কোরবানির ঈদে রান্না মাংস দিন দিন জ্বাল দিতে দিতে ঝুরি ঝুরি হয়ে যায়। আমার আম্মা আয়েশা খাতুন সেই ঝুরি হয়ে যাওয়া মাংস দিয়ে দুর্দান্ত স্বাদের একটা পিঠা বানাতেন। এই সুদূর নিউইয়র্কেও সেই পিঠার স্বাদ মুখে লেগে আছে। সেই পিঠার কথাও বলব, তবে তার আগে ফ্রেশ মাংস দিয়ে কীভাবে পিঠা তৈরি করতে হয়, বলি।
আম্মা অসুস্থ। তাই আমার ঢাকার বন্ধু, রন্ধনশিল্পী ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাথী খানকে ফোন করলাম। ‘কীভাবে ফ্রিজভর্তি মাংসের উৎকৃষ্ট ব্যবহার করা যায়, বলুন তো?’
‘মধুর এই সমস্যা আমি কীভাবে সমাধান করেছি, বলি। অনেকগুলো কিমা মাংসের পিঠা তৈরি করে রেখে দিয়েছি ডিপ ফ্রিজে। কেউ বাসায় এলে অথবা নিজের মন চাইলে যখন তখন ভেজে খেতে পারব।’
‘পিঠা তৈরির মতো যন্ত্রণায় আমাকে ফেলবেন না প্লিজ।’
সাথী হেসে উত্তর দেয়, ‘পিঠা তৈরি তরকারি রান্নার চেয়ে অনেক অনেক সহজ। আপনি তো আমার রেসিপি কাঁঠালের বিচি দিয়ে লইট্টা শুঁটকি রান্না করে খেয়েছেন। দেখেছেন তো কত সহজ আর মজার।’
‘সেই বিশ্বাসেই তো আপনাকে ফোন দিয়েছি। আচ্ছা বলেন কী কী লাগবে।’
‘মাংস কিমা...’
‘এই তো ফেললেন ঝামেলায়, মাংসের কিমা বানানো কি সহজ কাজ?’
‘একদম সহজ। চর্বিছাড়া মাংস ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিলেই কিমা হয়ে যায়। তা ছাড়া সুপারশপে কিনতেও পাওয়া যায়। আড়াই শ গ্রাম মাংসের কিমার জন্য লাগবে মাঝারি সাইজের ২টি পিঁয়াজকুচি, ১ টেবিল চামচ আদা ও রসুন বাটা, টমেটো সস। আধা টেবিল চামচ হলুদ, মরিচ, জিরা, গোল মরিচের গুঁড়া, সয়া সস এবং লবণ দিয়ে মাংসের কিমাসহ সবকিছু একসঙ্গে মাখিয়ে নিতে হবে। পিঁয়াজকুচি ছাড়া।’
‘আম্মাকে দেখতাম মাংসের সঙ্গে কিছু ফ্রেশ আদা ও কাঁচা মরিচ ছোট ছোট করে কেটে দিতেন।’
সাথী বলেন, ‘দিতে পারেন। কামড়ে পড়লে খুব ভালো লাগে। এবার দুই টেবিল চামচ তেলে পিঁয়াজকুচিগুলো ঢেলে দিন। একটু ভাজার পর সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত মসলাযুক্ত কিমা ভাজতে হবে। কিমা ভাজা ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে রেখে দিন। তারপর আমরা যাব পরের ধাপে যাব। এক কাপ ময়দা নিন। বাসায় চালের গুঁড়া থাকলে ময়দার সঙ্গে চালের গুঁড়া যুক্ত করতে পারেন। চালের গুঁড়া ও ময়দার সঙ্গে অল্প অল্প কুসুম গরম পানি দিয়ে রুটির মতো কাই বা ডো বানাতে হবে। তারপর রুটি বেলে তার মধ্যে ভেজে রাখা কিমার পুর দিয়ে (ছবির মতো করে) ভাঁজ করে নিতে হবে।’
সাথী আরও জানাল, যে যেমন চায় তেমন আকৃতির পিঠা বানাতে পারে। পিঠার ছাঁচ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। আবার হাত অথবা কাঁটা চামচ দিয়ে নিজেই নকশা তৈরি করতে পারেন।
ঝুরা মাংসের পিঠা
এবার বলি কোরবানির ঝুরি মাংস দিয়ে কীভাবে পিঠা বানাতে হবে। মা একটু সুস্থ্য হয়ে উঠলে ফোন করলাম তাঁকে। আমার আম্মা হবিগঞ্জ থেকে ফোনে বলেন, হাত দিয়ে চিপে বা খুন্তি দিয়ে চিপে নিয়ে টিস্যুর ওপর রেখে মাংস থেকে ঝোলটা সরিয়ে ফেলতে হবে। তারপর পিঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে সেটা ভেজে নিতে হবে। ওপরের রেসিপিতে উল্লেখিত মসলাগুলো একটু একটু করে দেওয়া যেতে পারে। মাংস ভাজা হয়ে গেলে আটার কাই দিয়ে বেলা ছোট আকৃতির রুটির মধ্যে ঢুকিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে।
দুই ধরনের পিঠাই দেখলাম বানানো সহজ। খেতেও দারুণ। ট্রাই করে দেখতে পারেন। ঈদের মাংসগুলো দিয়েই স্বাদ বদলে ফেলুন। ভিন্ন স্বাদের পিঠা খান।