সিদ্দিকা কবীরের প্রিয় ৫ পদ

মটরশুঁটি পোলাও
উপকরণ: পোলাও চাল ৮ কাপ, মটরশুঁটি ২ কাপ, গাজর (ছোট মিহি কুচি) আধা কাপ, পেঁয়াজ স্লাইস আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা ৪ চা-চামচ, ঘি অথবা তেল ১ কাপ, টক দই আধা কাপ, দারুচিনি (২ সেন্টিমিটার) ৪ টুকরা, এলাচ ৮টি, ফুটানো গরম পানি ১৪ কাপ, লবণ ৩ টেবিল চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী।
প্রণালি: হাঁড়িতে ঘি বা তেল গরম করে পেঁয়াজ বেরেস্তা করে ঘি অথবা তেল ছেঁকে তুলে কিচেন পেপারে রাখুন। একই তেল বা ঘিয়ে তেজপাতা ও গরম মসলার ফোড়ন দিয়ে আদা বাটা ও পেঁয়াজ বাটা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে ফুটানো গরম পানি দিয়ে নেড়ে দিন। পানি ফুটে উঠলে চাল ও লবণ দিয়ে নাড়ুন। ফুটে উঠলে মটরশুঁটি ও টক দই ফেটে দিন (মটরশুঁটি খুব কচি হলে ১০ মিনিট পরে দেবেন)। তারপর ঝুরি করা মিহি গাজর ছিটিয়ে দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। মৃদু আঁচে ঢাকনা না খুলে ২০-২২ মিনিট রান্না করুন। এবার ঢাকনা খুলে কাঁচা মরিচ ও অর্ধেক বেরেস্তা ছিটিয়ে দিয়ে পোলাও দু-একবার আলতোভাবে নেড়ে ঢেকে দিন। চুলা থেকে নামিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে বাকি বেরেস্তা ছিটিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

তাজ কাবাব
উপকরণ: গরুর পেছনের রানের চাকা মাংস ১ কেজি, আলু (মাঝারি বড় আকারের) ৬টি, গোল পাকা টমেটো ৬টি, দেশি পেঁয়াজ (বড়) ১২টি, রসুন ১২ কোয়া, গোটা শুকনা মরিচ ৮টি, সিরকা ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল এক কাপের চার ভাগের তিন ভাগ কাপ, আদা বাটা ২ চা-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, জিরা বাটা ২ চা-চামচ, গোলমরিচ বাটা আধা চা-চামচ, ধনে গুঁড়া আধা টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, পোস্তদানা বাটা ১ টেবিল চামচ, লবণ ২ চা-চামচ বা স্বাদমতো, জায়ফল গুঁড়া অথবা বাটা এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ, জয়ত্রী গুঁড়া বা বাটা আধা চা-চামচ, দারুচিনি (২ সেন্টিমিটার) ৬ বা ৭ টুকরা, ছোট এলাচ ৩-৪টি, লবঙ্গ ৩টি। (দারুচিনি, ছোট এলাচ ও লবঙ্গ একসঙ্গে ভেজে ঠান্ডা করে বেটে বা গুঁড়া করে নিন)।
প্রণালি: মাংস আধা ইঞ্চি পুরু করে চাক চাক করে টুকরা করে নিয়ে পাটায় সামান্য থেঁতলে নিন। একটি মিক্সিং বোলে সিরকা, লবণ এবং সব ধরনের বাটা ও গুঁড়া মসলা মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। আলু, টমেটো ও পেঁয়াজ আধা ইঞ্চি পুরু করে গোল চাক চাক করে কেটে ভিন্ন পাত্রে রাখুন। একটি প্যানে তেল ব্রাশ করে প্রথমে আলুর দুই ধারের টুকরাগুলো বিছিয়ে তার ওপর মাংস বিছিয়ে দিন। এরপর মাংসের ওপরে একে একে প্রথমে আলু, টমেটো ও পেঁয়াজ স্তরে স্তরে বিছিয়ে দিয়ে কিছু সরিষার তেল, কয়েকটি করে রসুনের কোয়া ও শুকনা মরিচ দিন। পুনরায় একইভাবে ক্রমান্বয়ে মাংস, আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুনের কোয়া ও শুকনা মরিচ স্তরে স্তরে বিছিয়ে দিন। অবশিষ্ট সরিষার তেল ও পেঁয়াজ দিন। মাংস, আলু ও পেঁয়াজের একেবারে ওপরের লেয়ারের কিছু কম পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে দিন। তবে মনে রাখতে হবে, তাজ কাবাব রান্নার সময় নাড়া যাবে না। বেশ কয়েকবার ফুটে উঠলে পানি কিছুটা কমে গেলে আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প আঁচে তাওয়ার ওপরে রেখে ঢেকে রান্না করুন। মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে পানি টেনে তেল ছাড়তে শুরু করলে নামিয়ে পোলাও, পরোটা, বাখরখানি বা নানরুটির সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

খাসির মাংসের কোর্মা
উপকরণ: খাসির মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ বাটা এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, দারুচিনি (২ সেন্টিমিটার) ৩ টুকরা, ছোট এলাচ ৪টি, তেজপাতা ২টি, কেওড়া ২ টেবিল চামচ, জাফরান আধা চা-চামচ, ঘন দুধ দিয়ে বাটা পোস্তদানা, কাজুবাদাম ও কাঠবাদাম দেড় টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, লবণ ২ চা-চামচ বা স্বাদমতো, চিনি ২ চা-চামচ, তেল সিকি কাপ, ঘি সিকি কাপ, পেঁয়াজ স্লাইস ৬টি, কাঁচামরিচ ৮টি, লেবুর রস আধা টেবিল চামচ, বাদাম ও পেস্তা কুচি ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: মাংসের চর্বি পরিষ্কার করে ধুয়ে আধা চা-চামচ লবণ মেখে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। কেওড়ায় জাফরান ভিজিয়ে রাখুন। প্যানে বা হাঁড়িতে মাংস নিয়ে ঘি, গোটা গরম মসলা, তেজপাতা, চিনি, লেবুর রস, পেঁয়াজ স্লাইস, কেওড়ায় ভেজানো জাফরান, বাদাম ও পেস্তা কুচি এবং কাঁচা মরিচ বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে মেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে দিন। ৩০ মিনিট পর মেখে রাখা মাংসের হাঁড়ি মাঝারি আঁচে ঢেকে রান্না করুন। মাংস সেদ্ধ না হলে ১ থেকে দেড় কাপের মতো ফোটানো গরম পানি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে চিনি ও কেওড়া জলে মেশানো জাফরান দিয়ে নাড়ুন। অল্প আঁচে ঢেকে কিছুক্ষণ রান্না করুন। পাশের চুলায় প্যানে ঘি গরম করে তেজপাতা ও গোটা গরম মসলার ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ স্লাইস সোনালি করে ভেজে মাংস বাগার দিন। তারপর আঁচ কমিয়ে তাওয়ার ওপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট দমে রেখে লেবুর রস দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন এবং ৫ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দিন। খাসির মাংসের এই কোর্মা যত জ্বাল দিয়ে ভাজা হবে, স্বাদ ততটাই বেড়ে যাবে। পোলাও অথবা পরোটার সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

দুধ সেমাই
উপকরণ: ঘন দুধ (৬ লিটার দুধকে জ্বাল দিয়ে) ৩ লিটার করে নিতে হবে, সেমাই ২৫০ গ্রাম, ঘি এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ কাপ, গুঁড়া দুধ ৫০০ গ্রাম, চিনি ৫ কাপ অথবা স্বাদমতো, দারুিচনি ৫/৬ টুকরা (২ সেন্টিমিটার লম্বা), এলাচি ৮টা, রোস্টেড কাজু বাদাম আধা কাপ, কাঠবাদাম কুচি এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, পেস্তা কুচি এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, কিশমিশ এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, লবণ ১ চিমটি, গোলাপজল ১ টেবিল চামচ, জাফরান আধা চা-চামচ।
প্রণালি: প্রথমে ৬ লিটার দুধকে জ্বাল দিয়ে ৩ লিটার করে নিন। গোলাপজলে জাফরান ভিজিয়ে রাখুন। সেমাই ৫ সেন্টিমিটার (দুই ইঞ্চি) লম্বা টুকরা করে রাখুন। দুধ জ্বাল দেওয়ার সময় চিনি, দারুচিনি ও এলাচ দিয়ে নাড়ুন। হাঁড়ির নিচে যেন পোড়া না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশের চুলায় অন্য একটি প্যানে ঘি গরম করে অল্প আঁচে সেমাই ভালো করে ভেজে নিয়ে দুধে ঢেলে নড়তে থাকুন। এবার অল্প পানিতে গুঁড়া দুধ গুলে নিয়ে সেমাইয়ের মিশ্রণে ঢেলে অনবরত নাড়ুন, যেন পোড়া না লাগে। সেমাই ও দুধের মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে তাতে রোস্টেড কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নেড়ে গোলাপজলে ভেজানো জাফরান দিয়ে একবার নেড়ে পরিবেশন বোলে ঢেলে ঠান্ডা হতে দিন। তারপর ওপরে বাদাম ও পেস্তা কুচি দিয়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর পরিবেশন করুন। পরিবেশনের আগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা রেফ্রিজারেটরে রাখলে খেতে ভালো লাগবে।

চিতল মাছের কোফতা কারি
উপকরণ: (কোফতার জন্য) মাছ বাটা ১ কাপ, ভাত বাটা আধা কাপ, কাঁচা মরিচ বাটা আধা চা-চামচ, আদা বাটা আধা চা-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,ধনে গুঁড়া আধা চা-চামচ, জিরা বাটা অথবা গুঁড়া আধা চা-চামচ, গরম মসলা বাটা এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, লবণ আধা টেবিল চামচ বা স্বাদমতো, তেল ভাজার জন্য।
প্রণালি: চিতল মাছের পিঠের অংশ আলাদা করে চামড়া ও কাটা ছাড়িয়ে মাছ বেটে নিন। মাছ বাটার সময় লবণ ও ভাত মিশিয়ে বাটুন। এবার মাছের মিশ্রণে তেল বাদে অন্য সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে ১০টি সমান ভাগ করুন। হাতের তালুতে সামান্য তেল মেখে একেকটি ভাগ নিয়ে গোল করে কোফতা তৈরি করুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে ডুবো তেলে সোনালি করে ভেজে তুলুন।
কোফতা কারি
উপকরণ: ভাজা কোফতা, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ স্লাইস আধা কাপ, আদা বাটা ১ চা-চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ থেকে দেড় টেবিল চামচ, ফেটানো টক দই এক কাপের চার ভাগের তিন ভাগ, ঘি অথবা তেল আধা কাপ, লবণ আধা চা-চামচ অথবা স্বাদমতো, চিনি ৩ চা-চামচ বা স্বাদমতো, গরম মসলা গুঁড়া বা বাটা আধা টেবিল চামচ, লাল পাকা ও কাঁচা মরিচ ৮টি, তেজপাতা ২টি, ক্রিম এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ বা স্বাদমতো, কেওড়া দেড় থেকে দুই টেবিল চামচ।
প্রণালি: কড়াই বা প্যানে ঘি বা তেল গরম করে তেজপাতার ফোড়ন দিয়ে তাতে পেঁয়াজ স্লাইস দিয়ে সোনালি করে ভেজে অন্যান্য বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে সামান্য পানি মিশিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। এবার ফেটানো টক দই ও চিনি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। ভালো করে কষানো হলে ভাজা কোফতা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে মৃদু আঁচে মিশিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে সামান্য পানি দিয়ে নেড়ে লবণ ও কেওড়া দিয়ে নেড়ে ক্রিম দিয়ে ঢেকে দিন। মৃদু আঁচে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন। ৫ থেকে ৬ মিনিট পর ঢাকনা খুলে লেবুর রস দিয়ে আলতোভাবে নেড়ে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। তেল বা ঘিয়ের ওপরে উঠলে নামিয়ে পোলাও ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।