আপনিও কি পাউরুটি ফ্রিজে রাখেন
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি পাউরুটি। বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তার পাল্লায় রুটি ও পরোটার পরেই পাউরুটির অবস্থান। সকালের নাশতা বা সন্ধ্যার স্ন্যাকস—হাতের কাছে পাউরুটি থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। বিশেষ করে শহুরে নাগরিক ব্যস্ততায় পাউরুটির বিকল্প পাওয়া মুশকিল।
আপনি কি খেয়াল করেছেন, পাউরুটি যখন বেকারি বা দোকান থেকে কেনেন, তখন কিন্তু সেটি বাইরেই রাখা থাকে। অথচ ঘরে এসেই সেটি ঢুকে পড়ে ফ্রিজে। ফ্রিজ কি পাউরুটির ‘বিশ্রাম নেওয়া’র জুতসই জায়গা? এককথায় এই প্রশ্নের উত্তর হলো, না।
কেন না?
জবাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনার ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এক্সটেনশনস ফুড প্রোগ্রামস অ্যান্ড সেফটি’র পরিচালক কিমবার্লে বেকার। তিনি জানান, ফ্রিজের নিম্ন তাপমাত্রায় পাউরুটি তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। ফলে একদিকে যেমন পাউরুটি শক্ত হয়ে যায়, অন্যদিকে এর স্বাদ আর পুষ্টিমানও কমে যায় বেশ খানিকটা।
বাস্তবতা হলো ফ্রিজে আপনি যা-ই রাখেন না কেন, তা থেকে কিছুটা আর্দ্রতা বের হয়ে যায়। পাউরুটির ক্ষেত্রেও তা–ই ঘটে। নরম তুলতুলে পাউরুটি থেকে আর্দ্রতা বেরিয়ে গিয়ে তা হয়ে যায় খটখটে। অবশ্য আরও একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাপারও এখানে আছে, যাকে বলে ‘রেট্রোগ্রেডেশন’।
পাউরুটি তৈরিতে ময়দা বা আটা, পানি ও সামান্য লবণের সঙ্গে ব্যবহৃত হয় ইস্ট। অনেকে আবার স্বাদ বাড়াতে সামান্য সয়াবিন তেল, ডিম বা দুধও মেশান। তবে ইস্ট লাগবেই। ইস্ট একধরনের এককোষী ছত্রাক। ময়দার খামিরে ইস্ট পাউডার মেশানোর ফলে এটি ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস তৈরি করে। এই কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাসের চাপে পাউরুটির দেয়ালে ফাঁকা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। এ কারণেই কেক ফোলানোর জন্যও ইস্ট বা বেকিং পাউডার–জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে হয়।
পাউরুটি ওভেন থেকে বের করার পর থেকেই ভেতরের আটা বা ময়দার স্টার্চের অণুগুলো ফোলা অবস্থা থেকে চুপসে গিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করে। তবে কখনোই তা পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরতে পারে না। কেননা, ইতিমধ্যে সেটির রাসায়নিক গঠন অনেকটাই বদলে গিয়ে একটি ভিন্ন বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তবে স্টার্চের অণুগুলো নিজেদের মধ্যে বিন্যস্ত হতে থাকে। পাউরুটি তৈরির পর এটা ঠান্ডা হওয়া শুরু করলেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে এটি নেতিয়ে পড়তে শুরু করে। প্রাকৃতিকভাবেই এটি ঘটে। এ কারণে ধীরে ধীরে পাউরুটি হয়ে ওঠে শক্ত ও শুকনা। আর ফ্রিজে রাখলে পাউরুটির আর্দ্রতা কমে তা আরও দ্রুত স্বাভাবিকতা হারায়। তাই পাউরুটি কিনতে গেলে যদি দেখেন শক্ত হয়ে গেছে, তাহলে বুঝবেন সেটা বাসি।
পাউরুটি কীভাবে সংরক্ষণ করবেন?
পাউরুটি কেনার পর সবচেয়ে ভালো হলো টাটকা টাটকা খেয়ে ফেলা। কক্ষ তাপমাত্রায় এমনিতেই পাঁচ দিন পর্যন্ত টাটকা থাকে। তবে গরম আর বর্ষাকালে বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে এর চেয়ে কম সময়েই পাউরুটির ওপর ছত্রাক পড়তে পারে। সবুজ বা বাদামি এই ছত্রাকের নাম ‘রাইজোপাস স্টলোনিফার’। এটি মারাত্মক বিষাক্ত না হলেও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। পেটে ব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া হতেই পারে।
একবার পাউরুটির প্যাকেট খুলে ফেললে তারপর এটি সংরক্ষণ করা সহজ নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব খেয়ে ফেলতে হবে। কেননা, বাতাসের সংস্পর্শে এটা দ্রুত বাসি হয়ে যায়। ‘এয়ার টাইট’ অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে। ফয়েল পেপার বা অন্যান্য র্যাপারে মুড়িয়ে ব্রেড বাক্সে রাখতে পারেন। পাউরুটি টাইট করে পেঁচিয়ে ‘পেপার স্লিভ এয়ার টাইট প্যাকেজিং’ করতে হবে। বাড়িতে বানালে বা লাইভ বেকারি থেকে কিনলে যদি সংরক্ষণ করে খেতে চান, তাহলে স্লাইস করবেন না। তাতে সহজে ভেতরে বাতাস ঢুকে বাসি হবে না।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট