ঈদে নির্ভেজাল চুই সেমাই

এখনো গ্রামবাংলার নারীরা লাচ্ছা সেমাই, চিকন সেমাই, ঝুরা সেমাই, চুই সেমাই ইত্যাদি একেবারে খালি হাতে তৈরি করে।

হাতে বানানো সেমাইয়ের স্বাদই আলাদামডেল: তাবাস্সুম, কৃতজাঞতি: মাদল, ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বাঙালি ঘরে সেমাই ছাড়া ঈদ যেন জমে ওঠে না। ঈদ এলেই হাটবাজারের দোকানগুলোয় স্তরে স্তরে সাজানো হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেমাইয়ের নতুন প্যাকেট। বাজারের বেশির ভাগ সেমাই-ই মেশিনে তৈরি। তবে জানেন কি, এখনো গ্রামবাংলার নারীরা লাচ্ছা সেমাই, চিকন সেমাই, ঝুরা সেমাই, চুই সেমাই ইত্যাদি একেবারে খালি হাতে তৈরি করে। ঈদের দিন সকালে স্বাদে যেকোনো মিষ্টান্নকে ছাড়িয়ে যেতে পারে দেশীয় পিঠার মতো ঘরোয়াভাবে তৈরি এসব সেমাই। প্রতি ঈদেই তো সেমাই খাওয়া হয়; এবার ঈদে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে খেয়ে দেখতে পারেন গ্রামবাংলার একেবারে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি ভেজালমুক্ত এসব সেমাই।

কোথায় পাবেন

যাঁরা রাজধানীর মোহাম্মদপুর কিংবা মিরপুরের দিকে থাকেন, তাঁরা চলে যেতে পারেন মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে প্রবর্তনায়। ধানমন্ডি, তেজগাঁও, আগারগাঁও, ফার্মগেটের আশপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা যেতে পারেন পশ্চিম পান্থপথের শেখ রাসেল স্কয়ারের ৮৪ নম্বর বাড়ির নিচতলায় মাদলের শস্যভান্ডারে অথবা রাপা প্লাজার পঞ্চম তলায় জয়িতা ফাউন্ডেশনের ফুড কোর্টে। সেখানে বেশ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার দোকানে মিলবে ভেজালমুক্ত সেমাই।

চুটকি সেমাই
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

একটু অন্য রকম চুই সেমাই

একেক অঞ্চলে চুই সেমাইয়ের একেক নাম। কেউ বলে চুটকি সেমাই, কেউ হাতের সেমাই। পিঠার মতো করেই তৈরি হয় এই সেমাই। প্রথমে খুব ভালো করে ধুয়ে নেওয়া হয় চাল। এরপর আধঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তুলে নিয়ে রোদে দেওয়া হয়। খানিকটা শুকিয়ে এলে চাল গুঁড়া করে নেওয়া হয়। এরপর চুলায় দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। এতে আটা বা ময়দা মিশিয়ে কাই তৈরি করা হয়। এরপর হাতের আঙুল দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছোট ছোট করে সেমাই কেটে নেওয়া হয়। সংরক্ষণ করার জন্য রোদে শুকিয়ে ঝরঝরে করে নেওয়া হয়। ধুলাবালু, ময়লা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব ঠেকাতে ওপরে দেওয়া হয় মশারি।

হাতে তৈরি সেমাই নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে জয়িতা ফাউন্ডেশনে এসেছেন ‘এসো কিছু করি’ মহিলা সমিতির নারী উদ্যোক্তা শিমা আক্তার। চুই সেমাই তৈরির পুরো প্রক্রিয়ার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘সেমাই বানানোর সময় সবার আগে আমরা পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করি, তারপর প্যাকেট করা হয়।’ প্রবর্তনায় পাওয়া যাবে দুই ধরনের চুই সেমাই। একটি ময়দার, অন্যটি চালের গুঁড়ার। আকারেও আছে তিন রকমের ভিন্নতা—ছোট, মাঝারি ও বড়, জানালেন প্রবর্তনার মার্কেটিং ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ। সেমাই তৈরির ঘি থেকে শুরু করে ভাজা, প্যাকেট করা—সবই নিয়ম মেনে করা হয় মাদলে। লাচ্ছা সেমাই, চিকন সেমাই ও চুটকি সেমাই—এই তিন ধরনের সেমাই পাওয়া যাবে মাদলের শস্যভান্ডারে। আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসারত অনেকেই ঈদে বাড়ি যেতে পারেন না। তাঁদের উদ্দেশ্যে ভেজালমুক্ত সেমাই তৈরি করে মাদল, জানালেন মাদলের প্রতিষ্ঠাতা মাসুমা খাতুন। বলছিলেন, ‘সেমাই তৈরির সব উপকরণ আমরা নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করি। চুটকি বা চুই সেমাই আগে হাতে তৈরি করলে এখন আমরা পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে কাটার কাজটি মেশিনে করে থাকি।’

যেভাবে রান্না করতে হবে

সেমাই রান্নার প্রক্রিয়া সব জায়গায় তুলনামূলক একই রকম। ঈদের সেমাই রান্নার একটি সহজ প্রণালি দিয়েছেন মাসুমা খাতুন।

উপকরণ: যেকোনো ধরনের সেমাই ১ প্যাকেট, পরিমাণমতো দুধ ২ লিটার, চিনি সাড়ে তিন কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ অংশ, বাদাম-পেস্তা, কাঠবাদামকুচি (স্বাদ অনুযায়ী), কিশমিশ (স্বাদ অনুযায়ী), এলাচি ৩-৪টি, লবঙ্গ ৩-৪টি।

প্রণালি: একটি হাঁড়িতে ঘি গরম করে নিন। বাদামকুচিগুলোকে ভেজে নিতে হবে। বাদামের রং লালচে হয়ে এলে তাতে সেমাই দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। এরপর অন্য একটি হাঁড়িতে দুধ নিয়ে ভালো করে জ্বাল দিন। এলাচি ও লবঙ্গ দিয়ে দিতে হবে। দুধ মোটামুটি ঘন হয়ে এলে পরিমাণমতো চিনি দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। এরপর তাতে বাদাম, কিশমিশসহ ভেজে রাখা সেমাই দিয়ে দিতে হবে। তাহলেই হয়ে যাবে ঈদের ঐতিহ্যবাহী দুধ সেমাই।