মা-বাবার বিয়ের ৫৫ বছরের পুরোনো কেক খেলেন ছেলে

১৪ জানুয়ারি বাসার ফ্রিজ পরিষ্কার করছিলেন ট্রাভিস মার। তখনই ফ্রিজের এক কোনায় খুঁজে পান এক টুকরা কেক। প্রথমে বুঝতে পারেননি, তবে মায়ের সঙ্গে কথা বলতেই জানা যায়, এই কেকের টুকরাটির বয়স ৫৫ বছর এবং সেটি ট্রাভিসের মা-বাবার বিয়ের কেক!

নিজের বিয়ের কেক ৫৫ বছর পর কাটলেন রোচেল মার। সেই ভিডিও এখন ভাইরাল
ছবি: সংগৃহীত

ট্রাভিসের বাবা ডা. ব্রায়ান মার মারা গেছেন ২০২৩ সালের জুনে। ১৯৬৮ সালে বিয়ে হয় কানাডার স্যামন আর্ম এলাকার বাসিন্দা ডা. ব্রায়ান মার ও রোচেল মারের। রোচেলের কোনো এক বান্ধবীর মা বিয়ের উপহার হিসেবে কেক বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। সে সময়ের একটা রীতি ছিল বিয়ের প্রথম বার্ষিকী, রজতজয়ন্তী বা সুবর্ণজয়ন্তী কিংবা প্রথম সন্তানের জন্ম অথবা সন্তানের বিয়ে উদ্‌যাপনের জন্য বিয়ের যেকোনো একটি খাবারের স্মৃতি সংরক্ষণ করতে হবে। সেই স্মৃতি হিসেবেই কেকের অংশটুকু পড়ে ছিল ফ্রিজের কোনায়, তা-ও এক-দুই বছর নয়, পাক্কা ৫৫ বছর! এই কেকের কথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন রোচেল মার।

এই সেই কেকের টুকটো
ছবি: সংগৃহীত

ট্রাভিস সিবিসিকে (কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) বলেন, ‘মোড়ানো এ জিনিসটি বিভিন্ন সময় ফ্রিজ পরিবর্তন করতে গিয়ে আমার চোখে পড়েছিল। এক ফ্রিজ থেকে আরেক ফ্রিজে স্থান পেয়েছে। তবে কখনো আলাদা করে সেভাবে খেয়াল করিনি যে এটা কী। খুলেও দেখা হয়নি। ১৪ তারিখ ফ্রিজ পরিষ্কার করতে গিয়ে আবারও চোখে পড়ায় ভাবলাম, ভালোভাবে দেখি এটা কী। দেখলাম, এর নিচে লেখা আছে, “২০১৮ সালের আগে এটা খুলবে না।”’

ট্রাভিস আরও বলেন, ‘কেকটা খুঁজে পাওয়ার আগে আমরা এর সম্পর্কে কেউ জানতাম না। মা-ও ভুলে গিয়েছিলেন। খুলে দেখি, কেকটি প্রায় অক্ষত। কেকের টুকরাটি পাওয়ার পর মাকে জিজ্ঞাসা করি। মা-ই নিশ্চিত করেন যে এটি তাঁদের বিয়ের কেকের টুকরা। এমনকি মা বলেন, ৫৫ বছর আগে কেকের অংশটি অবিকল ও রকমই ছিল। ঘ্রাণটাও একই আছে।’ মায়ের মুখ থেকে এ কথা শুনে ট্রাভিস সামান্য একটু কেক চেখেও দেখেছেন। খেতে নাকি বেশ!

ট্রাভিসের বাবা ও রোচেল মারের জীবনসঙ্গী ডা. ব্রায়ান মার মারা গেছেন ২০২৩ সালের জুনে
ছবি: সংগৃহীত

পিপলের প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাভিসের মা-বাবার বিয়ের ৫০ বছর পূর্তি হয় ২০১৮ সালে। তবে ২০১৮ সাল পেরিয়ে ট্রাভিসের বাবা বেঁচে ছিলেন ২০২৩ সাল পর্যন্ত। তাঁর ইচ্ছা ছিল ওই কেক দিয়ে ৫০তম বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপন করবেন। কিন্তু ভুলে যাওয়ায় সেটি আর হয়নি।

কী হবে কেকের টুকরাটির

মা-বাবার বিয়ের ৫৫ বছরের পুরোনো কেকটি খাওয়ার পরিকল্পনা করছে মার পরিবার। ট্রাভিসের বাকি দুই ভাইবোনসহ মায়ের সঙ্গে এই কেক খাওয়া হবে বলে জানান তিনি। ইতিমধ্যে বাকি দুই ভাই-বোনকে ট্রাভিস তাঁর বাসায় দাওয়াত দিয়েছেন। ট্রাভিস বলেন, ‘ফ্রুটকেক আমার অনেক পছন্দের খাবার। পুরোনো হয়ে গেছে দেখে এটা খাওয়া যাবে কি না, সে ব্যাপারে অনেকেই সন্দিহান। তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ১৬১ বছরের পুরোনো কেকও খাওয়া হয়েছে। আর এই কেকের পুষ্টিমান একটু কমে গেলেও কেকটা ভালো আছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।’

৫৫ বছরের পুরোনো সেই কেকের একটা টুকরো খেয়েছেন ট্রাভিস মার
ছবি: সংগৃহীত

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব গুয়েল্ফের খাদ্যনিরাপত্তা বিভাগের অধ্যাপক কিথ ওয়ারিনার কেকটি যে এখনো ভালো আছে, তা পরীক্ষাগারে যাচাই করে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত অ্যালকোহল, চিনি ও চর্বি দিয়ে প্রস্তুত হওয়ায় কেকটি এখনো ভালো আছে। ফ্রিজে থাকায় এর আর্দ্রতা কম ছিল। ফলে মাইক্রোবায়ালের বিস্তার ঘটেনি। তাই এই কেক সম্পূর্ণ নিরাপদ না হলেও খেলে অন্তত কেউ মারা যাবে না। তবে বেশি খেলে সামান্য পেটব্যথা হতে পারে।

ট্রাভিস জানান, এ রকম একটা স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পাওয়ায় তাঁর পরিবার আপ্লুত।