মোগলেরা বাংলা থেকে বিদায় নিয়েছে ঢের আগেই। তবে যায়নি তাদের বিখ্যাত খাবারের কদর। যেমন বিরিয়ানির কথাই ধরুন, ছেলে থেকে বুড়ো—কার না প্রিয় এই মোগলই খাবার? উৎসব, পরব হলে তো কথাই নেই, উপলক্ষ ছাড়াও বিরিয়ানি খেতে আগ্রহের কমতি নেই অনেকেরই। ঢাকায় বিরিয়ানির জন্য বেশ কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান রয়েছে পুরান ঢাকায়। তবে এখন গুলশান, বনানীসহ সব এলাকাতেই বিরিয়ানির দোকান গড়ে উঠেছে। ঢাকার খ্যাতনামা কয়েকটি বিরিয়ানির খোঁজ দেওয়া হলো এখানে। শীতের মৌসুমে বেশ জমবে গরম বিরিয়ানি। ছুটির দিনে রসনার তৃপ্তির জন্য যেতে পারেন ভোজনরসিকেরা।
আদি হাজির বিরিয়ানি: বিরিয়ানির মধ্যে হাজির বিরিয়ানির রয়েছে বিশেষ কদর। আদি হাজির খোঁজে যেতে হবে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের আলাউদ্দিন রোডে। এখানে প্রায় ৭০ বছর ধরে বিরিয়ানি তৈরি করে ভোজনরসিকদের তৃপ্ত করছেন হাজিরা। এ বিরিয়ানির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, রান্না করা হয় সরিষার তেলে। এর সুঘ্রাণও অনেককে টানে। ১৯৩৯ সালে হাজি গোলাম হোসেন প্রথম এখানে বিরিয়ানি বিক্রি শুরু করেন। মতিঝিল ও বসুন্ধরায় তাঁদের আরও দুটি শাখা আছে। এখানে শুধু বিরিয়ানিই পাবেন। প্রতি প্লেটের দাম ১৩০ টাকা। বোরহানি প্রতি লিটারের দাম ১২০ টাকা। বাসায় নিতে চাইলে আছে অভিনব ব্যবস্থা। কাঁঠাল পাতার প্যাকেটে দেওয়া হয়। তবে চাহিদা বেশি হলে দু-তিন দিন আগেই জানাতে হয়।
পুরান ঢাকার আরও কিছু বিরিয়ানি: হাজির বিরিয়ানির পাশেই যেমন আছে হানিফ বিরিয়ানি। এর সুনামও বেশ। এ ছাড়া আছে ভাই ভাই, মামুন, মক্কা-মদীনা ও বিসমিল্লাহ বিরিয়ানি। এখানকার দোকানগুলোতে প্রতি প্লেট বিরিয়ানির দাম গড়ে ৯০-১১০ টাকা।
নান্নার বিরিয়ানি: নান্নার বিরিয়ানির স্বাদ নিতে চাইলে যেতে পারেন পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি। খাসির কাচ্চি ১১০ টাকা, আর খাসির বিরিয়ানির দাম পড়বে ১০০ টাকা। এখানে প্রতি প্লেট মোরগ-পোলাওয়ের দাম পড়বে ১১০ টাকা। এদের আরও দুটি শাখা আছে চানখাঁরপুল ও শেওড়াপাড়ায়।

ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি: ১৯৬৬ সালে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্যানটিনের মাধ্যমে শুরু। ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছেছে জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লন্ডন হয়ে জর্ডান পর্যন্ত। এখানে কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানির সঙ্গে পাবেন বিফ তেহারিও। দাম হাফ ১৪০ টাকা, ফুল ২৪০ টাকা। এ ছাড়া চিকেন রোস্ট, ঝাল কাবাব ও ফিরনির স্বাদও নিতে পারেন। রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, মতিঝিল, মগবাজার ও বেইলি রোডে এর শাখা রয়েছে।
স্টার: যেতে পারেন স্টার কাবাব ও বিরিয়ানি হাউসেও। পুরান ঢাকা ঠাটারীবাজারে মূল শাখা। এ ছাড়া ধানমন্ডি-২, ধানমন্ডি-১৫ ও কারওয়ান বাজারে এদের শাখা আছে। এখানে চিকিন বিরিয়ানির সঙ্গে লেগ রোস্টও চেখে দেখতে পারেন।
নীলক্ষেতের তেহারি: তেহারি খেতে চাইলে যেতে পারেন রাজধানীর নীলক্ষেতে। এখানকার রয়েল তেহারির নাম বেশ। তেহারি ছাড়াও নীলক্ষেতের দোকানগুলোতে খিচুড়ি ও মোরগ-পোলাও পাওয়া যায়। এখানে হাফ তেহারির দাম ৫৫-৬০ টাকা। রয়েল ছাড়াও এখানকার মোবারক তেহারির চাহিদাও বেশ। চানখাঁরপুল ছাড়াও লালমাটিয়ার স্বাদ তেহারির কদর রয়েছে ভোজনরসিকদের কাছে।
ঘরোয়া: রাজধানীর মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের খ্যাতি খিচুড়ির জন্য। তবে চেখে দেখতে পারেন এখানের মুরগির বিরিয়ানি ও খাসির কাচ্চিও। মুরগির বিরিয়ানির দাম ১৩০ টাকা আর খাসির কাচ্চির জন্য গুনতে হবে ১৫০ টাকা। এগুলোর সঙ্গে একটু লাবাং, বোরহানি না হলে কেমন? লাবাং ও বোরহানি প্রতি লিটার ১৪০ টাকা, আর খিচুড়ির দাম ১৪০ টাকা।
সোবহানবাগের তেহারি ঘর: ধানমন্ডি ২৭ নম্বর প্রধান সড়কের পাশে সোবহানবাগ মসজিদ-সংলগ্ন তেহারি ঘরের তেহারি ও বিরিয়ানির বেশ কদর রয়েছে। দাম ১৪০ টাকা। এ ছাড়া এখানকার ছোট আলু দিয়ে তৈরি বিফ খিচুরিও বেশ জনপ্রিয়।