘আর একটা জিনিস আমি ভালো রান্না পারি। তা হলো মসুর ডাল।’ মারিয়ার বাড়ি কুমিল্লায়। এ অঞ্চলে মসুর ডাল রান্নার রয়েছে সুখ্যাতি। চচ্চড়ির মতো বিশেষভাবে এই ডাল রান্নার পদ্ধতিটা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন। রান্নার পাশাপাশি নিজ হাতে বাজার করাটাও তাঁর পছন্দ। নিজ হাতে বাজার করা গেলে নাকি রান্নার প্রতি মনোযোগ আরও বেড়ে যায়। আর তাই কী রান্না করবেন, তা মাথায় রেখেই মারিয়া বেরিয়ে পড়েন বাজার করতে।
মারিয়ারা তিন বোন এক ভাই। বড় ভাইয়ের রাত জেগে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস ছিল। এই সময় বোনদের হাতে তৈরি স্ন্যাকস খাওয়ার একটা আবদার ছিল তাঁর। ‘বড় আপুই এ কাজটা করতেন। একবার আমার ওপর পড়ল সেই দায়িত্ব। রান্নাঘরে গিয়ে কী করব ভাবতে ভাবতেই আলু দিয়ে পাকোড়ার মতো একটা খাবার বানানোর বুদ্ধি এল মাথায়। ভাইয়ার এতই পছন্দ হয়েছিল যে এরপর থেকে নাশতা বানানোর দায়িত্ব আমার ওপরই এসে পড়ে।’ তখনই রান্নাবান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু মারিয়ার। বললেন, ‘রান্নাবান্না নিয়ে খেলতে ভালোবাসি।’ এভাবেই এক উপকরণের সঙ্গে আরেকটা মিশিয়ে সাধারণ রান্নায় মারিয়া আনেন ভিন্নতা।
মারিয়া নূরের কয়েকটি রেসিপি

বিফ ভুনা খিচুড়ি
উপকরণ: গরুর মাংসের জন্য: গরুর মাংস ১ কেজি, আদাবাটা ২ চা-চামচ, রসুনবাটা আড়াই চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, মরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, গরম মসলা আধা চা-চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, জয়ত্রী আধা চা-চামচ, জায়ফল আধা চা-চামচ, আলুবোখারা ১০-১২টি ও সরিষার তেল ২০০ মিলিলিটার। গরুর মাংস আলাদা করে রান্না করে রাখতে হবে।
খিচুড়ির জন্য: চাল ১ কেজি, মসুর ডাল ৭৫০ গ্রাম, সরিষার তেল ২০০ মিলিলিটার, রসুনের কোয়া ১০-১২টি, পেঁয়াজকুচি সামান্য, এলাচি ৪-৫টি, দারুচিনি ৩-৪টি, লবঙ্গ ৫-৬টা, তেজপাতা ২-৩টি, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি।

প্রণালি: ননস্টিক প্যানে তেল দিয়ে সব ধরনের গরমমসলা আর পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে। এরপর এতে বাটা মসলা দিতে হবে। এবার ধুয়ে রাখা চাল ভালো করে একসঙ্গে ভেজে এরপর ২ কেজি ফোটানো পানি দিয়ে দিতে হবে, সঙ্গে কাঁচা মরিচ। মোটামুটি পানি শুকিয়ে এলে রান্না করা গরুর মাংস দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। এরপর নামানোর আগে বেরেস্তা আর ধনেপাতা কুচি দিয়ে দিন।

আলুবোখারায় গরুর মাংস
উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, আদাবাটা ২ চা-চামচ, রসুনবাটা আড়াই চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, মরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, গরমমসলা আধা চা-চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, জয়ত্রী আধা চা-চামচ, জায়ফল আধা চা-চামচ, আলুবোখারা ১০-১২টি, কিশমিশ ১০-১২টি ও সরিষার তেল ২০০ মিলিলিটার।
প্রণালি: আলুবোখারার দানা ছড়িয়ে কিশমিশের সঙ্গে বেটে নিতে হবে। একটা হাঁড়িতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে নিন। সব মসলা দিয়ে গরুর মাংস আগেই মেরিনেট করে নিতে হবে। এবার বাদামি করে ভাজা পেঁয়াজে গরুর মাংস ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। একদম ভাজা ভাজা হয়ে এলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। আলুবোখারায় গরুর মাংস মাখা মাখা হলেই ভালো লাগে। একটা টক ঝাল মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়।

তিরামিসু
উপকরণ: চিজ ৩০০ গ্রাম, ডিম ৩টি, লিজিং সুগার, লেডিস ফিঙ্গার, কোকো পাউডার ও এসপ্রেসো শট।
প্রণালি: ডিমের সাদা অংশ আর কুসুম আলাদা করে বিট করে নিতে হবে। কুসুমের সঙ্গে লিজিং সুগার (মিষ্টি যে যে রকম পছন্দ করে সে অনুযায়ী), চিজ দিয়ে বিট করতে হবে। এরপর এতে বিট করা সাদা অংশটাও দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বিট করতে হবে। মিশ্রণটি বেশ ঘন হবে। এবার বিস্কুট গুঁড়া করে এর গ্লাসে দিতে হবে। প্রথমে তাতে এসপ্রেসো শট এবং আরেক স্তর বিস্কুটের গুঁড়া, এরপর একটার পর একটা স্তরে বিস্কুটের গুঁড়া দিতে হবে।