শর্ষে কাচকি, কম মসলার রোস্টসহ আরও যেসব পদের রেসিপি দিলেন চম্পা বণিক

২০০৫ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে শুধু চা বানাতে পারতেন চম্পা বণিক—দুধ চা। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখলেন, চায়ের আড্ডা বলে সেখানে কিছু নেই। তাই রান্নায় নিজের বিদ্যা দেখানোর সুযোগও মিলল না। এরপর একটু একটু করে নিজেই রান্না শিখেছেন। এখন তো দেশি–বিদেশি সব রকম রান্নাতেই হাত পাকিয়ে ফেলেছেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা।

বিয়ের পর রান্না শিখেছেন চম্পা বণিক
ছবি: সুমন ইউসুফ

পুরান ঢাকার যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছেন চম্পা বণিক। তাই বাড়িতে সেভাবে রান্নাঘরে ঢুকতে হয়নি। ‘মা সব সময় বলতেন, রান্না এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। যখন দরকার হবে শিখে নিতে পারবি,’ বলছিলেন মেয়ে চম্পা বণিক।

কথাটা যে খুব মিথ্যা বলেছিলেন, সেটাও বলা যাচ্ছে না। কারণ, চা তৈরির অভিজ্ঞতা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরে ঢোকা এই সংগীতশিল্পী মা কণিকা বণিক আর শাশুড়ি শেফালী পালের কাছ থেকে শিখেছেন নানা রকম বাঙালি রান্না।

তবে যাঁর কাছ থেকে যে পদই শিখুন না কেন, তাঁর রান্নায় যে নিজস্বতা আছে, সেটা একবার খেলেই বোঝা যাবে। চম্পা গল্প করছিলেন, ‘আমার রান্না করা খাসির মাংস খেয়ে বাবা একবার বলছিলেন, তাঁর খাওয়া সেরা মাংস রান্না। মাকেও তাগাদা দিচ্ছিলেন গরম–গরম খেয়ে নিতে। স্বামী–সন্তানেরাও দেখি এই পদ খুব পছন্দ করে।’

পুরান ঢাকার মেয়ে বলেই সপ্তাহে অন্তত এক দিন ভারী খাবার খাওয়া চাই। সাধারণত সেটা বাড়িতেই রান্না করেন চম্পা বণিক। পোলাও রান্না অনেক কঠিন মনে হতো একটা সময়। অথচ সেই পোলাওই এখন তাঁর কাছে ‘ডালভাত’। বাসায় অতিথি এলে সাধারণত ভারী খাবারই রান্না করেন। তবে প্রতিদিনের যে বাঙালি রান্না, সেটার স্বাদ তো অন্য কিছুতে মেলে না। সবজি, মাছ, মাংসের সেই স্বাদ নিয়ে নিরীক্ষা করেন চম্পা বণিক। বাবার বাড়িতে যেমন পেঁয়াজ–রসুন ছাড়া পাবদা মাছ রান্না হতো, শ্বশুরবাড়িতে আবার উল্টো। তাই নিজের কিচেনে চম্পা বণিক পেঁয়াজ–রসুনের সঙ্গে যোগ করে নিলেন কালিজিরা।

বেকিং করতেও ভালোবাসেন। জানালেন, এক বন্ধুর কাছ থেকে শিখেছিলেন কেক বানানো। তবে বাড়িতে মিষ্টি খাবার সেভাবে কেউ পছন্দ করে না বলে সেটা নিয়ে খুব বেশি নাড়াচাড়া করেন না এই শিল্পী।

টমেটো পাবদা
ছবি: সুমন ইউসুফ

টমেটো পাবদা

উপকরণ: পাবদা মাছ ৫০০ গ্রাম, হলুদ ১ চা–চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা–চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১০০ মিলিলিটার, কালিজিরা ১ চিমটি, কাঁচা মরিচ ফালি ৫টি, পাকা টমেটো ৫টি, জিরাগুঁড়া আধা চা–চামচ, ধনেগুঁড়া আধা চা–চামচ, ধনেপাতার কুচি ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি: 

  • মাছ ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন।

  • এবার তাতে হলুদ, লবণ ও মরিচের গুঁড়া দিয়ে মেখে ৫ মিনিট রেখে দিন।

  • এবার মাছটা তেলের মধ্যে হালকা ভেজে তুলে রাখুন।

  • এই তেলে এবার কালিজিরা ও কাঁচা মরিচ ফোড়ন দিয়ে যোগ করুন টমেটো আর লবণ। হলুদ, মরিচ, জিরা ও ধনেগুঁড়া দিয়ে একটু নেড়ে নিন।

  • ঝোলের পরিমাণ বুঝে এবার তাতে দিন ফোটানো গরম জল।

  • জলটা টগবগ করতে শুরু হলে মাছগুলো ঢেলে দিন।

  • শেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে নিন।

কম মসলায় রোস্ট
ছবি: সুমন ইউসুফ

কম মসলায় রোস্ট

উপকরণ: মুরগি ১টি (৪ টুকরা), টক দই আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, লেবুর রস অর্ধেকটা, টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়া আধা চা–চামচ, আদাবাটা ১ চা–চামচ, রসুনবাটা আধা চা–চামচ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, গুঁড়া দুধ ২ চা–চামচ, কিশমিশ ১০–১২টি, আলুবোখারা ৫টি, গরমমসলা আধা চা–চামচের কম ও ঘি ১ চা–চামচ।

প্রণালি: মুরগি ধুয়ে লবণ মেখে ১৫ মিনিট রাখুন। এবার তাতে টক দই, লেবুর রস, সস, ধনেগুঁড়া, আদা ও রসুন দিয়ে আরও ৩০ মিনিট রেখে দিন।

এবার সাদা তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি ভেজে মাংস দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। একটু পরপর ঢাকনা তুলে নেড়ে দিতে হবে। নিচে যেন না লাগে। আধা সেদ্ধ হলে গুঁড়া দুধ যোগ করুন। কিশমিশ, গরমমসলাগুঁড়া দিয়ে ঢেকে আরেকটু রান্না করুন। শেষে চাইলে যোগ করতে পারেন আলুবোখারা। ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন।

শর্ষে কাচকি
ছবি: সুমন ইউসুফ

শর্ষে কাচকি

উপকরণ: কাচকি মাছ ৫০০ গ্রাম, শর্ষেবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচের কুচি ৫টি, লবণ ১ চামচ, হলুদগুঁড়া–মরিচগুঁড়া–ধনেগুঁড়া আধা চামচ করে, শর্ষের তেল ১০০ মিলিলিটার।

প্রণালি: 

  • মাছ ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন।

  • এবার তাতে শর্ষেবাটা, পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ, লবণ, হলুদ, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া

  • ও একটু শর্ষের তেল দিয়ে ভালো করে মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন।

  • প্যানে বাকি তেল দিয়ে গরম করে মাছ দিয়ে ঢেকে দিন।

  • কয়েক মিনিট পর ঢাকনা খুলে সাবধানে নেড়ে ভেজে নিন।

  • তেল ছেড়ে এলে তুলে ফেলুন।

কাঁচা আমের চাটনি
ছবি: সুমন ইউসুফ

কাঁচা আমের চাটনি

উপকরণ: আম ২ কাপ, তেল ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ৬টি, তেজপাতা ৩টি, শর্ষেদানা আধা চা–চামচের কম, লবণ আধা চা–চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চিমটি, চিনি স্বাদমতো, কাঁচা মরিচ ফালি ফালি ৪টি।

প্রণালি: কাঁচা আম খোসা ফেলে ছোট ছোট টুকরা করে নিন। এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে শুকনা মরিচ, তেজপাতা, শর্ষে ফোড়ন দিন। এবার তাতে আমটা ঢেলে দিন। লবণ ও হলুদ দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। আম সেদ্ধ হয়ে গেলে চিনি মেশান। আমের টক বুঝে চিনি দিতে হবে। চিনি গলে এলে অল্প করে জল আর কাঁচা মরিচ দিয়ে একটু নেড়ে নামিয়ে নিন।

কাঁঠালের তরকারি
ছবি: সুমন ইউসুফ

কাঁঠালের তরকারি

উপকরণ: কাঁচা কাঁঠাল ১টি (মাঝারি), লবণ ২ চা–চামচ, হলুদ ২ চা–চামচ, পাঁচফোড়ন ২ চিমটি, তেল আধা কাপ, ধনে–জিরা–মরিচগুঁড়া ১ চা–চামচ করে, তেজপাতা ৪টি, চিনি আধা চা–চামচ, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা–চামচ ও ঘি ২ চা–চামচ।

প্রণালি: কাঁঠাল ধুয়ে চার ভাগে কেটে নিন। এবার হাতে শর্ষের তেল মেখে কাঁঠালের বাইরের চামড়া ও ভেতরে যে ভুতি থাকে, সেটা কেটে ফেলে দিন। বাকি কাঁঠাল ছোট ছোট চৌকো করে কেটে নিন। এবার কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখুন। কষ চলে গেলে তুলে জল ঝরিয়ে নিন। এবার এটা ১ চা–চামচ লবণ আর ১ চা–চামচ হলুদ মেখে ভাপিয়ে নিন।

কড়াইয়ে তেল গরম করে তেজপাতা, পাঁচফোড়ন, লবণ, জিরা, ধনে, মরিচ, হলুদ দিয়ে কষিয়ে নিন। কাঁঠাল দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। এবার একটু জল দিয়ে কাঁঠালটা ভাজা ভাজা করে নিতে হবে। নামানোর আগে চিনি ও গরমমসলা দিয়ে একটু নেড়ে ঘি ছড়িয়ে দিন।

খাসির রেজালা
ছবি: সুমন ইউসুফ

খাসির রেজালা

উপকরণ: খাসির মাংস ১ কেজি, এলাচি ৪টি, দারুচিনি কয়েক টুকরা, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, লবণ ২ চা–চামচ, রসুনবাটা আধা চা–চামচ, আদাবাটা ১ চা–চামচ, টক দই দেড় কাপ, দুধ ১ কাপ, চিনি অল্প একটু, কাঁচা মরিচ ৭–৮টি, আলুবোখারা ৫টি, গরমমসলা আধা চা–চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেল ৪ টেবিল চামচ ও আলু ৪টি। 

প্রণালি: 

  • মাংস টুকরা করে ধুয়ে নিন।

  • প্রেশার কুকারে একটু তেল ও ঘি গরম করে গোটা এলাচি, দারুচিনি পেঁয়াজকুচিসহ ভাজুন

  • এবার খাসির মাংস ঢেলে লবণ, রসুনবাটা, আদাবাটা, টক দই দিয়ে নাড়ুন।

  • ভাজা ভাজা হলে তরল দুধ দিয়ে নাড়ুন।

  • আলু, চিনি, কাঁচা মরিচ ফালি, আলুবোখারা দিয়ে নেড়ে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে প্রেশার কুকারের ঢাকনা লাগান। ৩টি সিটি উঠলে চুলা বন্ধ করে দিন। 

  • ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে গরমমসলা ও ঘি দিয়ে আবার একটু ঢেকে রাখুন।

  • সুগন্ধ ছড়ালে নামিয়ে পরিবেশন করুন।