কারওয়ান বাজারের যে গলিতে মিলবে বুলেট শিঙাড়া থেকে স্প্যাগেটি

এই এলাকার বিখ্যাত খাবার শিঙাড়া, যা বুলেট শিঙাড়া নামে পরিচিত
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

কারওয়ান বাজার এলাকা পুরোটাই বাজার বটে! শাকসবজিবোঝাই ট্রাক, মাছের বাজারে হাঁক, মসলার তীব্র গন্ধ... এই পাইকারি বাজারের ব্যস্ততা থেকে একটু ভেতরে সরু এক গলি, যা চওড়ায় হয়তো আড়াই থেকে তিন মিটার, সেখানেই মিলবে হরেক রকম মজাদার মুখরোচক খাবার। সোজা রাস্তায় সারি সারি মোটরসাইকেল রাখা, তার মধ্যে খালি জায়গাগুলোয় চেয়ার-টেবিল পাতা ছোট ছোট কয়েকটি দোকান, কার্ট, আর আছে বেশ কিছু চায়ের টং। জায়গাটা কারওয়ান বাজারের এনটিভি ভবনের ঠিক পেছনে। তাই লোকমুখে এই জায়গার নাম পরিচিত হয়েছে এনটিভির গলি নামে। এনটিভি ছাড়াও এই এলাকায় আছে বেশ কিছু সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের অফিস।

আছে কাঁচা আমের জুস
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

৩১ মে, বেলা আড়াইটা। গলির ভেতরে একটি ছোট টেবিল আর বেঞ্চ পাতা দোকানে একের পর এক রুটি বেলে যাচ্ছেন বাদশা। সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা, সারা দিন তাঁর ওই এক কাজ। বেঞ্চে বসে দুটো রুটি, সুজির হালুয়া আর ডিম ভাজি দিতে বললেন একুশে টিভির আন্তর্জাতিক বিভাগের সাংবাদিক দুলি মল্লিক। বসে জানতে চাইলাম, ‘এই ভরদুপুরে ভাতের বদলে রুটি কেন?’ বলেন, ‘এখন ভাত খেলেই ঘুম পাবে, তাই রুটি।’ প্রায়ই এখানে আসেন জানিয়ে বললেন, ‘এই জায়গাটি খাবার খাওয়ার জন্য আমার কাছে ঝঞ্ঝাটহীন মনে হয়।

পরিমাণের তুলনায় খাবারের দামটাও বেশ কম
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

আশপাশে বেশ কিছু সংবাদপত্রের অফিস আছে, এ ছাড়া আছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান; সেখানের অনেকেই এখানে আসেন। দোকানদার-ক্রেতা সবার সঙ্গে সবার মুখ চেনাচিনি হয়ে গেছে। আবার খাবারের দামটাও বেশ কম।’ চা খেতে খেতেই বাদশার কাছে জানতে চাইলাম, শুধু রুটি বেচে লাভ হয় কি না। বললেন, ‘লাভ না হইলেতো দোকান রাখতাম না। এখানের বেশি মানুষ হালকা খাইতেই পছন্দ করে।’

মাছ, মাংস থেকে ছোলা বুট সবই পাবেন এখানে
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

বাদশার দোকান ছাড়াও এই গলিতে আছে নানা রকম খাবারের দোকান। সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে গলির দোকানগুলো। নাশতায় গরম-গরম ভাজা পরোটা কিংবা সাদা রুটির সঙ্গে থাকে ডিমভাজি, হালুয়া, সবজি আর ডালের কয়েক রকমের পদ; দুপুরে বড় ডেকচিতে বিক্রি হয় খিচুড়ি ও তেহারি, সঙ্গে থাকে ভাত ও তরকারির হরেক বাহার, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে থাকে বিভিন্ন ভর্তাও। দুপুরে অনেকেই তাই চলে আসেন এই গলিতে। ‘ক্যানটিনের খাবার প্রতিদিনই প্রায় একই রকমের হয়। এখানে খাবারের বৈচিত্র্য এবং বিকল্প পাওয়া যায় দেখেই বেশি আশা হয়’, বললেন দুলি মল্লিক।

খাবারের বৈচিত্র্য এবং বিকল্প পাওয়া যায়
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

সন্ধ্যা হলেই গলির ভেতর বিরতিহীন আড্ডায় চলে চায়ের সঙ্গে গরম-গরম ভাজাপোড়া নাশতা। বিকেলে এই এলাকার বিখ্যাত খাবার হয়ে উঠে ছোট শিঙাড়া, যা বুলেট শিঙাড়া নামে পরিচিত। গলির একেবারে সামনে দুলালের দোকান। সেখানে কী যে বিক্রি হচ্ছে, মানুষের ভিড়ে তা বোঝাই মুশকিল। অনেক কষ্টে উঁকি দিয়ে দেখলাম, যা ভেবেছিলাম তা–ই। পাহাড়সমান ভেজে রাখা শিঙাড়া, সমুচা, পুরি, আলুচপ, বেগুনি এক নিমেষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। দোকানটি একেবারে জায়গা মতোই বসিয়েছেন মালিক দুলাল মিয়া। এত জায়গা থাকতে এই গলিতে কেন দোকান দিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সেটা তো নিজেও জানি না; একটা দোকান দেব ভাবছিলাম, দিসি। অফিসের লোকজন আসে, তাই ভালোই চলতেছে এখন।’

সুস্বাদু জিলাপি
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

এমন নয় যে শুধু দেশি খাবারই পাওয়া যায় সেখানে, কার্ট গাড়িতে বিক্রি হচ্ছে নুডলস, স্প্যাগেটি, ফ্রেঞ্চফ্রাই, বার্গার ইত্যাদি নানা ফাস্ট ফুডও। আরও একটু ভেতরে গেলেই দেখা যায় বিভিন্ন ফলের ঠান্ডা জুস খাচ্ছেন অনেকে। খাবারে যা-ই থাকুক না কেন, কাজের ফাঁকে চায়ের বাহানাতে বিভিন্ন অফিসের সাংবাদিকেরা চলে আসেন এই গলিতে। গলি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম, তখনই দেখা হলো আরটিভির সাংবাদিক সুমন ভাইয়ের সঙ্গে। বললেন, ‘আট বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই বন্ধুদের নিয়ে চা খেতে আসি এখানে।’ বেলায় বেলায় খাবারের ভিন্নতা থাকুক আর না থাকুক, বিকেলে এই গলির জমাটে ভাবই অন্য রকম।