পাকিস্তান নাকি ভারত—বাটার চিকেনের উদ্ভব কোথায়, দিল্লির হাইকোর্টে মামলা

ভারতের জনপ্রিয় খাবারগুলোর ভেতরে প্রথম দিকেই থাকবে বাটার চিকেন আর ডাল মাখনি। মজা করে বাটার চিকেনকে অনেকে ডাকেন ন্যাশনাল ডিশ। যদিও ভারতের কোনো অফিশিয়াল জাতীয় খাবার নেই। সম্প্রতি এই দুই খাবারের আবিষ্কার কে করেছেন, তা নিয়ে বেশ হইরই আর বিতর্ক চলছে। এমনকি মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে দিল্লির হাইকোর্টে। দিল্লির দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে মোতিমহল রেস্তোরাঁ। দুই পক্ষেরই দাবি, বাটার চিকেন ও ডাল মাখনি তাদের পূর্বপুরুষের আবিষ্কার। সুতরাং, তারাই স্বত্বাধিকারী।

মোতিমহল রেস্তোরাঁর দাবি, ১৯৩০ সালে পাকিস্তানের পেশোয়ারে এই রেস্তোরাঁ খোলেন কুন্দনলাল গুজরাল। সেখানে তিনি তন্দুরের (রুটি বানানোর চুল্লি) ভেতর মুরগি দিয়ে প্রথম তন্দুরি চিকেন আবিষ্কার করেন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

মোতিমহল রেস্তোরাঁর দাবি, ১৯৩০ সালে পাকিস্তানের পেশোয়ারে এই রেস্তোরাঁ খোলেন কুন্দনলাল গুজরাল। সেখানে তিনি তন্দুরের (রুটি বানানোর চুল্লি) ভেতর মুরগি দিয়ে প্রথম তন্দুরি চিকেন আবিষ্কার করেন। পরে শুকনা তন্দুরিকে রসাল করতে গিয়ে বাটার চিকেনের এই অভিনব রেসিপি বানিয়েছিলেন তিনি। দেশভাগের পর দিল্লির দরিয়াগঞ্জে এসে ‘শরণার্থী’ কুন্দনলাল গুজরাল মোতিমহল রেস্তোরাঁ চালু করেন। মোতিমহলের ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও এই রেস্তোরাঁয় এসে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন।

অন্যদিকে দরিয়াগঞ্জের দাবি, ১৯৪৭ সালে কুন্দনলাল গুজরাল, কুন্দনলাল জাগ্গি ও ঠাকুর দাস—তিন বন্ধু মিলে পাকিস্তানের পেশোয়ার থেকে স্থানান্তরিত হয়ে দিল্লিতে এই দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁ খোলেন। একদিন রাতে বিক্রি শেষ করে রেস্তোরাঁ বন্ধ করার সময় কিছু শরণার্থী খেতে চাইলে কুন্দনলাল জাগ্গি টমেটো আর বাটারের গ্রেভির মধ্যে বেঁচে যাওয়া চিকেন তন্দুরি আর ক্রিম মিশিয়ে ওই যুগান্তকারী রেসিপি আবিষ্কার করেন।

১৯৯২ সাল পর্যন্ত গুজরাল-জাগ্গি একসঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। ১৯৯২ সালে জাগ্গি আলাদা হয়ে যান। পরে কুন্দনলাল জাগ্গির নাতি রাঘব জাগ্গি ২০১৯ সালে দাদার ঐতিহ্য রক্ষায় নতুন করে দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁ চালু করেন।

ভারতের জনপ্রিয় খাবারগুলোর ভেতরে প্রথম দিকেই থাকবে বাটার চিকেন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

এই দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধেই মামলা করেছে মোতিমহল। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে ২ হাজার ৫৭২ পাতার অভিযোগপত্র! গুজরাল পরিবারের অভিযোগ, কেবল রেসিপির কৃতিত্বই নয়, মোতিমহলের ওয়েবসাইটের লেআউটও কপি করেছে দরিয়াগঞ্জ। আর তাদের রেস্তোরাঁকেও একই রকম বানানোর চেষ্টা করেছে। এ জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণও দাবি করেছে মোতিমহল কর্তৃপক্ষ।

মোতিমহলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মণীশ গুজরাল জানান, ‘কারও ঐতিহ্য নিজের বলে দাবি করা যায় না। পাকিস্তানে থাকার সময়েই আমার দাদা এই খাবার আবিষ্কার করেছিলেন।’ মামলার পাশাপাশি রায় না হওয়া পর্যন্ত দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁকে বাটার চিকেন আবিষ্কারের কৃতিত্ব নেওয়া থেকে বিরত রাখতে আদালতে আবেদন জানিয়েছে মোতিমহল কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে আদালতে নিজেদের বক্তব্যের সপক্ষে ১৯৪৯ সালের একটি হাতে লেখা চুক্তিপত্র জমা দিয়েছে দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁ। সেখানে বাটার চিকেনের রেসিপির আবিষ্কারক হিসেবে পারস্পরিক অংশীদারত্বের কথা লেখা আছে। ডাল মাখনির ক্ষেত্রেও তাদের দাবি, শত বছরের পুরোনো রেসিপি ‘মা কা ডাল’ (মায়ের ডাল)-এ ভিন্নতা আনতে গিয়ে ভুলবশত ডাল মাখনির উদ্ভাবন হয়েছে। ভারতীর টেলিভিশন চ্যানেল সনি লিভ-এ প্রচারিত বাণিজ্যিক বিনিয়োগের রিয়েলিটি শো ‘শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া’র দ্বিতীয় সিজনে দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁ তাদের দাবি করা ইতিহাস উপস্থাপন করে।

ডাল মাখানির জনপ্রিয়তা বাড়ছে ভেজিটেরিয়ানদের ভেতর
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

দিল্লির হাইকোর্টে ১৬ জানুয়ারি মামলার প্রথম শুনানি হয়েছে। বিচারপতি সঞ্জীব নারুলার বেঞ্চে মামলাটি উঠেছে। এক মাসের মধ্যে দরিয়াগঞ্জ রেস্তোরাঁকে লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৯ মে।

দুই রেস্তোরাঁর এই ঠোকাঠুকি ভারতে সবার নজর কেড়েছে। ভারতের টিভি সম্প্রচারে দেখানো হচ্ছে বাটার চিকেন ও ডাল মাখানির ইতিহাস। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ দুই খাবারের ইতিহাস নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে।

বাটার চিকেন আর ডাল মাখনি নিয়ে মামলা চলমান
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে