ভালো মানের খুদের চাল যেখানে পাবেন, কেনার আগে যেসব বিষয় মনে রাখতে হয়

খুদের বউয়া
ছবি: সুমন ইউসুফ

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খুদ ভাত বা খুদের ভাত। যেহেতু এই খাবার বাংলায় প্রচলিত আবহমান কাল ধরে, তাই অঞ্চলভেদে খুদের ভাতের আছে নানান নাম। কেউ কেউ একে বলেন ‘বউ ভাত’ বা ‘বউয়া’।

খুদের চাল বলতে মূলত ভেঙে যাওয়া চালকেই বোঝানো হয়। ধান থেকে চাল তৈরি করার সময় অপরিপক্ব বা অপুষ্ট চাল প্রক্রিয়াকরণের সময় ভেঙে যায়। এই ভাঙা চাল পরে আলাদা করা হয় এবং বাজারে খুদের চাল হিসেবে বিক্রি হয়। সাধারণত আমাদের দেশে যে ধরনের চালের বেশি চাহিদা, তার সব কটিরই খুদের চাল পাওয়া যায়। মোটা, মাঝারি ও চিকন—এই তিন স্তরে চালের বাজারের হিসাব করলে দেখা যায়, স্তর অনুযায়ী এসব চালের খুদের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা করে বেড়ে যায়। আউশ-আমন ধানের মোটা চাল যেখানে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, সেখানে এই চালের খুদ পাওয়া যায় মাত্র ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। মাঝারি চাল, যেমন মিনিকেটের খুদ পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। আর নাজিরশাইল বা পাইজামের মতো চিকন চালের খুদের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ছুঁই ছুঁই। সবচেয়ে বেশি দাম সুগন্ধি পোলাও চালের খুদের। কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা।

খুদের চাল সাধারণত বড় চালের দোকানগুলোতেই পাওয়া যায়। রাজধানীর গাবতলী, কারওয়ান বাজারের মতো বড় বড় চালের আড়তে বিভিন্ন ধরনের চালের খুদ পাবেন। খুদ কিনতে হলে অবশ্যই ছোট ছোট কণা বা পাথর, ধানের আঁশ দেখে কিনতে হবে। কেননা দাম অনুযায়ী খুদের চাল বিভিন্ন মানের হয়। মেশিনে প্রক্রিয়া করা চালের খুদে সাধারণত কোনো বাড়তি কণা বা পাথর থাকে না, চালটাও ঝরঝরে হয়। সুপারশপগুলোতে এই চাল পাওয়া কিছুটা দুষ্কর বটে। তবে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন শস্যভান্ডারের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা দিয়ে খুদ চাল বিক্রি করছে। মাদল-শস্যভান্ডারের ব্যবস্থাপক আনিস জানান, তাঁদের দোকানের চিনিগুঁড়া চালের খুদের চাহিদা বেশ ভালো। এত চাহিদার কারণটা জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের চিনিগুঁড়া চাল আর খুদটা দিনাজপুরের এবং এটা আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই সংগ্রহ করি।’

রাজধানীর উত্তরার অনলাইনভিত্তিক ‘গ্রিন অ্যাগ্রো’ প্রতিষ্ঠানের রবিউল ইসলাম জানান, অনেক চালের ‘খুদ চাল’ তাঁদের সংগ্রহে থাকে। তবে কিশোরগঞ্জের ‘রাতা বোরো’ সেদ্ধ চালের খুদের ভাত অনেকটা সুগন্ধি ও মজাদার। তাই এই চালের খুদ চাল তাঁদের সংগ্রহে থাকেই। দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণে তাঁরা অতিরিক্ত কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করেন না, তাই ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর ২০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য চালটা রোদে শুকানোর পরামর্শ দেন।

ধান থেকে চাল আলাদা করার পর ভেঙে যাওয়া এই চালকে আলাদা করে নিয়ে বিক্রি করা হয়। আপনি বাজারে খুদের চাল কিনতে গেলে অবশ্যই জেনে নেবেন, কোন চালের খুদ রান্নার পরিকল্পনা হচ্ছে। কেননা বিভিন্ন ধরনের খুদের চালের ভাতের স্বাদ বিভিন্ন রকম। আগের দিনে বাড়িতে যে ‘বউ খুদি’ রান্না করা হয়, সেটার জন্য ঘটা করে বাজার থেকে আলাদা খুদের চাল কেনা হতো না। ভাত রান্নার জন্য যে চাল আনা হতো, সেটাকেই ঝেড়েবেছে বাড়ির বউ-ঝিরা খুদ আলাদা করে নিতেন। সকালের নাশতা হিসেবে ‘বউ খুদি’, ডিম-বেগুন ভাজার সঙ্গে নানা পদের ভর্তা আর শুকনা মরিচ পোড়া তৈরি করে ফেলতেন। এখন আর সেদিন নেই! এখনকার দিনের মেশিনের মাপজোখে পোলাও ভাতের চাল আর খুদের চাল একসঙ্গে মিশে যায় না। আলাদা দরে, আলাদা হিসেবেই বিক্রি হয়।

এই ‘বউয়া’ বা খুদ ভাতের মজাদার রান্নার গোপন রেসিপিটা থাকে খুদের চাল বেছে নেওয়ার মধ্যেই। বেশি পুরোনো খুদের চালের মধ্যে একধরনের গন্ধ থেকে যায়, তাই এমন চাল ব্যবহার না করাই ভালো। অনেকে আবার সুগন্ধি পোলাও চালের খুদের সঙ্গে অন্য কোনো খুদের চাল মিশিয়ে ব্যবহার করেন। এতে রান্নার পর একটা সুন্দর পোলাও পোলাও ভাব থাকে, আবার ভাতটা বেশি নরমও হয়ে যায় না।